ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকেট কালোবাজারে

তুষার তুহিন :
যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কক্সবাজার ভেন্যুর ভিআইপি টিকেট বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। পাঁচশত থেকে দুইশত টাকায় এসব টিকেট পাওয়া যাচ্ছে সমুদ্র পাড়ের ক্রিকেট স্টেড়িয়ামের আশেপাশে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার লোকজনের কাছে।
সূত্র জানায়, ২৯ জানুয়ারি স্কটল্যান্ড- নমমিবিয়া ম্যাচের মধ্যে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে নাম লিখিয়েছে সমুদ্র পাড়ের শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়াম। কিন্তু ইতিহাসের ওইমুহুর্তের স্বাক্ষী হতে পারেনি কক্সবাজার জেলার ক্রীড়াপ্রেমীরা। নির্মাণাধীন ওই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১৬ শত। সীমিত ধারণ ক্ষমতার অজুহাতে এই মাঠে এবারের আসরের  ১৮ টি খেলার কোন টিকেট বিক্রি করা হয়নি। ফলে ক্রিকেট প্রেমীরা বঞ্চিত হয়েছেন বিশ্বকাপের খেলা দেখা থেকে।
বিসিবি সূত্র জানায়, কক্সবাজার ভেন্যূর ধারন ক্ষমতা কম থাকার এবারের টিকেটগুলো ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব টিকেট কক্সবাজার ভেণ্যু ম্যানেজার রতন ও বিসিবির কক্সবাজার প্রতিনিধি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীলদের হাতে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল জেলার রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্য বণ্টন করার জন্য। অথচ বিসিবির পক্ষ থেকে টিকেট বন্টনের দায়িত্ব পাওয়া দলটি টিকেট নামমাত্র কয়েকজনকে দিয়ে বাকি টিকেট বিক্রি করেছেন কালোবাজারে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, তিনি শুনেছেন ভিআইপির জন্য টিকেট বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু  তিনি কোন টিকেট পাননি। কারা পেয়েছেন তিনি জানেন না। তবে কালোবাজারে টিকেট বিক্রি হচ্ছে বিভিন্নজনের কাছ থেকে তিনি তথ্য পেয়েছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৬ শত কার্ডের অধিকাংশ টিকেট বিক্রি হয়েছে কালোবাজারে। এছাড়া পেয়েছেন বন্টনের দায়িত্ব থাকা লোকজনের আতœীয়-স্বজনরা। প্রতিদিনের টিকেটের মাত্র শখানেক টিকেট পৌঁছেছে ভিআইপিদের হাতে। এ কারণেই ভিআইপি টিকেট পাননি জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা, কক্সবাজার সিভির সোসাইটির নেতারা। এমনকি কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট খেলোয়াড়ের অধিকাংশই নাগাল পাননি টিকেটের।
রোববার সকাল ৯ টায় বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড ম্যাচের আগ মুহুর্তে শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামের সামনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে ক্রিকেট প্রেমীদের ভিড়। আর ভিতরে হাতেগোনা কয়েকজন ভিআইপি।  এমন সময় নীল টি শার্ট পরিহিত কক্সবাজার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই কর্মচারী বাইরে আসেন। তারা ক্রিকেট প্রেমী বিভিন্নজনের কাছে ৫ শত টাকা করে টিকেট বিক্রি করেন। এর ঘন্টা খানেক পরে আবারো তারা এসে টিকেট মূল্য কমিয়ে ৩শত টাকা হারে টিকেট বিক্রি করেন। এভাবে খেলা শেষ হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দাম কমিয়ে কয়েকদফা টিকেট বিক্রি করেন ওই দুই যুবক।
এসময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নাম বলেন না। বলেন তারা দুজনেই স্টেডিয়ামের কর্মচারী। তাদেরকে ভেণু ম্যানেজার রতন টিকেটগুলো বিক্রি করতে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কক্সবাজার ভেণ্যু ম্যানেজার রতন চৌধুরীর সাথে কয়েকদফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে স্টেডিয়ামে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের সামনের ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ওই স্টেডিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত শহরের এক যুবক ৩ ফেব্রুয়ারি ম্যাচের টিকেট বিক্রি করছিল।
এছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্নজনকে দিয়ে কালো বাজারে টিকেট বিক্রি করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কালোবাজার থেকে টিকেট সংগ্রহকারী রিপন জানান, জেলা ক্রীড়া লেখক সমিতির এক নেতার কাছ থেকে তিনি পাচশত টাকার বিনিময়ে ৩ ফেব্রুয়ারির ম্যাচের টিকেট সংগ্রহ করেছেন।
তবে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি অনুপ বড়–য়া অপু জানান, বিসিবি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে কোন টিকেট দেননি। তাদের বিসিবির কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রতিটি খেলার জন্য ২০ টি করে টিকেট  দিয়েছেন। এছাড়া তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের টিকেট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে না। এটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
বিসিবি’র কক্সবাজার প্রতিনিধি মাহামুদুল করিম মাদু জানান,  তাকে বিসিবির পক্ষ থেকে প্রতিটি খেলার জন্য ৬ শত কার্ড দেওয়া হয়েছে। এসব কার্ড তিনি কক্সবাজার ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে, কক্সবাজার ক্রীড়া লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদককে, রাজনৈতিক নেতাদের ও তার সাথে যোগাযোগ করেছেন এমন ভিআইপিদের মধ্যে বন্টন করেছেন। তার পক্ষ থেকে কোন ধরনের কার্ড বিক্রি করা হয়নি। যদি কোন ভিআইপি কার্ড না পেয়ে থাকেন তবে তার সাথে যোগাযোগ করলে তাকে কার্ড দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: