ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামা ফাঁসিয়াখালীতে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ ও কাটছে পাহাড়

পেপপপপপপমোস্তফা কামাল, ডুলাহাজারা ::

পার্বত্য বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটা গুলোতে নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ, অন্যদিকে পাহাড় কেটে ইট তৈরির উপকরণ যোগাড় করা হচ্ছে।

এতে করে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল অন্যদিকে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। স¦র জমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ইট ভাটায় বোল্টড্রোজার দিয়ে রাত দিন পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে পরিবেশ বিপন্নকারী ইটভাটার মালিকরা ইটভাটাগুলো কোন ধরণের বৈধতা না নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর পাহাড় কেটে, কাট পুড়িয়ে ইট তৈরি করে আসছে। এতে প্রশাসন, বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রহস্য জনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সনাতন পদ্ধতির ইট ভাটার মাধ্যমে অতি মাত্রায় পরিবেশ দুষণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, লামা ফাঁসিয়াখালীর অবৈধ ইটভাটাগুলোতে সরকারী সংরক্ষতি বনের কাঠ পুড়ে ও পাহাড় কেটে ইট তৈরির কাজ চালাচ্ছে। এসব ইটভাটার কোনটিরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা স্থানীয় প্রশাসনের লিখিত কোন অনুমতি নেই। এছাড়া বড়-বড় ট্রাক দিয়ে ইট পরিবহণের ফলে সরকারী অর্থে নির্মিত রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ ও কালভার্ট ভেঙ্গে যাতায়তে জন দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তারা আরো জানান, এভাবে যদি চলতে থাকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকা পুরোপুরি মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। ইটভাটাগুলোর মালিক ও স্থান হচ্ছে, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইয়াংছা কাঁঠালছড়া নামক এলাকায় আবদুর রশিদ কোম্পাঃ ১টি, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বগাইছড়ি/মালুম্মা এলাকায় চনছুমিয়া ও নাজেম উদ্দিন কোম্পানির শেয়ারে ১টি এবং ১ন ওয়ার্ড সাপের গাড়া কাগজীখোলা নামক এলাকায় বিশিষ্ট শিল্পপতি নাজমুল হক চৌধুরী (পিয়ারু) কোম্পানির ১টি, মোট ৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। বিশেষ সুত্রে জানা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এসব ইটভাটা গুলোতে বনের কাট পুড়া ও পাহাড় কাটায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। অপর দিকে পরিবেশ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইন, ১৯৮৯ (সংশোধনী ২০১৩) এ উল্লেখ করা হয়, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, উপজেলা সদর, সরকারী বা জলাভূমি কৃষি প্রদান এলাকা এবং পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। উল্লেখিত এলাকা সমূহে ইটভাটা স্থাপন করলে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের বিদান রয়েছে। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ এর ৪নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে স্কুল বা যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ মাইলের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। ৫নং ধারাতে উল্লেখ আছে, কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইট তৈরি করা যাবেনা। যদি করা হয় ৬নং ধারা মতে ৩ বছর কারাদন্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। ১৬ নং ধরাতে বলা আছে ধারা ৬ এর মতে ৩ লাখ টাকা জরিমানা ৩ বছর কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনে এসব বিধান থাকলেও এই আইন মানছেনা উক্ত ইটভাটার মালিকরা। পরিবেশ সচেতন লোকজন বলছেন, কয়লার পরিবর্তে অবাধে কাঠ পুড়ানোর সুযোগ পেয়ে ইটভাটার মালিকরা বনের গাছ-পালা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারে বেশী উৎসাহী। ইট ভাটায় জ্বালাণীর চাহিদা মেটাতে সরকারী বে-সরকারী পর্যায়ে সৃজিত বনজ, ফলজ বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। জেলা প্রশাসনের মতে বান্দরবানের লামা উপজেলায় কোন বৈধ ইট ভাটা নেই। যারা ইট ভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চালু রেখেছে সবই অবৈধ।

পাঠকের মতামত: