ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়া পরিচয়ে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ডাক্তার উখিয়ায়

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া ::

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বাজারে ব্যাঙের ছাতার মত ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) ও প্যাথলজির ব্যবসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। কুতুপালং রোহিঙ্গা বাজারকেন্দ্রিক ফার্মেসি খুলে স্থানীয় পরিচয়ে ডাক্তারি চিকিৎসা করছেন এখন অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক। কুতুপালং বাজারের অলিতে গলিতে অবৈধভাবে ফার্মেসি খুলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি সেজে ভুয়া পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এতে প্রতারিত হয়ে স্বাস্থ্যহানিতে পড়ছে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় কুতুপালংসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন।
এসবের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এখন রোহিঙ্গারা স্থানীয় দাবি করে বিভিন্ন চলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ও জাল সনদ তৈরি করে নিজেদের নামের আগে চিকিৎসাপত্রের প্যাডে ও ডিজিটাল সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ডাক্তার লিখে অবাধে ঔষুধ বিক্রি করে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ রোহিঙ্গা ডাক্তারেরা দীর্ঘ ৭–৮ বছর ধরে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামে বেনামে ট্রেড লাইসেন্স ও নাগরিক সনদ নিয়ে এবং অন্যজনের নামে থাকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের ডিপ্লোমা সনদ এলএমএএফ, ডিএমএডি, এমএফ, আরএমপি সনদ এবং ভুয়া সনদ বানিয়ে ডাক্তারি নামের এ মহান মানবসেবামূলক পেশাকে কলংকিত করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে।
এসব ভুয়া চিকিৎসক অনুমান করে ও মনগড়া ওষুধ লিখে রোগীদের হাতে চিকিৎসাপত্র তুলে দিয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন নি¤œমানের ওষুধ ধরিয়ে দিচ্ছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী–পুরুষ ও শিশুসহ এলাকার মানুষের হাতে। ওষুধের দোকানগুলো সরজমিন তদন্ত করে ‘বার্মাইয়া’ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক যেসব অশিক্ষিত ভুয়া রোহিঙ্গা ডাক্তার ও আনাড়ি চিকিৎসক যত্রতত্র দোকান খুলে ভুল চিকিৎসা করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্রুত বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এদিকে কুতুপালং বাজারে যেসব ভুয়া রোহিঙ্গা ডাক্তারের হদিস পাওয়া গেছে সেগুলো হল কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসের দক্ষিণে পুলিশ ব্যারাকের পেছনে ডাক্তার খোরশেদ আলমের ফার্মেসি, প্রধান সড়কের ব্রিজের কোণায় ডাক্তার সেলিমের ফার্মেসি, ক্যাম্প ইনচার্জ অফিস সংলগ্ন সড়কে ডাক্তার জিয়াবুল হক প্রকাশ ইয়াবা জিয়াবুলের পীর আউলিয়া ফার্মেসি, ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসে যাওয়ার সড়কে ডাক্তার ডিপো জাফরের বোরহান ফার্মেসি। এই বার্মাইয়া ডিপো জাফর সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে মূর্তি পাচারের সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে ডাক্তার নুরুল আমিনের আকবর ফার্মেসি, প্রধান সড়কের রাস্তার পূর্ব পাশে এডভোকেট ছমি উদ্দিনের মালিকানাধীন দোকানে ডাক্তার জয়নালের বিউটি ফার্মেসি, সে ইতিমধ্যে বাংলাদেশি সেজে আইডি কার্ড বানিয়েছে, কুতুপালং ক্যাম্পের পুলিশ ব্যারাকের পেছনে ডাক্তার ইয়াছিনের মনজুর ফার্মেসি। এধরনের অসংখ্য ফার্মেসি খুলে বার্মাইয়ারা ঔষুধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বেআইনিভাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান রবিন চৌধুরী বলেন, কুতুপালং বাজারসহ ক্যাম্পের ভিতরে–বাইরে ওষুধের দোকান খুলে যারা নিজেদের ডাক্তার দাবি করে ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে ওষুধ বিক্রি করছে তাদের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গার মধ্যে এইডস রোগ পাওয়া গেছে। সুতরাং রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছি। আর ফার্মেসি খুলে অনেকেই একটা ইনজেকশনের সিরিজ ২–৩ বার ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ আমার কাছে রয়েছে। আগামী মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব ভুয়া ডাক্তার ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, কুতুপালং বাজারে যারা অবৈধ ভাবে যেসব ফার্মেসী ও প্যাথলজি সেন্টার খুলে রোহিঙ্গারা স্থানীয় ডাক্তার পরিচয়ে চিকিৎসার নামে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য হানি ঘটাচ্ছে সে ব্যাপারে অতি দ্রুত ড্রাগ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে প্রশাসনিক অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

পাঠকের মতামত: