ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অতি লোভের কারণে ডিবির ৭ পুলিশ কারাগারে! পাপ গাভীন হলে এমনি হয়

এম.আর. মাহমুদ ::
কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য কারাগারে মেহমান হয়েছে। তাদের হাতে নিত্য দিন অনেক মানুষ নানা অপরাধের অভিযোগে আটক হয়ে কারাগারে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজ তারাও সে কারাগারে একই সাথে দিন কাটাচ্ছে; এরই নাম “গোপালের কপাল”। অপহরণকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে মুক্তিপণ বাবদ আদায়কৃত ১৭ লাখ টাকা সহ হাতেনাতে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর পুলিশের দায়িত্বশীল মহল হয়তো লজ্জিত। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় ব্যক্তির অপরাধের দায় পুরো পুলিশ বাহিনীর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তারপরও পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে জেলা পুলিশ ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে কোন ধরণের ছাড় দেয়নি।
কোন বাহিনীর সদস্যরা যখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তখন ওই বাহিনীর প্রধানসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কারণ “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে”। ফরিদপুরের এস.পি সুভাষ সাহা, ঢাকার সুশান্ত ও কক্সবাজারের ৭ ডিবি পুলিশ বাহিনীর মুখে চুনকালি দিয়েছে। তারা এ বাহিনীর জন্য অনেকটা ‘অসুরে’ পরিণত হয়েছে। এসব অসুরের দায় পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যদের ঘাড়ে চাপানোর কোন যুক্তিই নেই। পুলিশ বাহিনীতে অনেক সদস্য আছে, যাদের আচরণ মানবিক কর্মকান্ডে হতাশাগ্রস্থ মানুষ আশান্বিত হয়। তাদের কর্মকান্ডে সমাজে আশার আলো ছড়ায়। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম (দুখু মিয়া) অভাবের তাড়নায় প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও রুটির দোকানে চাকুরী করেছে। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় পুলিশের দারোগা রফিজ উদ্দিনের। তখন দারোগা রফিজ উদ্দিনের হাত ধরে দুখু মিয়া আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বলে তিনি হয়তো বিদ্রোহী কবি হতে পেরেছেন। এ দৃষ্টান্ত কি একটি মহানুভবতার পরিচয় নয়? আসলে প্রসঙ্গটি অবতারণা করার কারণ হচ্ছে এমন পুলিশ অফিসার বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কম নেই। এ ধরণের পুলিশ কর্মকর্তারা যুগে যুগেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কুকুর মানুষ কামড়ালে সেটি সংবাদ শিরোনাম হয় না। কোন কারণে মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সে ক্ষেত্রে সংবাদ শিরোনাম হয়। পুলিশের অপরিসীম ক্ষমতা আছে বলে অনেকে কারণে অকারণে ক্ষমতার অপব্যবহারও করে থাকে যা কাম্য নয়। কারণে অকারণে শুধু পুলিশের ছিদ্র অন্বেষণ করা ঠিক নয়। তাদের অনেক ভালো দিকও আছে। টাকা সব মানুষেরই প্রয়োজন। ভিক্ষুক থেকে কোটিপতি সবাই টাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যারা সরকারি চাকুরী পেয়েছে, তারা সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। যোগ্যতা অনুপাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পাচ্ছে তা দিয়ে সংসার চলছে। আবার দেশের অসংখ্য মানুষ সামান্য আয়ে সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু সমাজে কেউ কান্না-কাটি করে এক জোড়া স্যান্ডেল/জুতার জন্য আবার কেউ কান্না-কাটি করে একটি পায়ের জন্য। এক্ষেত্রে পা ছাড়া ব্যক্তির কান্না দেখলে স্যান্ডেলের কথা ভুলে যাওয়া দরকার।

বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ৮টি থানা রয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিবি পুলিশের ৩টি টিম দায়িত্ব পালন করে আসছে। ডিবির ৩টি টিমের মধ্যে অন্যতম ইয়াছির টিম, মনির টিম ও সুকেন টিম হিসেবে খ্যতি অর্জন করেছে। তাদের কর্মকান্ডে জেলার মানুষ অনেকটা অসহায় ছিল। তাদের অত্যাচার নিরবে হজম করলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি। ইয়াছির টিমের সদস্যরা টেকনাফের গফুরকে আটক করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়ে বিপদে পড়েছে। কারণ গফুরের ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বিষয়টি রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবিরে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের আগেই অবহিত করে রেখেছিল। যে কারণে সমূদয় টাকা সহ ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়। ডিবি টিমের অপকর্মের খবর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আমলে নেয়নি বলে পুলিশ বাহিনীর এই বিপর্যয়। কথায় আছে সংরক্ষিত বনের ১০টি গাছ কাটা গেলে বিট কর্মকর্তা দায়ী, ২০টি গাছ কাটা গেলে রেঞ্জ কর্মকর্তাও দায়ী, এর অধিক গাছ কাটা গেলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কি দায় এড়াতে পারে? পুলিশ বাহিনীর ক্ষেত্রে অনুরূপ বলা চলে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ সুশৃঙ্খল বাহিনী দিয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে আসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের পুলিশ এখন নেই। এখন তারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। কক্সবাজার জেলা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওপার থেকে হরহামেশা ইয়াবার চালান দেশে ঢুকছে। সেক্ষেত্রে টেকনাফের বেশুমার মানুষ ইয়াবা পাঁচারের সাথে জড়িত হয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনেছে। আবার সীমান্তবর্তী এলাকার সব মানুষ যে ইয়াবার ব্যবসার সাথে জড়িত তা বলা যাবে না। ভিকটিম গফুর ইয়াবা পাঁচারের সাথে জড়িত বলে অনেকেরই অভিযোগ। সে নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একজন ইয়াবা পাঁচারকারী। সেক্ষেত্রে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ভুল করেনি; প্রশংসার যোগ্য কাজ করেছে। কিন্তু আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করায় তাদের কপালে নেমে আসে এ বিপর্যয় ঘটেছে।
সেনাবাহিনীর মেজর নাজিম আহমদ ও ওই ক্যাম্পের সৈনিকদের সাহসী ভূমিকার কারণে অপহরণের শিকার গফুরের কাছ থেকে আদায়কৃত ১৭ লাখ টাকাসহ ধরা পড়েছে। সে কারণে বিষয়টি সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাগ্য চক্রে তারা ধরা নাম পড়লে এ ঘটনা কি কেউ জানত? আর প্রশাসনের নজরেও কি আসত? সেনাবাহিনীর এ মহৎ ভূমিকার জন্য মেজর নাজিম আহমদকে সারাদেশের মানুষ ধন্যবাদ জানাচ্ছে। তবে জেলা পুলিশ ডিবির ৭ পুলিশকে সুনির্দিষ্ট মামলায় আসামী করে আদালতের সোপর্দ করে আইনের আওতায় এনে একটি দৃষ্টিান্ত স্থাপন করেছে। সব কথার শেষ কথা “বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এই ধরিয়ে ঘুঘু তোরে বধিব প্রাণ।”

মাহমুদুর রহমান মাহমুদ

পাঠকের মতামত: