ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা ভূঁয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতি কৌশলে অন্তত দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে মোহাম্মদ ফারুক দেওয়ান নামে এক ভূঁয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি এই প্রতারণায় দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ব্যবহার করেছেন নিজ স্ত্রী ও সন্তানদের। ইতোমধ্যে ওই ভূঁয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের চক্রের খপ্পরে পড়ে পথে বসেছে স্বল্প ও মাঝারী পুঁজির অনেক ব্যবসায়ী।
ভুক্তভোগীদের সুত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ ফারুক দেওয়ান নিজেকে সেনা বাহিনীর ওএসডিতে থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয়ে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে স্বপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলেন (স্ত্রী পরিচয়ে) কানিজ, ছেলে রূপম ও মেয়ে জুজু। প্রথমে ওঠেন কলাতলীর আবাসিক হোটেল উইন্ডো টেরিসে। এরপর নিসর্গ, হোটেল সী-গাল, হাইপেরিয়ান সী-ওয়েভ-এ ভাড়া থাকেন। এ সময়ে তিনি শহরের কলাতলীর রয়েল বীচ রিসোর্ট এবং ইনানীর রিমঝিম লা-বেলা রিসোর্ট কোটি টাকায় কিনবে বলে হোটেল মালিকদের সঙ্গে মৌখিক কথাবার্তাও চুড়ান্ত করেন। চেক ও নগদ টাকার লেনদেনও হয়। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য জাহাজ কেনার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট থেকে কোটি টাকার ওপর নেয় এই প্রতারক।
সুত্রে আরো জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর রয়েল বীচ রিসোর্ট বায়নার কাগজপত্র প্রস্তুত করার জন্য শহরের বাহারছড়ার কামাল উদ্দিন নামক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে সবাইকে আশ্বস্থ করেন। আগামী ২০ ডিসেম্বর তিনি মেজর জেনারেল পদোন্নতিও পেতে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন ব্যক্তিদের জানিয়েছেন। ইত্যবসরে মিশন সফল করে গা ঢাকা দেয় ভূঁয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দম্পতি। সবাইকে বোকা বানিয়ে দেড় কোটির টাকার ওপরে হাতিয়ে নেয়।
মোহাম্মদ ফারুক দেওয়ানের ভোটার আইডিকার্ড অনুসারে ঠিকানা ঢাকার নয়াপল্টন, বাড়ী নম্বর-২০/এ। তার পিতারনাম নিহাল দেওয়ান। মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ২৬৯৬৫৩৬০৯১২৫৭। মোবাইল নং-০১৭৮৫৬৪৯৪২১।
প্রতারণার শিকার অসংখ্য ব্যক্তির মধ্যে একজনের নাম মোহাম্মদ আবদুল গফুর। তিনি শহরের দক্ষিণ কলাতলী এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুল হালিমের ছেলে।
মোহাম্মদ আবদুল গফুর বলেন, মোহাম্মদ ফারুক দেওয়ান নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিয়ে আমার মালিকানাধীন পাহাড়তলী এলাকার জায়গায় নিজ অর্থে ভবন করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আমার নিকট থেকে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা নেয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নেয় অন্তত ৫০ লাখ টাকা। আমার সমস্ত সহায় সম্পত্তি বিক্রি ও ধারদেনা করে তাকে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। টাকাগুলো নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন। ফোনেও পাচ্ছিনা। ভোটার আইডির ঠিকানা মতে গিয়েও হদিস মেলেনি। এখন আমি রিক্তশুণ্য।
একইভাবে কক্সবাজারে কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি হোটেল কিনবে, পেট্রোল পাম্প কিনবে, সেন্ট মার্টিনে জাহাজ দিবে, কয়েটটি নামিদামি ভবন করবে ইত্যাদি মিথ্যা আশ্বাসে মহেশখালীর আবুল আলা মোহাম্মদ ফারুক, শহরের বিডিআর ক্যাম্পের রাশেদুল ইসলাম রাশেদসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত ১৯ অক্টোবর গাড়ি আনার কথা বলে প্রতারণার শিকার ফারুক ও রাশেদকে ঢাকাতে নিয়া গিয়া যমুনা ফিউচার পার্কে তাদেরকে বসিয়ে রেখে উধাও হয়ে যায়। ব্যবহারের মোবাইলটিও (০১৭৮৫৬৪৯৪২১) বন্ধ করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ডঃ একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, এত বড়মাপের পরিচয়ধারী এক ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন করতে সতর্কতা অবলম্বন উচিত ছিল। লেনদেনকারীরা বোকামির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক ধরণের প্রতারকচক্র বাজারে সক্রিয় আছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এরপরও লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

পাঠকের মতামত: