ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

রেললাইনে আটকে আছে কক্সবাজারবাসীর অর্থনৈতিক চাকা

সৈয়দ মোহাম্মদ শাকিল :  অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে কক্সবাজারে বিশ্বমানের রেলস্টেশন। দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের আওতায় ঝিনুক আকৃতির এ রেলস্টেশনটির নির্মাণকাজ আগামী মাসেই শুরু হবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স পরলোকগমন করলে তার নাম অনুসারে আধুনিক কক্সবাজারের নামকরণ করা হয়। পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। এখানকার মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে নতুন বিনিয়োগ হবে। ঘুরে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। আলোর মুখ দেখছে এই প্রকল্প। খুশির জোয়ার বইছে জেলাজুড়ে।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ রেলওয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০০০ সালে ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প । তবে ঐ প্রকল্প অন্ধকারে রয়ে গেছে।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন তৈরীর মাধ্যমে ২০১৩ সালে যাত্রী পরিবহণ শুরুর ঘোষণা দিয়ে কক্সবাজার শহরে ‘রেল লাইন’ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার শহরতলীর বাস টার্মিনালের কাছে ‘দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার’ এবং ‘রামু-ঘুমধুম মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপরও স্বপ্নের পর স্বপ্ন বুনে চলেছে কক্সবাজারবাসী। এখন রেললাইন নিয়ে ফের নতুন স্বপ্ন জেলাবাসীর। খবর শুনে উচ্ছ্বাসে ভাসছে কক্সবাজারের জনগণ।
প্রস্তাবিত রেলপথটি চালু হলে এটি হবে আন্তর্জাতিক করিডোর, যা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে অনেক অবদান রাখবে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন জনদাবিতে পরিণত হয়েছে।
সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনায় কক্সবাজার একটি ‘উন্নতমানের বিশেষ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পরিপূর্ণ পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া কক্সবাজার দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দৃষ্টিতে কক্সবাজারকে ঘিরে নেয়া ২৫ মেগা উন্নয়ন প্রকল্প কক্সবাজারকে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে কক্সবাজার হয়ে উঠবে আধুনিক পর্যটন নগরী। ঘুরে যাবে জেলার অর্থনীতির চাকা।
‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কক্সবাজারে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলেই বদলে যাবে কক্সবাজার। তখন কক্সবাজার হবে একটি উন্নত ও পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী। একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ কক্সবাজারের আয় থেকে যোগান হবে।

জানা গেছে, অবিভক্ত আসাম রেলওয়ে ১৯২৯-৩১ সালে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করেছিল। চট্টগ্রাম নগরী থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১৪টি রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়। লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ২০০২ সালের ২ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দেয়া হয় ট্রেন।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কথা জোরালো হচ্ছিল ২০১০ সাল থেকে কিন্তু এ প্রকল্প নানা জটিলতায় বাস্তবায়ন করতে পারছিল না। অবশেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের দৃশ্যমান কাজ শুরু হচ্ছে।
সূত্র মতে, ১৮৯০ সালে বার্মিজ স্টেট রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বার্মাকে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালে মিনবু-আনপাস-আরাকান-চিটাগাংয়ের বিভিন্ন রুটে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ১৯১৭-১৯১৯ সালে চট্টগ্রামকে বার্মার মংডুর সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য আরেকটি সার্ভে করা হয়। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কর্তৃক ইয়াংগুনকে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করার জন্যও সার্ভে করা হয়েছিল। বার্মার ইয়াংগুন থেকে মিনবু পর্যন্ত রেললাইন নির্মিত হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু মিনবু থেকে দোহাজারী পর্যন্ত অংশটি নির্মিত হয়নি। ১৯৫৮ সালে পুনরায় কক্সবাজার পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য একটি সার্ভে করা হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস ইসক্যাপের সহায়তায় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে সার্ভে করা হয়েছে। ২০০১ সালের আগস্ট মাসে কলকাতার বিসিএল সর্বশেষ স্টাডি পরিচালনা করেছে। এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলের সম্ভাব্যতার কথা উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে লবণ, চিংড়ি উৎপাদন ও চাহিদা, রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহনের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষ করে ধান, চাল, গম, তরিতরকারি, শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি বহনের পরিসংখ্যান রয়েছে। সড়কপথের চেয়ে রেলপথে কম খরচে পরিবহন এবং পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টস, টিম্বার ইত্যাদি রেলপথে পরিবহনের সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে। শতাধিক হ্যাচারিসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত পণ্য সহজে রেলপথে পরিবহন করা যাবে। স্টোন ও বোল্ডার্স ও পরিবহন করা যাবে, তা ছাড়া কিংকার, উডপাল্প, হেভি মিনারেল ইত্যাদি পরিবহনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে রেললাইনটি শুরু হয়ে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া- রামু উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত প্রায় ১১০ কি.মি. দীর্ঘ রেল লাইন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কক্সবাজার জেলার ৩৩টি মৌজার প্রায় ৭২ কিমি দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের জন্য চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩টি এলএ কেস এ অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ তিনটি এলএ কেসে মোট জমির পরিমাণ ১০৭৩ একর। তন্মধ্যে ৬টি সংস্থার মোট ১৮৯.৮৮ একর জমি রয়েছে। বন বিভাগের ১৬৫.১১ একর, জেলা পরিষদের ১.৮৬ একর, ইউনিয়ন পরিষদের ১.৫৭ একর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬.১৫ একর, সড়ক বিভাগের ৪.৬৬ একর, কৃষি বিভাগের ১০.৫৩ একর জমি রয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দোহাজারী-রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু-কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ও পরে রামু থেকে ঘুমধুম ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৯১ একর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার (লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ) ৩৯১ একর এবং কক্সবাজার জেলার (চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর) এলাকায় ১০০০ একর।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শুরু করতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চারটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কিছু স্থানে তারা জরিপের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শুরু হবে।
কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও আরামদায়ক করতে ওই এলাকায় রেলপথ নির্মাণের জন্য দেশি-বিদেশি চারটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে রেলওয়ে। ২০১৮ সালের মধ্যেই এ রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী রেললাইনটি সিঙ্গেল লাইন বা মিটারগেজের পরিবর্তে ব্রডগেজে নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। বর্তমান ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রধম ধাপে রেলপথ নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত। পরে দ্বিতীয় ধাপে রেলপথ নির্মাণ করা হবে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১৪০ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণ করা হবে। রেল লাইনে থাকবে ৩৯টি বড় ব্রীজ এবং ১৪৫টি ছোট ব্রীজ ও কালভার্ট। হাতি চলাচলের ছয়টি সুনির্দিষ্ট পথে নির্মাণ করা হবে বিশেষ ওভার ব্রীজ। এই রেলপথ আসবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু ও সদর উপজেলার উপর দিয়ে কক্সবাজার শহর পর্যন্ত।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি নির্মাণ হবে দুটি ভাগে। প্রথম ভাগে নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক। একই সাথে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক এবং কক্সবাজারে আইকনিক ইন্টারমডেলের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
কোম্পানিগুলো তাদের জরিপের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পটি হবে ‘ডুয়েল গেজ’ রেলপথ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে ৯টি রেলস্টেশন। এগুলো হল দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এ প্রকল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হবে ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার রেলস্টেশন। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ করার পর পরবর্তী সময়ে আরেকটি রেললাইন মিয়ানমারের ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেলপথ। রেলওয়ের নেটকওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্কসহ ২৭ দেশে।
কক্সাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীর প্রেসিডেন্ট আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, ‘কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকার এ কাজে আগ্রহ দেখায়নি। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’ চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রামের যানজট-জনজট অনেকাংশে কমে আসবে। রেল যোগাযোগ বাস্তবায়ন হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য পরিবহন করতে সহজলভ্য হবে। চট্টগ্রামে যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলোর কাজ শেষ হলে ব্যবসায়ীরা রেলপথের সুফল পাবে। সরকারও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে ট্রানজিট দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা জানান, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা এলাকায় এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্পটির উন্নয়নে ধীরগতি দেখা দেয়। এখন প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এতে জেলার ২৬ লাখ মানুষ খুশি। সৈকত পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত হলে জেলায় উৎপাদিত পণ্য কমমূল্যে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে পর্যটক আগমনও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
বলাকা হ্যাচারির পরিচালক নজিবুল ইসলাম জানান, কক্সবাজার উপকূলে স্থাপিত ৫৭টি হ্যাচারিতে প্রায় এক হাজার কোটি চিংড়িপোনা উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত এই পোনা দিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। ট্রাকে সরবরাহ করতে গিয়ে অক্সিজেনের সংকটে পড়ে প্রচুর পোনা মারা যায়। এ কারণে কার্গো বিমানে পোনা সরবরাহ করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খাতে বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে। রেলপথ চালু হলে কম ভাড়ায় পোনা সরবরাহ করা যাবে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান জানান, সমুদ্রসৈকত দেখার জন্য প্রতিবছর দেশ-বিদেশের অন্তত ১৬ থেকে ২০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। রেলপথ চালু হলে এর সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যাবে। তখন পর্যটন খাতে উন্নতির পাশাপাশি রেল খাতেও সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় হবে।
আশা করা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে দৃশ্যমান কাজ দেখা যাবে এ রেল লাইন প্রকল্পে। ২০২১ সালের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেলভবন সূত্র।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার রিজার্ভ ফরেস্ট রয়েছে, আছে পর্যটনের মিনি এভারেস্ট চিম্বুক পাহাড় কেওক্রাডংসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মিত হলে সে অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে; ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারও সমৃদ্ধ হবে। কক্সবাজার হয়ে উঠবে বাণিজ্যও রাজধানী তথা বিহত্তর শিল্পনগরী। পর্যটন, কৃষি, লবণ ও চিংড়িশিল্পের উন্নতি হবে এই যোগাযোগের কারণে। নতুন বিনিয়োগ হবে। রেলপথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২৭টি দেশের সাথে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। খুব দ্রুত দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন বাস্তবায়িত হবে এমনটাই প্রত্যাশা কক্সবাজারবাসীর।

পাঠকের মতামত: