ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় পরিদর্শক টিম: দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের রোড এলাইনমেন্ট’ চূড়ান্ত, চলছে জমি অধিগ্রহণ

মনির আহমদ, কক্সবাজার ::
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের জন্য চলছে জমি অধিগ্রহণ। এ কারনে উচ্ছেদসহ রিপ্লেইসমেন্ট হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়। গতকাল ১৫ নভেম্বর বুধবার স্কুলের কার্যক্রম সচল রেখে কিভাবে কাজ করা যায় তা পর্যবেক্ষনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারক টিম।

এডিবি এবং রেললাইন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের যৌথ টিমের প্রতিনিধিরা  এ সময় পালকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খাজা সালা উদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  রেজাউল করিম এবং দাতা সদস্য জামাল উদ্দিনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় প্রতিনিধিরা বলেন, রেল লাইনের নীতিমালা অনুযায়ী স্কুলটি স্থানান্তরসহ পুননির্মান করা হবে। এ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন চুড়ান্ত না হওয়া অবধি স্কুলটি ভাংছেন না রেললাইন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত রেললাইনের ‘রুট এলাইনমেন্ট’ পিলার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহণ । উঁচু-নিচু টিলা, বনভূমি ও সমতল সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে রেললাইনটি শেষ হবে সমুদ্রতীরের একেবারে কাছে। এ জন্য ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের অনাপত্তি পত্রও চুড়ান্ত। এ রুটে ১৪০ কিলোমিটার নতুন ‘ডুয়েল গেজ’ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বনভূমির যেসব স্থানে বন্যপ্রাণী ও হাতির বিচরণ এলাকা, সেসব স্থান চিহ্নিত করে ‘প্যাসেজ’ নির্মাণ করা হবে।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে ৯টি রেলস্টেশন। এগুলো হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। তবে কক্সবাজারের প্রস্তাবিত রেলস্টেশন এলাকা এখনো ধানি জমি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চৌধুরী পাড়ার ওই স্থানটি চিহ্নিত করে রেখেছে। রামু থেকে চৌধুরী পাড়ায় কক্সবাজার স্টেশনে আসতে লাইনের দুটি স্থানে সড়ক ক্রসিং থাকবে।

প্রথম ভাগে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ, রেলের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ করা হবে। পরে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্র্যাক নির্মাণ এবং কক্সবাজার রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে।

চলতি বছরেই রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। প্রথমে রেললাইন হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত। রামু হবে জংশন। আর সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। তখন ঢাকা  থেকে সরাসরি ট্রেনে পৌঁছানো যাবে কক্সবাজারে। পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার থেকে আরেকটি লাইন পূর্ব দিকে যাবে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুমে। ২০২০-২২ সালের মধ্যেই সব কাজ শেষ হওয়ার কথা। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেলপথ। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত।

বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সুত্র বলেন, রেলওয়ের দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। তাই এ প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এটা শেষ হলে শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও হাজার হাজার পর্যটক রেলপথে কক্সবাজার আসার সুযোগ পাবে।

এ প্রকল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হবে ঝিনুক আকৃতির রেলস্টেশন।বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের এ রেল স্টেশনটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণ করার জন্যই দৃশ্যমান ইন্টারন্যাশনাল এ রেল স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝিনুক আকৃতির এ স্টেশন দেখলেই বোঝা যাবে এটি সমুদ্র সৈকতের স্টেশন। স্টেশনটির অবস্থান হবে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের উত্তর- পশ্চিমের চৌধুরীপাড়ায়। রেল ষ্টেশনটি বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরন হবে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন।

পাঠকের মতামত: