ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

অবৈধ ডেন্টাল-প্যাথলজি সেন্টারের রমরমা ব্যবসা

এম.বেদারুল আলম :
কক্সবাজারে ইচ্ছে করলেই যে কেউ প্যাথলজি কিংবা ডেন্টাল চিকিৎসালয় খোলা যায়। শহরের অভ্যন্তরে মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে নতুন প্যাথলজি গজিয়েছে ৭টি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধুমাত্র কতিপয় চিকিৎসকের আর্শিবাদে মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে উক্ত ডিজিট্যাল সেন্টার গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট, ইচ্ছেমত ফি আদায় সহ হাজারো অনিয়মের মধ্যে চলছে জেলার ৭০টি প্যাথলজি তথা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল চিকিৎসা কেন্দ্র । রংচটা বিজ্ঞাপন, বাহারী সব সেবাদানের নাম করে ল্যাব ইনচার্জের নামের পাশে নানাসব উচ্চতর ডিগ্রি বসিয়ে সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ল্যাব খুললেও কারো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত নেই। তবে আশার কথা হল অনেক দিন পর প্রশাসন নজর দিয়েছে এসব অবৈধ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে। গতকাল ৮ নভেম্বর ভ্রাম্যমান আদালত শহরের হাসপাতাল সড়কে অভিযান চালিয়ে ৬টি অবৈধ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করেছে।
এদিকে অবৈধ এ সব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কারনে ভুল পরীক্ষায় জীবনহানি ঘটছে অনেক রোগীর। প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে শত শত রোগি। রোগিকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে কমিশনের জন্য নির্দিষ্ট প্যথলজিতে পাঠাচ্ছেন ডাক্টাররা। ডাক্টারদের পছন্দসই প্যথলজিতে না গেলে রোগিদের নানা হয়রানির ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরের হাট বাজারে স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন অনুমোদনহীন প্যাথলজি। এ সব অবৈধ ল্যাব বন্ধে গত ২ বছরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অন্তত ১ হাজার নোটিশ পাঠানোর পরও থামানো যাচ্ছেনা এসব ভুঁয়া ল্যাব ব্যবসা। তবে গতকালের অভিযান অনেকটা আশার সঞ্চার করেছে ভুক্তভোগিদের। এটি কতদিন স্থায়ি হয় সেটার উপর নির্ভর করছে অবৈধ এ ল্যাব ব্যবসা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৭০টি প্যাথলজি সেন্টারের নাম থাকলেও তৎমধ্যে ৩৬টির লাইসেন্স নেই। ৩৩টি প্যাথলজিকে বন্ধের জন্য ৪ বছর আগে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করলেও অদ্যাবধি ৩৩টি প্যাথলজি বহাল তবিয়তে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে নানা পরীক্ষা নিরিক্ষা চালালেও এতদিন কোন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকালের অভিযান আগে চালানো হলে অবৈধ ল্যাবের সারি এত দীর্ঘ হতনা বলে মনে করছেন সচেতনমহল। পরিতাপের বিষয় হল বৈধ প্যাথলজির দুই তৃতীয়াংশের মালিক অর্থলোভী কতিপয় চিকিৎসক। ভূঁয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে দক্ষ প্রশিক্ষিত টেকন্যাশিয়ানের নাম করে কতিপয় প্যাথলজি চলছে এ সব চিকিৎসকদের আর্শীবাদে।
অপরদিকে গেল ৫ মাসের ব্যবধানে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ করে হাসপাতাল সড়কে গজিয়ে উঠেছে ১২/১৩টি অনুমোদনহীন দাঁতের চিকিৎসা কেন্দ্র। এদের মধ্যে ৯টিকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে বন্ধের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু কার কথা কে শুনে। নোটিশের তোয়াক্কা না দিব্যি চলছে এ সব ডেন্টাল সেন্টার। গত ৬ জুলাই সিভিল সার্জন অফিস থেকে কালো তালিকাভুক্ত করে নোটিশ দেওয়া এ সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমুহ হল হাসপাতাল সড়কের ডিজিটাল ডেন্টাল পয়েন্ট, ডেন্টাল সার্জারি, ফ্যামিলি ডেন্টাল সেন্টার, কক্স ডেন্টাল সেন্টাল, মর্ডান ডেন্টাল হাউজ, ওরাল ডেন্টাল, মুমিন রাজুধনন্তরি ডেন্টাল কেয়ার ।
এদিকে সিভিল সার্জন কর্তৃক কালো তালিকাভূক্ত ও ৪ বছর আগে বন্ধের নোটিশপ্রাপ্ত প্যাথলজি সমূহ হলো ঈদগাঁও বাজারের জয় প্যাথলজি, সী হার্ট মেডিকেল সেন্টার, হাসপাতাল সড়কের ফেমাস প্যাথলজি, ঈদগাঁও ডিসি সড়কের ডেন্টাল কেয়ার।
চকরিয়া উপজেলার কালো তালিকাভূক্ত প্যাথলজিসমূহ হল হেফজখানা সড়কের সেবা ল্যাব, মা মনি ফার্মেসী সংলগ্ন মা মনি প্যাথলজি, ফজল ফার্মেসী সংলগ্ন খুটাখালী প্যাথলজি সেন্টার, ডুলাহাজারা বাজারের মজুমদার মার্কেট সংলগ্ন নিউরণ ল্যাব, জীপ স্টেশনের এস এম প্যাথলজি, লালমিয়া মার্কেটের সাজেদা ড্রাগ হাউস, ডুলাহাজারা ল্যাব হাউস, খুটাখালীর গ্রামীণ ল্যাব, মালুমঘাটের মেডি ল্যাব।
রামুর চৌমুহনীর জননী প্যাথলজি, হাসান দন্ত চিকিৎসালয়, হাসপাতাল সংলগ্ন এম রাজা দন্ত চিকিৎসালয়। উখিয়ায় কালো তালিকাভূক্ত অবৈধ প্যাথলজি ব্যবসার চারণ ক্ষেত্র। এতে ১৩টি প্যাথলজিকে নোটিশ প্রদান করেছে সিভিল সার্জন। সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ কেন এসব অনুমোদনহীন প্যাথলজি সেন্টারসমূহ বন্ধে ৪ বছর পূর্বে নোটিশ জারির পরে ও এ্যাকশনে যাচ্ছে না সচেতনমহল তা জানতে চায়।
এসব অবৈধ ল্যাব বন্ধে কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা জানতে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবদুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মালয়েশিয়ার উচ্চ পদস্থ টিমের সাথে বৈঠকে আছেন বলে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
এদিকে ভূঁয়া পরীক্ষায় রোগীর মৃত্যু হলেই কি এসব প্রাণঘাতি ব্যবসা বন্ধ হবে এটাই সচেতন মহলের প্রশ্ন। গেল ৪ বছরে ৩ জন সিভিল সার্জন বদলী হলে ও অবৈধ প্যাথলজি বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি জেলা সিভিল সার্জন অফিস। শুধুমাত্র নোটিশ জারি করে দায়িত্ব সেরেছে। অবৈধ প্যথলজি সেন্টার মালিকদের সাথে সিভিল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার মাসিক লেনদেন থাকায় ৪ বছরে ও উক্ত ল্যাবসমুহ বন্ধের আদেশ র্কাযকর হয়নি বলে সচেতনমহলের ধারনা। অবৈধ ল্যব সমুহ বন্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে দাঁিড়য়েছে। অন্যতায় প্যাথলজি নামক মানুষ মারার প্রতিষ্ঠান আরো বৃদ্ধি পাবে।

পাঠকের মতামত: