ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সওজের বিপুল পরিমাণ জমি বেদখল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে

ছবির ক্যাপশন: সড়ক বিভাগের জায়গায় এভাবে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট ও দোকান-পাট। ছবিটি চকরিয়ার বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকার।

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক আগামী বছরের শুরুতে চার লেনে রূপান্তর হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সড়কটি চার লেন করতে গিয়ে দুপাশে যে পরিমাণ জায়গা দরকার পড়বে তা বেদখলেই রয়েছে অনেক স্থানে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত বিপুল পরিমাণ এই জায়গায় সড়কের দুই ধারে চকরিয়া অংশের প্রায় ২৯ কিলোমিটারজুড়ে কয়েক শ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এমনকি অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বহুতল ভবন থাকায় ভবিষ্যতে এই জায়গা পুনরুদ্ধার করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। তাই চার লেনের কাজ শুরু করার আগে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জোর দাবি ওঠেছে বিভিন্ন মহলে। তা না হলে সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা তো দূরের কথা, এসব অবৈধ স্থাপনা সরানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে।

অভিযোগ ওঠেছে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির সুযোগে চকরিয়া সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত শতকোটি টাকার জায়গা বেদখল হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং, আজিজনগর থেকে খুটাখালী পর্যন্ত এবং পেকুয়ার টৈটং চকরিয়ার লালব্রিজ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে অন্তত হাজারো অবৈধ স্থাপনা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে দখলদাররা অবৈধভাবে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলেছেন। এমনকি পৌরশহর চিরিঙ্গাস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া কার্যালয়ের কয়েকশ গজের মধ্যেও বেহাত হয়ে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের সড়কের পাশের জায়গা। যা অবৈধভাবে দখলে রেখে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন জনৈক প্রবাসী এহেছান।
অপরদিকে চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় ঢাকা ব্যাংকের পাশে সড়ক বিভাগের কোটি টাকার জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণেরও কাজ চালাচ্ছেন দুবাই প্রবাসী পৌরসভার কাহারিয়াঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন।

স্থানীয় সচেতন লোকজন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত বেশির ভাগ জায়গা দখল হওয়ার সময় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথমে সেখানে উপস্থিত হয়ে বাধা দেন। কিন্তু ক্ষেত্র-বিশেষে দখলদারেরা মোটা অংকের টাকায় সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার কারণে সেই অভিযানে ভাটা পড়ে। তখন সুযোগ বুঝে দখলদারেরা সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে।

অবশ্য সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত যেসব জায়গা বেদখল হয়ে গেছে, তাদেরকে ইতোপূর্বে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে স্থাপনা অপসারণপূর্বক জায়গা ছেড়ে দিতে। এই নোটিশ পাওয়ার পরও যারা এখনো সওজের জমি ছেড়ে দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সড়ক বিভাগের জায়গা পুনরুদ্ধার করা হবে। তবে সওজের এসব তৎপরতা লোকদেখানো এবং বেদখলে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে কর্মকর্তারা হাঁটছেন কচ্ছপ গতিতে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ জায়গার মালিকদের সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটি নির্মাণ করার সময় বিপুল পরিমাণ জায়গা অধিগ্রহণ করে। পরে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কগুলো উম্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকে শুরু হয় নতুন করে জবরদখল প্রক্রিয়া। এরপর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী থেকে উত্তর হারবাং আজিজনগর এবং পেকুয়ার টৈটং থেকে চকরিয়ার লালব্রিজ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের অবশিষ্ট থাকা বেশির ভাগ জায়গা বিভিন্ন সময়ে বেদখল হয়ে যায়। বর্তমানে বেদখল হওয়া এসব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন শতাধিক বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ছোট-বড় অন্তত হাজারো স্থাপনা। অনেক এলাকায় সড়কের পাশে জনবসতিও গড়ে তোলা হয়েছে। গতবছরও সর্বশেষ সড়ক বিভাগের জায়গা দখলের ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির সুযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকার পূর্বপাশে প্রভাবশালী দখলবাজচক্র সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকা দামের জায়গা জবর-দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করেছেন।

সওজ সূত্র জানায়, সড়ক বিভাগের জায়গা দখলের ঘটনায় চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের পক্ষ থেকে গত বছরের ২২ মে দখলে জড়িত ৯ জন দখলবাজকে নোটিশ দেয় এক সপ্তাহের মধ্যে সওজের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে। কিন্তু নোটিশগ্রহীতা দখলবাজ বরইতলী একতাবাজার এলাকার নুরুল হক চেয়ারম্যানের ছেলে মো. মনছুর, আবদুল কাদেরের ছেলে একরাম, মাস্টার হারুনর রশিদ, পারভেজ, আশরাফুল মাওলা, মিজবা আমিনের স্ত্রী তছলিমা, রাশেদুল মাওলা, সিরাজুল হকের ছেলে জাহেদুল ইসলাম ও সিরাজ মিয়ার ছেলে আশরাফসহ জড়িতরা স্থাপনাগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেননি। এমনকি সড়ক বিভাগও তাঁদের বিরুদ্ধে আর কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমানে সেখানে বেশ কয়েকটি নতুন মার্কেটও গড়ে তুলেছেন অভিযুক্তরা।

জানা গেছে, গতবছর একই সময়ে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কের জায়গা ছেড়ে দিতে চকরিয়া-পেকুয়ার অন্তত সাড়ে তিন শ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু নোটিশ দেওয়ার পর বছর সময় পার হলেও এখনো এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি সড়ক বিভাগ। তবে ওই সময় কয়েকটি উচ্ছেদ অভিযান করে তাঁরা দায়িত্ব শেষ করেছেন।

এ বিষয়ে চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা বলেন, ‘সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে জড়িতদের চিহ্নিত করে আমরা অনেকবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা নোটিশ পেয়েও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে না। যেসব এলাকায় সড়ক বিভাগের জায়গা দখল হয়ে গেছে তাদেরকে নতুন করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর পর উপ-সচিব মর্যাদার একজন ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তিনি যোগদান করলেই সড়ক বিভাগের বেদখল হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে গতি আসবে এবং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে জোরেশোরে। ’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশের ২৯ কিলোমিটার এবং পিএবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের পেকুয়ার টৈটং থেকে চকরিয়ার ঈদমণি লালব্রিজ পর্যন্ত যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলোই উচ্ছেদ করা হবে। যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র-বলেন তিনি। ’

রানাপ্রিয় আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তরিত করার কাজে নামতে জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। এতে আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের শুরুতে এই কাজ শুরু হতে পারে। তার আগেই সকল অবৈধ স্থাপনা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রভাবশালীরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার সুযোগ পাবে না। ’

পাঠকের মতামত: