ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোন মামলারই আইনগত ভিত্তি নেই -আদালতকে খালেদা জিয়া

শামসুদ্দিন দিদার, ঢাকা:
আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোন মামলারই আইনগত ভিত্তি নেই উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য প্রদানকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে তিনি আরো বলেন, আমি এ মামলার বিবরণ থেকে জেনেছি এবং কুয়েত দূতাবাসের চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে এতিম খানা প্রতিষ্ঠার জন্য অনুদান দিয়েছিলো। এতে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। আমি আরো জেনেছি যে, কুয়েতের দেয়া অনুদানের অর্থ দুই ভাগ করে দু’টি ট্রাস্টকে দেয়া হয়। এতে আইনের কোন লঙ্ঘন হয়নি এবং ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কিংবা অন্য কারো লাভবান হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, ট্রাস্ট দু’টির কোন পদে আমি কখনো ছিলাম না বা এখনো নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও আমার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিলোনা।

তিনি আরো বলেন, মামলার স্বাক্ষ্য প্রমাণ থেকে আরো জানতে পেরেছি যে, বগুড়ায় এতিম খানা স্থাপনের লক্ষ্যে সে জমি ক্রয় করে। এই জমি ক্রয় সম্পর্কেও কোন অভিযোগ নেই।

এই ট্রাস্টের বাকী টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে এবং তা সুদাসলে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও আদালতে বলেন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি বেসরকারি ট্রাস্ট। এটি আইন সম্মতভাবে রেজিষ্ট্রিকৃত বলেও তাঁর দেয়া জবানবন্দীতে উল্লেক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলে আমাকে ক্ষমতাসীনরা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়। অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে এসব মামলার আশ্রয় নিয়েছে সরকার।’

‘আমাকে হেনস্তা করার ও জনগণের সামনে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি; হবেও না ইনশাআল্লাহ। বরং এসব করে তারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কারণ, এ দেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং তাঁরা সত্য ও মিথ্যার ফারাক সহজে বুঝতে পারে।’

‘তাই যতই মামলা দিয়ে জর্জরিত করা হচ্ছে, তত বেশি মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। মাননীয় আদালত, এ কারণে এসব অসত্য মামলায় আমরা মোটেও ভীত নই’, যোগ করেন খালেদা জিয়া।

এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে আদালতের উদ্দেশে বের হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি দুপুর ১১টা ৪০ মিনিটে আদালতে পৌঁছান।

গত ৯ নভেম্বর খালেদা জিয়া তৃতীয় দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়া স্থায়ী জামিনের জন্য আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন আদালত। পরে বিচারক আজ এ মামলার পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন।

এর আগে গত ২ নভেম্বর খালেদা জিয়া দুই মামলায় স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন। ফলে এখন প্রতি সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

পাঠকের মতামত: