ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ার চোয়াংখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ

ফারুক আহমদ, উখিয়া ॥

উখিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় চোয়াংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, সরকারি অর্থ-আত্বসাৎ, ক্লাশ ফাঁকি, বেপরোয়া আচরণ ও দস্তখত জালিয়তি করে টাকা উত্তোলনসহ নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও সচেতন অভিভাবকগণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহর পাহাড় সমান অভিযোগের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিতি অভিযোগ করার পর কোন প্রতিকার না পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল আজমের নিকট পুন:রায় অভিযোগ প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত পাল চোয়াংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা শিকার করে বলেন, প্রাথমিক ভাবে তদন্ত কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিভাবক মহল উক্ত কর্মকর্তার ধীরগতি ও রহস্যজনক তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে জালিয়াপালং ইউনিয়নের চোয়াংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ-আত্বসাৎ এবং পরিচালনা কমিটির নামে পকেট কমিটি গঠন নিয়ে সচেতন অভিভাবক মহল ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে আসছিল।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাছির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছর ২০১৫-২০১৬ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় উন্নয়ন খাতে দেওয়া ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মধ্যে কাজ না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চালচুতরির মাধ্যমে ভূঁয়া স্বাক্ষরে বিল ভাউচার জমা দিয়ে ৬০/৭০ হাজার টাকা আত্বসাৎ করেছে। সভাপতি হিসাবে এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি নতুন পরিচালনা কমিটি অর্থাৎ পকেট কমিটি গঠনের পায়তারা শুরু করে।

এদিকে পরিচালনা কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম ও মহিলা সদস্যা নুর হাবা বেগম জানান, উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার জন্য শিউর ক্যাশ একাউন্টের ছবি করার কথা বলে তার মোবাইলে ছবি ধারণ করে বিদ্যালয়ের ২১৪ পরিবার থেকে ৪৪ হাজার ৯শ ৪০ টাকা হাতিয়ে নেয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহিবুল্লাহ।

গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শ্রেণী কক্ষের শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য গত ৩ বছরে ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও নামে মাত্র শিক্ষা উপকরণ বা পূর্বকার সংগৃহিত উপকরণ দেখিয়ে সিংহভাগ টাকা আত্বসাৎ করেছে।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক জাহেদুল ইসলাম আইয়ুব আলী ও জাহেদুল আলম অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীর জন্ম সনদ ভূল হয়েছে মর্মে অজুহাত দেখিয়ে তা সংশোধনের কথা বলে ৫১ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা হারে আদায় করেছে তিনি। এছাড়াও প্রসাংশসা পত্র ও সনদ বিক্রির নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি নিয়ম লংগন করে ৪শত টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক আদায় করে। শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকজন থেকে ৫০ টাকা করে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা আদায় করলেও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে নিয়মিত ক্লাশ ফাঁকির কারণে বিদ্যালয়ের লেখা-পড়া মারাত্বক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। অফিসের কাছ আছে বলে অজুহাত দেখিয়ে সপ্তাহের প্রায় দিন উপজেলা সদরে চলে আসে। এমনিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আছে মাত্র ৩ জন। তৎমধ্যে ব্র্যাক সংস্থার পরিচালিত শিশু শ্রেণীর সহায়িকা শিক্ষক কহিনুর আক্তার মুন্নিকে দিয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত শ্রেণী কক্ষে পাঠদান দিয়ে থাকেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো তিনি অভিভাবকের প্রতি ক্ষেপে যান এবং যত লেখালেখি করে না কেন তার বিরুদ্ধে কিছুই হবে না বলে হুমকা দেয়। সচেতন এলাকাবাসী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তিমূলক বদলী সহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট দাবী জানিয়েছেন।

 

পাঠকের মতামত: