ঢাকা,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

রামুর কৃষক আনোয়ারুল হকের বাগানে মাল্টার বাম্পার ফলন

maltaসোয়েব সাঈদ, রামু ::

বাড়ির সামনের পরিত্যক্ত জমিতে করেছেন মিশ্র ফলের বাগান। যেখানে চলতি মৌসুমে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড়ি ভিটে বাড়ির চারপাশে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহ। এরমধ্যে একপাশে করেছেন বাঁশের চাঁষ। অপর তিনপাশে রয়েছে মসলা, ঔষুধি, ফলজ নানা প্রজাতির গাছ। পালন করছেন দেশী-বিদেশী প্রজাতির গরু। পুকুরে মাছের চাষ। রয়েছে হাঁস-মুরগীর খামার। দুই একর জমিতে করেছেন আমন চাষাবাদ। বহুমুখি কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে সফলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন রামুর আদর্শ কৃষক আনোয়ারুল হক।

আনোয়ারুল হক (৬০) রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মইশকুমপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোছনের ছেলে। দীর্ঘদিন তিনি কৃষি কাজের মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক জোগান দিয়ে আসছেন। বহুমুখি কৃষিতে সফলতার কারনে তিনি পুরো উপজেলায় যেমন পরিচিতি লাভ করেছেন। তেমনি কৃষি বিভাগেও সফল কৃষক হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আনোয়ারুল হক সফল হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর মিশ্র ফল বাগানে মাল্টার ফলন নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আনোয়ারুল হকের বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে মাল্টার।

রামু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে আনোয়ারুল হক কৃষি বিভাগের সহায়তায় মিশ্র ফল বাগানের কাজ শুরু করেন। এক একর জমিতে মিশ্র ফল বাগানে প্রায় ৪ শতাধিক ফলের গাছ রয়েছে। এরমধ্যে মাল্টা, পেপে, জাম্বুরা, লেবু, সপেদা, কলা, জলপাই, বেল, আম, কাঁঠাল, পেয়ারা সহ আরো কয়েক প্রজাতির ফলজ গাছও রয়েছে। এসব গাছের অধিকাংশতেই ফলন এসেছে। এরমধ্যে মিষ্টি স্বাদের মাল্টার ব্যাপক ফলনেই হাসি ফুটেছে কৃষক আনোয়ারুল হকের মুখে।

আনোয়ারুল হক জানান, প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত মাল্টার ফলন হয়েছে। এসব গাছের বয়স এখনো মাত্র দুই বছর। আগামীতে এ ফলন আরো অনেক বাড়বে। চলতি মৌসুমে তিনি মাল্টা বিক্রি করে যেমন লাভবান হয়েছেন, তেমনি পরিবার এবং পরিজনের চাহিদাও পূরণ করতে পেরেছেন। স্বাদ মিষ্টি হওয়ায় তাঁর বাগানের মাল্টার চাহিদা অনেক বেড়েছে।

তিনি আরো জানান, এ বাগানের সফলতা তাঁর একার নয়, এর পেছনে কৃষি বিভাগেরও অবদান অনেক বেশী। বাগান করার পরামর্শ থেকে শুরু করে বিনামূল্যে চারা, সার, স্প্রে মেশিন, সী-কেচার, বীজ, কীটনাশক সহ অনেক প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাঁকে দিয়েছে।

কৃষক আনোয়ারুল হক, ১৫ বছরেরও বেশী সময় গরু লালন-পালন করে আসছেন। বর্তমানে তাঁর দুটি গোয়াল ঘরে দেশী-বিদেশী প্রজাতির ৫টি গরু রয়েছে। মোটা তাজাকৃত গরু এবং দুধ বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন।

পাহাড়ি বসত ভিটের ৪০ শতক জায়গায় রয়েছে বাশ বাগান। প্রতিবছর তিনি এ বাগান থেকে ৫০ হাজার টাকারও বেশী বাশ বিক্রি করেন। বসত ভিটের চারপাশেও রয়েছেন নানান প্রজাতির গাছের সমাহার। এরমধ্যে মসলা, ঔষুধি গাছ ছাড়াও রয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লটকন, ডালিম, জলপাই সহ অনেক প্রজাতির ফলের গাছ।

বাড়ির পেছনে একটু দূরে তাকাতেই চোখে পড়লো আনোয়ারুল হকের পুকুর। তিনি জানান, এ পুকুরে মাছ চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বসত ভিটায় দুপাশে রয়েছে হাঁস-মুরগী লালন-পালনের দুটি ঘর। যেখানে দেশী প্রজাতির হাঁস-মুরগী থাকে বছরজুড়ে। এখান থেকেও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হন তিনি।

চলতি আমন মৌসুমে দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছেন আনোয়ারুল হক। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকা সামাজিক বনায়নেও অংশীদারিত্ব রয়েছে আনোয়ারুল হকের।

আনোয়ারুল হক জানান, তিনি নিজে সারাদিন এসব কৃষিকাজে শ্রম দেন। আবার দৈনিক ৪/৫জন শ্রমিকও রাখতে হয়। বর্তমান অবস্থা থাকলে তার কৃষিক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।

সম্প্রতি আনোয়ারুল হকের মিশ্র ফল বাগান দেখতে যান রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি। তিনি জানান, এ বাগানের মাল্টার স্বাদ বাজারের প্রচলিত মাল্টার চাইতে মিষ্টি। আনোয়ারুল হক একজন সফল ও উদ্যোমী কৃষক। তাঁকে অনুসরণ করলে কৃষিক্ষেত্রে অন্যরাও সফলতা পেতে পারে।

রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মাসুদ সিদ্দকী জানান, আনোয়ারুল হক একজন আদর্শ কৃষক। তিনি নিজের মেধা এবং শ্রমের মাধ্যমে মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁর মতো অন্যান্য কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হলে বর্তমান বাজারে মাল্টার চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। এখনকার মতো বিদেশ থেকে আর মাল্টা আমদানি করতে হবে না। পাশাপাশি এসব মাল্টা সঠিক পুষ্টির যোগান দেবে এবং কৃষকের আর্থিক সংকট দূর করতে সহায়ক হবে।

তিনি আরো জানান, মিশ্র ফল বাগান, ঔষুধি ও মসলা জাতীয় গাছ, গরু ও হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, বাশ বাগান, ধান চাষের মাধ্যমে আনোয়ারুল হক নিজেকে আদর্শ কৃষক হিসেবে গড়তে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন তাঁর মাল্টাসহ মিশ্র ফল বাগান দেখার জন্য লোকজন সেখানে ছুটে যাচ্ছে।

সফল কৃষক আনোয়ারুল হক জানান, কৃষি কাজের মাধ্যমে প্রতিবছর তিনি ৬ লাখ টাকার বেশী আয় করেন। আগামীতে তা আরো বাড়বে। তিনি ৩ ছেলে, ১মেয়ের জনক। এরমধ্যে ছোট ২ছেলে সৌদি প্রবাসী এবং বড় ছেলে পল্লী চিকিৎসক। তিনি জানান, কৃষি কাজে আর্থিক লাভ আর মানসিক তৃপ্তি দুটোই আছে। তিনি ভবিষ্যতে তার চলমান কৃষিকাজ বৃহৎ পরিসরে করার পরিকল্পনা করছেন। এজন্য তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: