ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনাদরে অযত্নে বধ্যভূমি, সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ১৪টি গণকবর ও বধ্যভূমি অবহেলিতই রয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতাসীন হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও এগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে।

এখনই এগুলো

সংরক্ষণপূর্বক সেখানে প্রতিটি শহীদের জীবনগাথা তুলে ধরা না হলে ভবিষ্যত প্রজম্ম এসব ত্যাগের ইতিহাস জানতেও পারবে না বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশের মানুষের মতো সীতাকুণ্ডে বহু যুবক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁরা মিত্রবাহিনীর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধে অনেকে নিহত হন। এছাড়া হানাদারবাহিনী সুযোগ বুঝে স্থানীয় বহু নিরস্ত্র যুবককে গুলি করে হত্যা করেছিল।

একই সঙ্গে ৮-১০ জন কিংবা আরও বেশি লোককে একসাথে গুলি করে হত্যার ঘটনাও রয়েছে এখানে। এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সৈনিক। সেই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাদের তাত্ক্ষণিকভাবে সৎকার ও কবর দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর এসব স্থান শনাক্ত শুরু হলে গণকবর ও বধ্যভূমির ১৪টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়।

চিহ্নিত হওয়া বধ্যভূমিগুলো হল, সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন, চন্দ্রনাথ সীতার মন্দির সংলগ্ন, গুল আহমেদ জুট মিল এলাকা ও কুমিরা টিবি হাসপাতাল। এছাড়া আরো কিছু জায়গার কথা বলা হলেও সেগুলো শনাক্ত করা যায়নি।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধে শত্রুবাহিনীর সাথে সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হওয়া সৈনিকদের যেসব গণকবর শনাক্ত করা গেছে তা হলো উপজেলা গেটের পশ্চিম এলাকা, পাক্কা মসজিদ, বার আউলিয়া মাজারের উত্তরে, ফুলতলা  এলাকার কালা গাজী পুকুর, চট্টলা সিএনজি এলাকা, ক্যাডেট কলেজ দিঘির উত্তরে, ফৌজদারহাটের ওভার ব্রিজ পূর্বদিকে, লতিফপুর পাক্কা রাস্তা ও ভারতীয় শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত আস্তানা বাড়ি গেট।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আলিম উল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমরা শহীদের গণকবর ও বধ্যভূমি মিলিয়ে ১৪টি জায়গার কথা জেনেছি। তবে কয়েকটি স্পট শনাক্ত করা যায়নি। আর যেসব বধ্যভূমি ও গণকবর শনাক্ত করা গেছে সেগুলোও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। এর মধ্যে সোনাইছড়ির লালবেগ চট্টলা সিএনজি কর্তৃপক্ষ ফিলিং স্টেশন করার সময় একটি বধ্যভূমিতে ছোট একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে। কুমিরায় প্রতিরোধ যুদ্ধে নিহতদের জায়গাটিও বহুদিন স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলে ছিল।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেটি উদ্ধার করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ’ এদিকে অতি সম্প্রতি ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শতাধিক সৈনিককে সৎকার করার স্থান সীতাকুণ্ড পৌরসদর মোহন্ত আস্তানা বাড়ির গেটে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম। সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দীর্ঘ ৪৬ বছর পর সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা আলিম উল্লাহ আরো বলেন, ‘এভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি হারিয়ে গেছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় কিছু কুচক্রী এগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে কাজ করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আবারও সেগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। ’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, যেসব গণকবর ও বধ্যভূমি এখনো সংরক্ষিত হয়নি সেগুলো পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণ করবে সরকার।

চন্দ্রনাথ ধামের মোহন্ত আস্তানা বাড়ির সামনে মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের সৎকারের স্থানটি সংস্কার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অবদান এ জাতি কখনো অস্বীকার করতে পারবে না। তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা না পেলে আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না। আর যেসব ভারতীয় সৈনিক জীবন দিয়েছেন তাঁদের অবদানের কথা সবার জানা প্রয়োজন। তাই আমি মোহন্ত আস্তানার সামনে তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটিতে শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু করেছি। ’

এর মধ্যে দিয়ে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও আগামী প্রজম্মকে জানানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।

পাঠকের মতামত: