ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রামু প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রামু :
রামু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগমের স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্ণীতির কারনে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়মের কারনে এ উদ্বেগ-উৎকন্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত জুন মাসে রামু উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে তালিকা চেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি প্রেরন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
ওই সময় রামু উপজেলায় ২৫টি প্রধান শিক্ষকের ২৫টি শূণ্যপদ থাকলে ওই সময় দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মো. আবদুল্লাহ মাত্র ১২টি শূণ্যপদের তালিকা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করেন। এতে তালিকা আসেনি এমন শিক্ষকরা আশংকা করেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসে এসব পদে অন্য উপজেলার শিক্ষকদের পদায়ন করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা লাখ-লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের পথ করেছেন।
অপরদিকে শিক্ষা অফিসে দেয়া গ্রেডেশন তালিকায় মাত্র ১২টি শূণ্যপদ দেখানোসহ নানা অনিয়মের কারনে ওই তালিকা পূনরায় চেয়ে চিঠি দেয়া শিক্ষা অধিদপ্তর। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় ও বঞ্চিত শিক্ষকদের চাপের মুখে সবকটি শূণ্যদের তালিকা পাঠানো হয়।
গত জুলাই মাসে রামু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আনজুমান আরা বেগম। যোগদানের পর তিনিও গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে একটি বিতর্কিত তালিকা পাঠান। ওই তালিকায় তিনি একটি অস্থিত্বহীন মামলার অজুহাতে ৭টি শূণ্যপদ কম দেখান। বিষয়টি যথাযথ না হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওসমান গনি তালিকাটি ২বার ফেরত পাঠান। এরই প্রেক্ষিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিধি মোতাবেক (মামলা না দেখিয়ে) ২৫টি শূণ্যপদ দেখানো হয়।
প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে গত আগষ্ট মাসে সমন্বিত গ্রেডেশন তালিকা চাওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগম ২৭টি শূণ্যপদ দেখান। কিন্তু ও এ তালিকায় তিনি অনিয়ম-দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে ২৭টি শূণ্যপদে মামলার অজুহাতে ৮টি পদ ব্লক করে রাখেন।
এ নিয়ে ক্ষুব্দ স্থানীয় শিক্ষকরা জানান, তারা এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করলে কেউ মামলার সার্টিফাই কপি এবং মামলার প্রেক্ষিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের স্থগিতাদেশ চেয়ে দেয়া কোন প্রমাণ বা চিঠি দেখাতে পারেননি। শিক্ষকরা আরো জানান, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগম কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ৮টি ব্লক করে গ্রেডেশন তালিকা পাঠিয়েছেন।
এরফলে স্থানীয় যোগ্যতা সম্পন্ন ৮জন শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অথচ এসব শিক্ষক সবাই মাস্টার্স পাস এবং এদের অনেকে প্রায় ১৮/১৯ বছর চাকরী করে পদোন্নতি পাচ্ছিলেন না।
শিক্ষকরা আরো জানান, কথিত মামলার ৮জন বাদী সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তারা কেবল এসএসসি পাস। অথচ ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ি পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে এইচএসসি পাশ না করলে ওইসব শিক্ষকরা সহকারি শিক্ষকের যোগ্যতা হারাবেন।
বিষয়টি জানার পরও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগম, মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। যে অনিয়েমের শুরুতে নাটের গুরু ছিলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মো. আবদুল্লাহ।
এ ঘটনায় ক্ষুব্দ শিক্ষকরা জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগম শিক্ষকদের কল্যাণের কথা না ভেবে নিজের আখের গোছাতে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে। তারা অবিলেম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে গ্রেডেশন তালিকা প্রেরন এবং গ্রেডেশন তালিকা তৈরীতে অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে রামু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা বেগম জানিয়েছেন, একটি মামলার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গ্রেডেশন তালিকায় ৮টি পদ খালি রাখা হয়েছে। তবে মামলাটির কপি তাঁর কাছে নেই বলে জানান। তিনি আরো জানান, একই জটিলতার কারনে উখিয়া-টেকনাফ সহ অন্যান্য উপজেলাতেও এভাবে করা হয়েছে। তাই আমিও ওভাবে তালিকা পাঠিয়েছি। এখানে তিনি কোন অনিয়ম করেননি বলেও জানান।

পাঠকের মতামত: