ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বান্দরবানের ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব

বান্দরবান প্রতিনিধি :
বান্দরবানের সর্বত্রই পহাড়ের ঝিরি-ঝর্ণার পাথর উত্তোলন থেমে নেই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান সত্বেও। স্থানীয়রা শংকা করেছেন- অবাধে অবৈধভাবে পাথর উত্তোল অব্যাহত থাকায় জেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শীতের মুসৌসুমে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলার রুমা উপজেলার ক্যোওয়াইবওয়া পাড়া এলাকা থেকে শুরু করে পুনর্বাসন পাড়া, ভাগ্যমনি পাড়া,বগামুখ পাড়া পর্যন্ত রুমা খালের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছয়টি পয়েন্টে চলছে ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের কাজ।

এলাকার মানুষের খাবার পানির অন্যতম প্রধান উৎস ঝিরি-ঝরণা,খাল ও নদী। এসব জায়গার পানি পান করে তারা জীবন ধারন করে থাকেন। প্রতিবছর শীত কালে পাহাড়ি ঝিরি র্ঝণা শুকিয়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের তীব্র পানির সঙ্কটে পড়তে হয়। এসব খাল থেকে পাথর উত্তোলন করায় শীত আসার আগেই শুকিয়ে যায় ঝিরি র্ঝণা আর খালের পানি। নদীর তীরবর্তী মানুষের পানির কষ্ট দ্বিগুন হয়। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাহাড়ি মানুষের পানির কষ্ট লাঘবের উদ্দ্যেশ্যে পাথর উত্তোলনের ওপর প্রশাসনের রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।

সম্প্রতি রুমা উপজেলার ওই পাহাড়ি ঝিরি থেকে অঅবধভাবে পাথর উত্তোলনকালে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পারিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আজিজুর রহমান। তিনি পাথর উত্তোলনের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করেন ৯জন পাথর শ্রমিককে। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দেয়া হয়েছে। এর পরও থেমে নেই পাথর উত্তোলন কারবার।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলার রুমা, লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি এবং থানচি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল, পাহাড়ি ঝিরি ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে বোল্ডার পাথর উত্তোলন করছে সংঘবদ্ধ অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে হুমকির মূখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশও।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজ নেতারা বলছেন, প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। উন্নয়ন কাজে ব্যবহাররের নামে বেশ কিছু দিন ধরে চলছে পাথর উত্তোলনের কাজ। রুমা উপজেলা বাজারের স্বর্ণকার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা নাম ধারী জনৈক উজ্জ্বল ধর এবং ইমরান সরকারি উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের নামে গত বছর থেকে অবৈধভাবে রুমা খাল থেকে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে। পাথর উত্তোলনের জন্য বুলডোজার ব্যবহার করে পাহাড় কেটে রাস্তাও নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা চিংসাথোয়াই মারমা, রুমা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈবং মার্মা বলেন, উন্নয়ন কাজের নামে র্দীঘদিন ধরে বাজার কমিটির সভাপতি উজ্জল ধর রুমা খাল থেকে পাথর উত্তোলন করে আসছে। লামার পৌরসভার কাউন্সিলর আবু সালাম, চকরিয়ার হুমায়ুন, আলীকদমের রেফার পাড়া আবাসিক এলাকা জাহিদ মেস্ত্রী, কবির মেন্ত্রী, রোকন উদ্দীন মাস্টার, সুজিত দাশ সোহাগ, আবুল কালাম, রোয়াংছড়ির, বশর ড্রাইভার ও সদরের সেচ্ছাসেবক লীগের পরিছয়দানকারী হাফেজঘোনার কামাল উদ্দীন খাল ও পাহাড়ি ঝিরি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনও পাচার কাজ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে পাথর খেকো রুমা বাজার কমিটির সভাপতি উজ্জল ধরের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পারিবারিক কাজে চকরিয়া একটু ব্যস্ত আছেন বলে জানান। তিনি পাথর উত্তোলনের বিষয়টি এড়িয়ে যান। পাথর উত্তোলন তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যবসায়ী মো. ইমরান বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের জন্য ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে রুমা খাল থেকে চল্লিশ হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে। রুমার পলি মৌজা হেডম্যান চিংসাঅং মারমা বলেন, পাথর উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। এভাবে পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাবে। ফলে এলাকার প্রায় ২০০টি গ্রাম বা পাড়ার বাসিন্দারা খাবার পানির তীব্যসংকটে পতিত হবেন। থানছি উপজেলার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। পাথর উত্তোলন কারীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। সীমাবদ্ধতা সত্বেও পাথর উত্তোলন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেওি তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক সাংবাদিকদের বলেন,পাথর উত্তোলন করলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই কেউ যদি অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন,রুমাতে পাথর উত্তোলনের সংবাদ পেয়ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: