ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ঐতিহ্য মানিকপুরের মহিষের দই বিলুপ্ত প্রায়, এখনো টিকিয়ে আছে ইলিশিয়ার দই

এম.আর, মাহমুদ ::

চকরিয়ার ঐতিহ্য মানিকপুরের মহিষের দই বিলুপ্ত প্রায়। এক সময়ের পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে মানিকপুরের মহিষের দইয়ের খ্যাতি ছিল ব্যাপক। বিয়ে, মেজবানসহ ভুরি ভোজে মানিকপুরের মহিষের দইয়ের কোন বিকল্পই ছিলনা। নানা প্রতিকুলতার কারণে এক সময়ে কৃষক পরিবারগুলো গবাদি পশু লালন পালন ছেড়ে দিয়েছে। অথচ আজ থেকে তিন যোগ আগেও মানিকপুরসহ আশ-পাশ এলাকায় প্রতিটি পরিবারে ছিল গোয়াল ভরা গবাদি পশু ও গোলা ভরা ধান। এখন সেসব পরিবারের গোয়াল অনেকটা শুন্য। বিশেষ করে নির্বিচারে বনভূমি নিধনজনিত কারণে গবাদি পশু লালন পালন করা গঠিন হয়ে পড়েছে। এতে মহিষ পালন অনেকটা নেই বললেই চলে। যে কারণে মানিকপুর বাজারে রুদ্র পল্লীর তৈরী মাটির পাতিলের মহিষের দই মিলছেনা। তবে এখনো মানিকপুরের একটি পরিবার মহিষ পালনের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ওই পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ মানিক দাবী করেছেন তাদের পরিবার আগের ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে ১৫/২০টি মহিষ লালন পালন করে যাচ্ছে। তবে চারণ ভূমির অভাবে এসব মহিষ রক্ষণাবেক্ষণ করা বড়ই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এখানকার বেশিরভাগ সঙ্গতি সম্পন্ন কৃষক পরিবার মহিষ পালন ছেড়ে দিয়েছে শুধুমাত্র চারণ ভুমির অভবের কারণে। সুত্রমতে বান্দরবানের লামা উপজেলার ইয়াংছা মৌজার পাইলা পাড়ার মংসু মহাজন সব চাইতে বেশি মহিষ লালন পালন করতেন। তার মহিষের দই এর খ্যাতি ছিল প্রচুর। স্থানীয় লোকজন মহিষের দইয়ের চাহিদা মিঠাতে আগাম দিয়ে রাখতেন ওই মহাজনকে। অথচ এখন সে পরিবারে কোন মহিষ নেই।

এলাকাবাসীর মতে বান্দরবানের লামা উপজেলার ইয়াংছা মৌজা ও চকরিয়ার মানিকপুর-সুরাজপুর সংলগ্ন বিশাল পাহাড়ী এলাকা ছিল মহিষ লালন পালনের অভয়ারন্য। বর্তমানে এসব এলাকার পাহাড়ে কোন ধরণের গাছপালা, বাশ ও লতা-পাতা এবং ছন বাগানের অস্তিত্বই নেই। ফলে দিন দিন মহিষসহ গরু পালন কমেই গেছে। প্রবীণদের মতে বর্তমানে বিবাহ, মেজবান, আকিকাসহ হরেক অনুষ্ঠানে মিষ্টান্নসহ কোমল পানীয়ের দখলেও গেলেও সে সময় ছিল মহিষের দইয়ের ব্যাপক চাহিদা। এসব অনুষ্ঠানে মহিষের দই ছাড়া কল্পনাও করা যেতনা। এমনকি সরকারী দপ্তরে বড় বড় কর্মকর্তাদের দপ্তরেও এসব দইয়ের চাহিদা ছিল ব্যাপক। তবে মানিকপুরের মহিষের দইয়ের শূণ্যতা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে ইলিশিয়ার মহিষের দই সে শূণ্যতা পূরণে অনেকটা সহায়ক ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। এক সময়ের চকরিয়ার সুন্দরবন জুড়ে প্যারাবনে বেসুমার মহিষ লালন পালন করা হলেও মহিষের মালিকেরা এসব মহিষের দুধ সংগ্রহ করতনা। বর্তমানে মহিষের দইয়ের ব্যাপক চাহিদার কারণে স্বল্প সংখ্যক মহিষ থাকলেও মালিকেরা নিয়মিত দুধ সংগ্রহ করে রুদ্র পল্লীতে তৈরী মাটির পাতিলে এসব দই বিপনন করে যাচ্ছে। প্রবীনদের মতে উপকূলীয় এলাকা জুড়ে যে প্যারাবন ছিল তাও উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চকরিয়া সুন্দরবনের সিংহভাগ প্যারাবনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যেখানে চিংড়ী ঘের আর লবণ মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনা। তারপরও উপকুলীয় এলাকার লোকজন চোখে পড়ারমত মহিষ পালন করে যাচ্ছে এখনো। উপকুলীয় এলাকায় পাওয়া মহিষের দই ইলিশিয়া ও চৌয়ারফাঁড়ি এলাকায় বিপনন করা হয়। কিন্তু মানিকপুরের মহিষের দইয়ের সাথে উপকুলীয় এলাকায় মহিষের দইয়ে একটু পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা জানিয়েছেন এক সময় কৃষকরা কোন ধরণের সংকট ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় মহিষ লালন পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে চিংড়ী ঘের ও লবণ মাঠের কারণে মহিষের চারণ ভুমি সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্যারাবনে ছেড়ে দেয়া মহিষ চুরির কারণে অধিকাংশ পরিবার মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে। অপরদিকে একটি অসাধু চক্র মহিষের দইয়ের সাথে গরুর দুধ ও বিভিন্ন ব্রান্ডের পাউডার দুধ মিশ্রণ ঘটিয়ে মহিষের দই হিসেব্ েবিক্রি করতে গিয়ে ভোজন রসিকেরা নিয়মিত প্রতারিত হচ্ছে। তিনি দাবী করেন পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া এলাকায় জাহেদার বাপের পরিবার ও লালুর বাপের পরিবারের মহিষের দই এখনো আগের ঐতিহ্য নিয়ে টিকে আছে। তিনি বলেন উপকুলীয় এলাকার বিভিন্ন শাখা খালের পাশে গজিয়ে উঠা প্যারাবন রক্ষা ও চুরি রোধ করা না গেলে মহিষ পালন বেশিদিন টিকে থাকবেনা।##

পাঠকের মতামত: