ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাতের আধাঁরে সাগর পথে নৌকায় আসছে রোহিঙ্গারা

জসিম মাহমুদ,টেকনাফ ::

টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে পয়েন্ট দিয়ে রাতের আধাঁরে সাগর পথে উপকূল দিয়ে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গা। মাঝখানে কিছুদিন ধরে সাগরপথে নৌকায় করে রোহিঙ্গা পারাপার বন্ধ থাকলে আবারো নৌকায় করে কিছু দালাল চক্রের সদস্যরা নিয়ে আসছে রোহিঙ্গাদের।

স্থানীয়রা জানায়, নাফনদীর সীমান্তে বিজিবির তৎপরতার কারণে কিছু দালাল চক্রের সদস্যরা আবারো নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের সাবরাং, টেকনাফ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের সাগর উপকূলীয় পয়েন্ট দিয়ে নিয়ে আসছে। গতকাল বুধবার রাখাইন ছেড়ে নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফের হারিয়াখালী ত্রাণ কেন্দ্রে আসা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুচি ডং শহরের কিয়াং মং গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাসেম ও নুর বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

তারা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রাণ বাজি রেখে পাহাড়ে লুকিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা। কিন্তু খাওয়ার মতো কিছু ছিল না। পানি ছাড়া অন্য কোন ধরনের খাদ্য সামগ্রী নেই রাখাইনে।

মংডু শহরে দংখালীতে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে প্রায় ৪৭দিন মানবেতর জীবন-যাপন করেছি। পরে সোমবার রাতের আঁধারে নৌকায় করে টেকনাফের মহেয়খালীয়াপাড়া সাগর পথে ঢুকে পড়ি। এরপর এই ত্রাণ কেন্দ্রে চলে এসেছি। আমাদের নৌকায় শিশু, নারী ও পুরুষসহ ৬২জন রোহিঙ্গা ছিল। ওইদিন আরও তিনটি নৌকায় করে দংখালী থেকে রোহিঙ্গা এসেছে। তারাও এখন ত্রাণ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

একই গ্রামে বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, স্ত্রী নুর বেগম ও চারজন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে টেকনাফে আসতে নৌকার মাঝিকে স্ত্রীর এক জোড়া কানের দুল দিতে হয়েছে। টাকা না থাকায় এতদিন আসতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে সময় স্ত্রীকে দেওয়া কানের দুল দুটির বিনিময়ে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছি।

একই গ্রামের আরেক রোহিঙ্গা আবুল বশর বলেন, বসত বাড়ি হারানোর পর পালিয়ে পাহাড়ের কিনারায় বসবাস করছিলেন,এতোদিন বাংলাদেশে না এসে পালিয়ে আত্মগোপনে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সেখানে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখন নতুন করে গ্রামের নলকূপ থেকে শুরু করে পুকুরের পানিও নষ্ট করে দিচ্ছেন। খালি পড়ে থাকা বসতঘর থেকে শুরু করে হাটবাজার ও চালের গুদামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা । তারা ধ্বংস করছে রোহিঙ্গাদের কোটি কোটি টাকার স¤পদ।

উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মঙ্গলরার রাত থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত আরও ২০১ পরিবারে ৭৮৬ জন রোহিঙ্গা টেকনাফে এসেছে। তাদের প্রথমে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালীতে সেনা বাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রের পাঠানো হয়। সেখান থেকে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির।

তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার ১৬৫ পরিবারে ৭৫৫জন, সোমবার ১৪৯ পরিবারে ৭৪৯জন রোহিঙ্গা এসেছেন। হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপে এতোদিন সাগরপথে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ ছিল। কিন্ত আবারো কিছু দালাল টাকার বিনিময়ে রাতের আধাঁরে রোহিঙ্গাদের সাগরপথে নৌকায় করে নিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা আনার অপরাধে সোমবার শাহাজাহান নামে একজন দালালকে আটক ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবির উপ অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, এক শ্রেণির দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গা পারাপার করতে কখনো নৌকা, কখনো ভেলা ভাসিয়ে রোহিঙ্গা নিয়ে আসছে । নাফনদী দিয়ে রোহিঙ্গা পারাপার বন্ধ করতে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন রাতের আধাঁরে কিছু নৌকা আবারো রোহিঙ্গা পারাপার করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন দালাল চক্রের সদস্যরা রাতের আধাঁরে রোহিঙ্গাদের নৌকায় করে এনে সাগর তীরবর্তী এলাকায় তুলে দিচ্ছেন।

পাঠকের মতামত: