ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঈদগাঁওর সর্বত্র পাকা ধানের সোনালি হাসি

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি, পর পর দুদফে বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে হতাশাগ্রস্থ কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওর কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসি ফিরিয়েছে আমন ধান। বন্যা পরবর্তী কৃষকরা আমন চাষে মনোযোগী হওয়ায় ও প্রকৃতির আনুকূল্য পাওয়ায় এবার আমনের ফলণ ভালো হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সোনালি আমন ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে আমন ধান কাটা চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, ধানের চিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ এবার আমন ফসলের মাঠে হানা না দেওয়ায় বছরান্তে চাল কিনে খাওয়ার হতাশা অনেকটা কাটতে শুরু করেছে।

সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওর সর্বত্র এখন আমন ফসলের মাঠে এখন পাকা ধানের সোনালি হাসি। অগ্রহায়ণের উজ্জ্বল রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করছে। এতদঞ্চলের আকাশে-বাতাসে এখন নতুন ধানের গন্ধ, গ্রামে-গ্রামে নবান্নের সাজ সাজ রব। মাঠে মাঠে কৃষকেরা কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। শীতের সকাল থেকে শুরু করে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কর্তনের চিরাচরিত দৃশ্য এখন সর্বত্র।

ধান মাড়াই, বাছাই আর শুকানোর কাজে এখন মহাব্যস্ত এখানকার সব কৃষক পরিবার। অতীতের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সোনা রাঙা আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে এবার। কেননা এ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে একাধিকবার ফসল বিনষ্ট হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। এরপর সাম্প্রতিক আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ তাঁদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তাদের উৎপাদন খরচই মিলছেনা এমনতর অভিযোগ পাওয়া গেছে ঈদগাঁওর বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও কৃষকের সাথে কথা বলে।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষাবাদ কমেছে। তবে এবার ধানের উৎপাদন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। ধানে পোকার আক্রমণ না হওয়া, জমিতে সুষম সার ব্যবহারে কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনে কিছুটা সুফল মিলেছে। একই কথা কৃষকদেরও।

গতকাল ইসলামাবাদের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ভালো ফলন আর কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। যেদিকে চোখ যায়, আমন ধানের পাকধরা বিস্তৃত সোনালি রঙের ঢেউ। অনেকে উৎসবের আনন্দে ধান কাটতে শুরু করেছেন। যখনই উৎপাদন খরচের প্রসঙ্গটি আসছে তখনই তাদের মন ভারী হয়ে উঠে।

সদরের জালালাবাদ,ইসলামপুর,পোকখালী এলাকায় কিছু পতিত জমি দেখিয়ে বেশ কয়েকজন কৃষক জানালেন, ধান উৎপাদন করে প্রকৃত খরচটাই তোলা যায় না বলে অনেকে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ভবিষ্যতে এ রকম পতিত জমির পরিমাণ বাড়বে।

মাঠে ধান কাটতে আসা কৃষক ইসলামপুর নতুন অফিস এলাকার মো: ইসলাম বলেন, এখন যে অবস্থা চাষ করে জমি বিক্রি করে সংসার চালাতে হবে। তিনি আরো জানান, তার এক কানি জমিতে প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই ১ কানির জমি থেকে খরচের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এবার ফলন মোটামুটি ভালা হইছে

কৃষি অফিস সূত্র আরও জানায়, ঈদগাঁওয়ে আবাদকৃত জমিতে নতুন জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এবার ব্রি ধান এর বাম্পার ফলনে কৃষকরা আগামীতে এই জাতের ধান চাষ করতে আরও আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী কৃষি অফিস।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবার উপজেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও কিন্তু আবাদ হয়েছে কম। চাষাবাদ হ্রাসের কারণ হিসেবে তিনি বিগত সময়ের একাধিকবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করছেন।

পাঠকের মতামত: