ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামায় মসজিদ নিয়ে পুলিশ-মুসল্লি মুখোমুখি

লামা প্রতিনিধি :
বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জের বিরুদ্ধে মসজিদের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার সরই ইউনিয়নের ‘ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের’ সাইন বোর্ড নামিয়ে ‘ক্যায়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদ নামের সাইন বোর্ড লাগিয়ে মসজিদরে নাম পরিবর্তন করে জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। মসজিদের নাম পরিবর্তন করে নিজের ইচ্ছে মত মসজিদের অর্থ ব্যবহার ও দোকানভাড়া হাতিয়ে নেয়ার হীন চেষ্টায় মসজিদের নাম পরিবর্তন করায় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন, ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স পরিচালনা ও উন্নয়ন কমিটির পক্ষে সহ-সভাপতি এবং ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি (মামলা নং ৯৮/১৭)। পুলিশ জনগনের বন্ধু না হয়ে মসজিদের জায়গা দখল করায় ক্ষুদ্ধ এলাকার মুসুল্লীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন মুহুর্তে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

সুত্রে জানা যায়, ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে উপজেলার সরই ইউনিয়নের কেয়াজুপাড়া বাজার এলাকায় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয়রা। মসজিদটির নাম করণ করা হয় ‘ডলুছড়ি জামে মসজিদ’। পরবর্তীতে মসজিদ কমিটির অনুকুলে ৫ একর জমি বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে পরিচালনা কমিটির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক। আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজায়-উত্তরে ক্যাম্পের সিমানা, দক্ষিনে-পোলুখাল, পূর্বে- বন্দবস্তি জমি, পঞ্চিমে- সরকারি রাস্তা এই চৌহর্দ্দি মুলে পাঁচ একর জমি মসজিদের নামে বন্দোবস্তি ও তৌজিভুক্ত হয়। পরে স্থানীয় জনসাধারণ, সরকারি বেসরকারি অনুদানে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সহায়তায় ২০০৮ সালে মসজিদের জায়গায় একটি মার্কেট তৈরি করে মসজিদের অনুকুলে ২৫টি দোকান প্লট মাসিক ভাড়াতে সালামী বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়ে মসজিদটির পাকা ভবন নির্মান করেন।

এলাকায় শিক্ষিত মানুষের অভাবে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জকে সম্মান দেখিয়ে ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মনোনিত করে দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন এলাকাবাসী। ইনচার্জের পদটি বদলীযোগ্য হওয়ায় ২০০২ সালের ২১ মে’র আবেদনের প্রেক্ষিতে ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমল্পেক্স উন্নয়ন নামে কমিটির স্থানীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লি: লোহাগাড়া শাখায় হিসাব নম্বর ২০৫০১৫৬০২০১২২৩৭১ খোলা হয়। এ হিসাব নম্বরে দোকান ভাড়া জমা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট স্থানীয় জন সাধারণ, মুসল্লি, ইমাম, পরিচালনা কমিটিকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে তপসিলভুক্ত জায়গায় বর্তমান মসজিদটিতে ’ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ’ নামের সাইন বোর্ডটি নামিয়ে ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নামকরণ করে মসজিদের জমি দখলের অশুভ পায়তারা করছেন- কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ।

অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, ক্যাম্প ইনচার্জ মসজিদের দোকান ভাড়ার টাকা ও অন্যান্য আয় ব্যাংকে জমা না করে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ ও মসজিদের জায়গা জবর দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের নাম পরিবর্তন করেন। মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ’ বাদ দিয়ে সেখানে ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নাম করণের হীন প্রয়াসকে বে-আইনি ও পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় যেকোন সময় পুলিশের সাথে মুসল্লী ও স্থানীয়দের দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকায় সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী ও দোকান মালিকরা জানান, বিভিন্ন সময়ে আইসিগন ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২৫টি প্লটের দোকান মালিকরা ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের সাখে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করে আসছে। চুক্তিপত্রে পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচাজের্র স্বাক্ষর করেছেন।

এ বিষয়ে কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান ইনচার্জ মো. কাশেম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমি ভাল জানিনা। তবে বিভিন্ন লোকজনের কাছে শুনেছি-পূর্ব থেকেই মসজিদের নাম কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাড়ী জামে মসজিদ ছিল। মাঝপথে এর নাম ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ করা হয়। মসজিদের বর্তমান জায়গাটি পুলিশের বলেও দাবি করেন তিনি। পূর্ব থেকে মসজিদটি ক্যয়াজুপাড়া পুলিশ সদস্যরাই পরিচালনা করে আসছে। মসজিদের তফসীলভুক্ত ৫ একর জায়গা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি অন্য জায়গায়।

এদিকে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মসজিদটি কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছিল। মসজিদের ঈমাম ও মোয়াজ্জিনের বেতন ভাতাও ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশের বেতন থেকে দেয়া হয়। মাঝখানে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিয়মিত নামাজ আদায়ের সূত্রে মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। তারা মসজিদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সড়কের পাশে কিছু দোকানঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে এসব দোকানের ভাড়া আদায় ও জমা করার ক্ষেত্রে নয়-ছয় করা শুরু করে তারা। এ কারনে আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ চাওয়া হলে তারাই ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নাম পরিবর্তন করে ‘ ডলূছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ’র সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। মসজিদের নামে জমি বন্দোরস্থির যেসব কাগজপত্র দেখানো হচ্ছে তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: