ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া হারবাং ফাঁড়ির এসআই আতিকের কাছে জিম্মি মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, চকরিয়া ::

বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়ের ঠিকানা পুলিশ। আর এই পুলিশই যদি বিপদগ্রস্ত মানুষকে জিম্মি করে টাকা আয় করে তখন বিচারপ্রার্থী মানুষ যাবে কোথায়। সদ্য জেলা ডিবি পুলিশের একটি টিম এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই ডিবি পুলিশের টিমকে টাকাসহ আটক করে। প্রতিদিন এরকম অনেক ঘটনা ঘটলেও তা রয়ে যাচ্ছে অজানা। সম্প্রতি এমনই কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো.আতিক উল্লাহর বিরুদ্ধে। নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে মারধর ও জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই এসআইয়ের বিরুদ্ধে। তার নানা অপকর্ম সহ্য করতে না পেরে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন খোদ ওই ফাঁড়িরই ইনচার্জ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে হারবাং এলাকার বাসিন্দা ও স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী দেবু ধর ও পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়ার বাসিন্দা প্রবাসী যুবক রিদুয়ানকে বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এসময় ওই দোকান কর্মচারীকে অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে এসআই আতিক উল্লাহ তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। পরে তার মহাজনকে ফাঁড়িতে আসতে বলে। তিনি ওইদিন রাতে ফাঁড়িতে এসে অনেক দরকষাকষির পর ১৭ হাজার টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। একইভাবে প্রবাসী যুবক রিদুয়ানের কাছ থেকেও ৩০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়।
জানা গেছে, হারবাং ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ুয়া পাড়ার এক মহিলাকে ওয়ারেন্ট আছে এমন হুমকি দিয়ে ৬ হাজার টাকা আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
একইভাবে, ওই ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী এক যুবককে ৭৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করে। পরে তার পরিবারের কাছ থেকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করে।
অপরদিকে, একই ইউনিয়নের গয়ালমারার এলাকার যুবক মুনির একটি মামলায় জামিনে রয়েছে জানার পরও ওই মামলায় ওয়ারেন্ট আছে দাবি করে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। কিন্তু মুনির জামিনের কপি দেখালেও নাছোড়বন্দা এসআই আতিক তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা আদায় করে।
শুধু এই নয়। তার বিরুদ্ধে সড়কে টহল দেয়ার সময় যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী দেবু ধর বলেন, প্রতিদিনের মতো চাকুরি শেষে লোহাগাড়া থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। ওইদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে বরইতলী রাস্তার মাথা এলাকায় গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে একদল পুলিশ আমাকে আটক করে। ওইসময় পেকুয়ার এক যুবককেও আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এসময় ওই পুলিশের এসআই আতিকউল্লাহ আমার হাতের আঙ্গুলে থাকা একটি স্বর্ণের রিংও খুলে নেয়।
তিনি বলেন, ফাঁড়িতে নেয়ার পর আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে পারবো না বলে জানালে সে আমাকে মামলায় ফাঁসনোর হুমকি দেয়। পরে ওই পুলিশ অফিসার আমার মহাজনকে ফোন করে ফাঁড়িতে ডেকে এনে ১৭ হাজার টাকা নেয়ার পর ছেড়ে দেন। একইভাবে আমার সাথে ফাঁড়িতে আনা প্রবাসী যুবকের কাছ থেকেও ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে বলে শুনেছি।
হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.মিরানুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এসআই আতিক উল্লাহর ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ না করায় কিছু করতে পারছি না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা পত্রিকায় যত লেখালেখি করুন না কেন কোন কাজ হবে না।
স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ও প্রবাসী যুবককে আটক করে টাকা আদায়ের ঘটনাটি অস্বীকার করে এসআই আতিক উল্লাহ বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনার কথা আমার জানা নেই। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইসি সাহেব আমার ব্যাপারে কেন পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন ওনার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (তদন্ত) মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমরাই যদি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করি সেটা খুব দু:খজনক। ফাঁড়ির এসআই আতিকউল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আমি পেয়েছি। তাকে অনেকভাবে বলেছি অবৈধ কর্মকা– থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনছেন না।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। পুলিশ সুপার আবেদনটি চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো.মতিউল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে শুনেছি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো.মতিউল ইসলাম বলেন, এধরনের কোন কপি এখনো আমার কাছে আসেনি। আমি এখন টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছি।

পাঠকের মতামত: