ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

আওয়ামী লীগের নামে শতাধিক ভুঁইফোঁড় সংগঠনের ছড়াছড়ি

03-300x193নিউজ ডেস্ক ::

আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা শব্দ ব্যবহার করে গজিয়ে উঠা ভুঁইফোড় সংগঠনের  সংখ্যা আশংকাজনকহারে  দিন দিন  বেড়েই চলেছে। কার্যত এই সংগঠনগুলোর বেশির ভাগের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে তাদের হাঁক-ডাক আছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাদের কোনো দলীয় বা সাংগঠনিক স্বীকৃতি না দিলেও দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেই এসব সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও তাদের বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় ও সরকারি বৈধ কোনো অনুমোদন না থাকলেও এ সংগঠনের নেতাদের দৌরাত্ম্য এতই বেড়ে চলেছে যে, খোদ দলীয় অনেক নেতাকে পর্যন্ত তারা তোয়াক্কা করেন না। বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এসব নামসর্বস্ব সংগঠন বাড়ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী, সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা পাচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ এবং যুব মহিলা লীগ। আর নিজেদের গঠনতন্ত্র অনুসরণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ। অর্থাৎ এই নয়টি সংগঠনের বাইরে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে কোনো সংগঠন নেই। অথচ শতাধিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের একটারও হদিস পাওয়া যায়নি। এসব ভুঁইফোড় সংগঠন মূলত লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফেস্টুন-সর্বস্ব। তবে তাদের কর্মকান্ড  শুধু আলোচনা সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও স্ব-সৃষ্ট দিবসে তারা অখ্যাত ও অযোগ্য ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে সম্মানজনক পদকও দিচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, এক একটি সংগঠন মাসে অন্তত পাঁচ থেকে দশটি সভা সেমিনার ও অনুষ্ঠানের অজুহাতে ব্যক্তি-দলীয় নেতা-প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো অপকর্মের মাধ্যমে দুর্নাম ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের।

খোঁজ নিয়ে এ রকম প্রায় শতাধিক সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি তো দূরের কথা, এসব সংগঠনের স্থায়ী-অস্থায়ী কোনো কার্যালয়ও নেই। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নামে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলো হল- বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, চেতনায় মুজিব, আমরা মুজিব সেনা, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।

আওয়ামী লীগের নামে করা সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী মোটর চালক লীগ, আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী তরুণ লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, বাস্তুহারা লীগ, আমরা নৌকা প্রজন্ম, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, ওলামা লীগের নামে অন্তত চারটি সংগঠন।

মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরেও গড়ে উঠেছে অনেক ভুঁইফোড় সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধ ও গণমুক্তি আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের কল্যাণ পরিষদ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি প্রতিরোধ কমিটি, প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামেও রয়েছে কয়েকটি সংগঠন। রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, জননেত্রী পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশন। বিভিন্ন দিবস ও অন্যান্য নামেও রয়েছে সংগঠন। এর মধ্যে-’৭৫-এর ঘাতক নির্মূল কমিটি, ২১ আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবর্তন ফাউন্ডেশন, সোনার বাংলা গঠন পরিষদ, সম্মিলিত যুব-পেশাজীবী পরিষদ, অরোরা ফাউন্ডেশন।

আওয়ামী লীগের অনুমোদন নেই এমন সংগঠনের তালিকায় রয়েছে আওয়ামী নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী। এই সংগঠনের সভাপতি আবদুল হক সবুজ। বঙ্গবন্ধু একাডেমির নামে প্রতিনিয়ত অনুষ্ঠান করছেন হুমায়ুন কবির মিজি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভুঁইফোড় সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় চাঁদা তোলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অপ্রত্যাশিত চিত্র আরো বেশ কয়েকটি মার্কেট থেকে পাওয়া গেছে। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর কর্মকা-ে দুর্নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, এসব সংগঠনের একটিরও অনুমোদন নেই। এসব সংগঠনগুলোর যে কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মকা-ে দলীয় নেতাদের যাওয়া বা অংশগ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের ‘মৌসুমী চাঁদাবাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের কিছু লোকসহ কতিপয় ব্যক্তি মোসাহেবি ও চামচামি করে নাম ভাঙিয়ে সংগঠন গড়ে তোলেন। তাদের ব্যাপারে সবার সাবধান থাকতে হবে। ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত: