ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি

সাতকানিয়া প্রতিনিধি ::

দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিক ও চালক। টাকার বিনিময়ে ‘মাসিক টোকেন’ না নিলে গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।
এদিকে সরকার মহাসড়কে তিনচাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করায় হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। টোকেন নিয়ে মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে অটোরিকশা।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া বিওসির মোড় এবং চন্দনাইশের পুঠানীপুল এলাকায় জেএসসি পরীক্ষার্থীবাহী অটোরিকশা আটক করে থানায় নিয়ে যায় হাইওয়ে পুলিশ। এ সময় গাড়ির সঙ্গে থানায় আটকে থাকতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদেরকেও। পরে পুলিশ গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর তড়িঘড়ি করে পরীক্ষায় বসতে হয়েছে এসব শিক্ষার্থীকে।

অটোরিকশাচালকরা জানান, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের অধিকাংশ অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করে না। যাঁরা মহাসড়কে অটোরিকশা চালান, তাঁরা হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে টোকেন নেন। টোকেন নিলে মহাসড়কে চলাচল করতে কোনো সমস্যা হয় না।

লোহাগাড়া পদুয়ার অটোরিকশাচালক মো. ইলিয়াছ জানান, সরকার মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করায় হাইওয়ে পুলিশের সাপে বর হয়েছে।
আগে মাঝে-মধ্যে গাড়ি আটক করে ওরা ১০০-২০০ টাকা দিলে ছেড়ে দিত। এখন তাদের সঙ্গে মাসিক চুক্তি না করলে গাড়ি চালানো যায় না। মাসিক ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত টোকেনের মূল্য রয়েছে।

সাতকানিয়ার নলুয়া এলাকার অটোরিকশা চালক মো. আবছার বলেন, ‘আমরা টোকেন নেইনি। গাড়ি নিয়ে মহাসড়কে যাইও না। কিন্তু এবারের জেএসসি পরীক্ষার্থীদের একটি ভাড়া নিয়ে মহাবিপদে পড়েছিলাম। হাইওয়ে পুলিশ পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া-আসার পথে গাড়ি আটক করে টাকা নিয়েছে। ’

সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকার মিনি ট্রাকের মালিক মো. ইউনুচ বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশের যন্ত্রণায় মাঝে-মধ্যে গাড়ি বিক্রি করে দিতে ইচ্ছা করে। গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে মাসিক টোকেন নিতে হয়। টোকেন না নিলে নানা হয়রানি করে। ’

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘গাড়ির বৈধ কাগজপত্র থাকলেও টোকেন না নিলে পথে পথে হয়রানির শিকার হতে হয়। ’

সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিম শরীফ বলেন, ‘জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বহনকারী কোনো গাড়িকে ঝামেলা না করার জন্য হাইওয়ে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ’

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। এজন্য পরীক্ষার্থীদেরকে সচেতন করা হয়েছে। ’

সম্প্রতি জেএসসি পরীক্ষার্থীবাহী গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আটক করা হয়েছিল সত্য। তবে পরে পরীক্ষার্থী, চালক, অভিভাবক ও শিক্ষকদেরকে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ’

টোকেন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে কোনো টোকেন দেইনি। আগে পুলিশের নামে কামরুল নামের এক লোক টোকেন দিতেন। আমরা তাঁকে নিষেধ করেছি। তাঁর কাছ থেকে টোকেনও জব্দ করেছিলাম। ’

পাঠকের মতামত: