ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ঐতিহ্য “খোদার কুম”র অস্থিত্ব হুমকির মুখে!

এম.আর, মাহমুদ ::

চকরিয়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্য ‘খোদার কুমের’ অস্থিত্ব হুমকির মুখে। খোদায়ি ভাবে সৃষ্ট এ কুম (জলদার) টি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য মানুষ এ কুমের পানি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। চকরিয়ার ইতিহাসের সাথের খোদার কুমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখার কোন সুযোগ আছে বলে চকরিয়ার মানুষ মনে করেনা। কবে কখন খোদার কুমের সৃষ্টি তা প্রবীণদের পক্ষে বলা সম্ভব। তবে এ কুমটি কেউ খনন করেনি, এখানে কোন সন্দেহ নেই। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বলে এ কুমের নাম করণ হয়েছে খোদার কুম। শত বছর ধরে এ কুমের অস্থিত্বে কেউ হাত দেয়নি। বর্তমান সময়ে খোদার কুমটিও রক্ষা পাচ্ছেনা। তিলে তিলে এ কুমের অংশ দখল করতে মানব হাতের ছোয়া লেগেছে। পৌর এলাকার ভুমি মূল্যের দাম আকাশ চুম্বি। ফলে কুম সংলগ্ন ভুমি মালিকেরা খোদার কুমের লাগোয়া অংশে হাতের আচড় দিয়েছে। মনে হচ্ছে মানব হাতের ছোয়ায় কুমটি আর রক্ষা পাবেনা। কথায় আছে বানরের শরীরে আঘাত লাগলে সঙ্গী বানরের দলের হাতের ছোয়ায় ঘাঁ টি ক্রমশঃ বড় হতে থাকে। পরে আঘাতপ্রাপ্ত বানরের মরণ ছাড়া আর উপায় থাকেনা। খোদার কুমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আঘাত প্রাপ্ত বানরের পরিণতি হতে যাচ্ছে এ কুমের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে সফলতা আসলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও নেই এমন কথাও বলা যাবেনা। চকরিয়ার ঐতিহ্য হিসেবে খোদার কুমের অস্থিত্ব রক্ষার দায়িত্ব কার তা এলাকাবাসী জানেনা। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পৌরসভা তৎপর না হলে চকরিয়ার ঐতিহ্য খোদার কুমের মৃত্যু ছাড়া আর কোন গতি থাকবেনা। খোদার কুমের পানি একেবারে শুকিয়ে যেতে কেউ দেখেনি। কাঠফাটা রোদেও এ কুমের পানি বিদ্যমান থাকে। যা ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তি এলাকার বেশুমার মানুষ। এছাড়া খোদার কুমের পূর্ব পার্শ্বে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসেস এর অফিস। তাদের প্রতি মুহুর্তে প্রয়োজন পানি। পানি ছাড়া মাছ যেমন বাছেনা। তেমনি পানি ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কোন গতি থাকেনা। কারণ পানি না থাকলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই। কুমটি ভরাট করে ইট কংকরের আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে, তাতে সৌন্দর্য বাড়বে, কিছু মানুষ লাভবান হবে। কিন্তু পরিবেশের বারটা বাজবে। চকরিয়া-বদরখালী-মহেশখালী সড়কের চকরিয়া অংশের একটু পশ্চিম পার্শ্বে থানা ও উপজেলা কার্যালয়ে যাওয়ার পথে খোদার কুমের অবস্থান। কিন্তু খোদার কুমের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে কিছু জায়গা ভরাট করে দোকান নির্মাণ শুরু করেছে। যারা দোকান নির্মাণ করছে তাদের দাবী এ জমির শ্রেণী নাল এবং তাদের মৌরশি সম্পত্তি। এভাবেই হয়ত এক সময় পুরো কুমটি ভরাট করে নাল হিসেবে দখল হয়ে যাবে। আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছে গ্রাম, মানুষ সৃষ্টি করেছে শহর কিন্তু এই গ্রামের অস্তিত্ব না থাকলে শহরের কোন গুরুত্ব থাকবে বলে মনে হয়না। জীবিকার তাড়নায় প্রতিদিন মানুষ শহর মুখী হচ্ছে। তাই বলে গ্রামকে উপেক্ষা করা যায়না। চকরিয়ার অনেক ঐতিহ্য তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে গেছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ নানা দূর্যোগের শিকার হচ্ছে। এ চকরিয়ার পূর্বাংশে পাহাড়, পশ্চিমাংশে উপকূল। পাহাড় ও বৃক্ষ রাজি ধ্বংসের কারণে মাতামুহুরী নদী শুষ্ক মৌসুমে মৃত প্রায়। নদীর বুক জুড়ে শুধু বালুময় চর ছাড়া কিছুই দেখা যায়না। অথচ এক সময় এ নদীতে মৎস্য আহরণ ও নৌকা চালিয়ে হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই বললেই চলে। এছাড়া উপকূল জুড়ে ছিল সুন্দরবন সেই নান্দনিক সুন্দর বনের সুন্দরী কাঠ এখন আর চোখে পড়েনা। পুরো উপকূল জুড়ে বষায় চিংড়ী ঘের শুষ্ক মৌসুমে লবণ মাঠ। এসব ছিল চকরিয়ার পুরনো ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম এসব ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য আমাদের তথা চকরিয়ার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে কির্তিনাশা হিসেবে চিহ্নিত করব।

 

পাঠকের মতামত: