ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উপকূলের ১৭ হাজার একর প্যারাবন হুমকির মুখে

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
উপকূলের ১৭ হাজার একর প্যারাবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উপকূলের লোকজন। একদিকে নিধন, অন্যদিকে মড়ক’ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, চকোরিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার প্যারাবন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ বেষ্টনি এখন ধংসের মুখে। ছোট-বড়, মাঝারি ধরনের সামুদ্রিক ঝড় থেকে উপকূলবাসীর জানমাল রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ঢাল এই প্যারাবন এখন বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের মতে, এভাবে প্যারাবন মরে গেলে সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া ও চকোরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবনে মড়ক লেগে গত তিন মাসে কয়েক লাখ কেওড়া, বাইন ও নুনিয়া গাছ মরে গেছে। পাশাপাশি নিধনের মাত্রাও গেছে বেড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আগষ্ট প্রথম দিকেই কিছু প্যারাবনে মড়ক দেখা দেয়। এখন এটি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ঝলসে যাওয়া মরা কেওড়া, বাইন ও নুনিয়ার ডালপালা নিয়ে যাওয়ার নাম করে ভালো গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা। তিন মাস আগেও যেখানে ঘনবনের মতো ছিল, এখন সে জায়গায় হাতেগোনা কয়েকটি কেওড়া দাঁড়িয়ে আছে। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তালেব বিসিক শিল্পনগরীর পাশে বিস্তীর্ণ লবণের মাঠ দেখিয়ে জানান, ওখানে ছিল ঘন কেওড়া গাছের বেড়া। এখন তা দেখলে আর কখনোই মনে হবে না ওখানে কোনো গাছের অস্থিত্ব ছিল। মহেশখালীর পশ্চিমে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা দ্বীপের সবুজ বেষ্টনির গাছ কেটে লাকড়ি হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। উপকূলীয় বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় নতুনভাবে প্যারাবন নিধন শুরু হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
মহেশখালী জেটি এলাকার নুরুল আলম জানিয়েছেন, জেটির দু’পাশে যে সবুজ বেস্টনি ছিল এতে মড়ক লেগে সব গাছ লাল হয়ে গেছে। যার ফলে সেই সৌন্দর্য্য আর নেই। বনবিভাগের কেউ এ সব নিয়ে মাথা ঘামায় না। প্যারাবনের কারণেই এই পাশে কোন ভাঙ্গন ধরে নি। এখন মানুষ উদ্বিগ্ন।
কুতুবজোমের নুরুল আমিন জানান, এই বন না বাঁচলে এই দ্বীপও রক্ষা পাবে না। ‘ঝড়-বৃষ্টি থেকে এই কেওড়া, বাইন গাছই আমাদের রক্ষা করছে। এই বন শেষ হলে আমরা কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করব?’
এদিকে প্যারাবনে মড়ক লাগার নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই দায়ী করছে কেউ কেউ। কেউ কেউ এর জন্য সমুদ্র দূষণ, পাখির সংখ্যা কমে যাওয়া এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করছে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সুত্রে জানা যায়, এখন প্রথম কাজ হলো রোগ নির্ণয় করা। এ ধরনের মড়ক আগে এত বেশী দেখা যায় নি। গাছ নিধনের ব্যাপারে তিনি জানান, এ ব্যাপারে বন বিভাগ বেশ সতর্ক। গাছ কাটা বা গাছ চুরির খবর পেলেই অভিযান চালানো হয়। ফরেস্ট রেইঞ্জার মোহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এ মড়ক লেগে থাকতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ দিয়ে যেভাবে চিংড়ি ঘের করা হচ্ছে, তাতে প্যারাবনের পানির স্বাভাবিক প্রভাব আর থাকছে না। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত কম হওয়া এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াও প্যারাবনে মড়ক লাগার কারণ হতে পারে।

পাঠকের মতামত: