ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

স্ত্রীর মর্যাদা প্রতিষ্টায় প্রতারক প্রেমিকের বিরুদ্ধে আদালতে প্রেমিকার মামলা

kutubdia picমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::

দীর্ঘ পনের বছর প্রেম করে বিয়ের নামে প্রতারণা করায় স্ত্রীর মর্যাদা প্রতিষ্টায় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া আদালতে প্রতারক প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রমিকা! এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে, কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের হায়দার পাড়া গ্রামেু। আদালতে দায়েরকৃত মামলার সূত্রে জানা যায়, ওই হায়দার পাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মোনাফের কনিষ্ট কন্যা নার্গিসের সাথে একই গ্রামের মাস্টার সাইফুল্লাহ খালেদের পুত্র মোস্তাফা মোর্শেদ বিন রিপনের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের স্বীকৃতি সরূপ আনুষ্ঠানিক বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে প্রেমিক রিপনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, কক্সবাজারে একটি (সি.পি-৫৭২/১৭) মামলা দায়ের করে পিতা-মাতাহীন নার্গিস।

 একই বিষয়ে কুতুবদিয়া আদালতে দায়ের করা (সিআর-১৪৫/১৭) একটি মামলার প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা খুজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছৈয়দা মেহেরুন্নেছা। তিনি জানান, গত ৩০ এপ্রিল বিচারের ধার্য্য তারিখে উভয় পক্ষকে তাঁর কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। ওই দিন বাদী পক্ষ গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষসহ স্বাক্ষী নিয়ে হাজির হলেও বিবাদী পক্ষে রিপনের বড় ভাই মাহবুব মোর্শেদ অভিযোগ মিথ্যা বলে একটি লিখিত জবাব দেন। এরপর তিনি এলকায় গিয়ে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে নার্গিস ও রিপনের মধ্যে দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের সত্যতাও খুঁেজ পান।

 এলাকাবাসীরা জানায়, নার্গিস ও রিপনের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় রিপন নিয়িমিত নার্গিসের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। যা এলাকার সবাই জানে। নার্গিসের পরিবারের লোকজনও রিপনকে জামাই হিসেবে আদর-আপ্যায়ণ করত। নার্গিসের বাড়িতে আসা-যাওয়ার বিষয়ে এলাকাবাসী রিপনকে জিজ্ঞাসা করলে সেও নার্গিসের হবু স্বামী বলে দাবী করত। কিন্তু রিপনের এ দাবী শেষ পর্যন্ত পূরণ না হওয়ায় তাকে স্বামী হিসেবে পেতে আদালতে মামলা করেছে নার্গিস।

 এ বিষয়ে মামলার বাদী নার্গিসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রিপনের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘ ১৫ বছরের। গত ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রেুয়ারী রিপনের ফুফুর বাড়িতে রিপনের ছোট ভাই মিঠু, ফুফাতো ভাই হামিদ ও ফুফাতো বোনের স্বামী মোক্তার আহমদের উপস্থিতিতে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে। সেদিন থেকেই রিপনের সাথে আমি দাম্পত্য জীবন শুরু করি। আমি রিপনকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। আমি তাকে (রিপন) সব কিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমার ভাইদের টাকাও। আমার ভাইয়েরা পরিবারের জন্য বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠাতো তার অর্ধেক টাকা আমি তাকে (রিপন) দিয়েছি। অনুমান ৯ লাখ টাকারও বেশি হবে।

 কান্নাজড়িত কন্ঠে নার্গিস আরো বলেন, ‘তারপরও আমি তাকে (রিপনকে) স্বামী হিসেবে পেতে চেয়েছি। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর আমার স্বত্ত্বীয় ৯ গন্ডা জমি জনৈক আবু ছৈয়দকে বন্ধক দিয়ে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়েছি রিপনকে। যা এলাকার অনেকেই জানে। আমি যখন গর্ভবতী হয়ে পড়ি তখন আমার বাড়ি থেকে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে রিপনকে বুঝিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে কথা আমি রিপনকে বললে সে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে। তার এমন কথা শুনে আমি কিছু ভেবে উঠতে না পারায় দিশেহারা হযে যাই। পরে রিপনের কৌশল বুঝতে না পেরে গর্ভপাত করায়। কিন্তু তারপরও কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে আমি পুনরায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপনের বাড়ি অর্থাৎ আমার শশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে রিপন আমাকে অস্বীকার করে এবং এতদিন যা হয়েছে তা সব অভিনয় বলে জানায়। সে বলে, যে বিবাহ সে দিন (২০১৬ সালের ১০ ফেব্রেুয়ারী) সম্পন্ন হয়েছিল, তা বিবাহ নয়, পুতুল খেলা। সে দিন যে ব্যাক্তি কাঁজী (মোক্তার আহমদ) সেঁজে ছিল সে কাঁজী নয় তার (রিপনের) ফুফাতো বোনের স্বামী। আর যিনি মৌলভী সেজে আকদ পাঠ করেছেন তিনি রিপনের ফুফাত ভাই। ওই দিন রিপনের এমন কথা শুনে আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি আমি। রিপন সেই দিন থেকে পলাতক। শুনেছি এখন সে এখন ককক্সবাজার থাকে। আইয়ুব নামের এক ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে। আমি তাকে এখনো ভালোবাসি। তাকে স্বামী হিসেবে কাছে পাওয়ার জন্য আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। তার সম্মানহানী করতে নয়।

পাঠকের মতামত: