ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদা দিয়েই চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার উৎসব

pahar-kataকক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারে কোন মতেই থামানো যাচ্ছেনা পাহাড় কাটা। ফলে বৃষ্টি হলেই কোন না কোন এলাকায় ঘটছে পাহাড় ধস। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অথচ বন বিভাগ- পরিবেশ অধিদপ্তর- এবং প্রশাসন কে মাসোহারা দিয়েই চলছে নির্বিচারে এ সব পাহাড় কাটা। বর্ষা , গ্রীষ্ম , পাহাড় ধস, কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেনা উক্ত শক্তিশালী চক্র। শহরের কলাতলি, লাইট হাউজ, ঘোনার পাড়া, টার্মিনাল এলাকা, রামুর ১১টি পয়েন্ট রাজারকুল, মিঠাছড়ি, কাইম্যারঘোনা, কচ্ছপিয়া কোন পয়েন্ট বাদ যাচ্ছেনা উক্ত পাহাড়ঁেখকোদের কবল থেকে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা, পাহাড় কাটা বন্ধের নোটিশ, স্থানিয় প্রশাসনের সকল বাধা ডিঙ্গিয়ে দেদারছে পাহাড় কাটছে চক্রটি। সদর উপজেলা ও রামুর ১৭টি স্পটে ৪০টি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে চক্রটি। পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে ডাম্পারের মালিক হয়েছে এ সিন্ডিকেটের ৬ জন। গত ২৫ জুলাই লাইট হাউজ ও কাইম্যার ঘোনার পাহাড় ধসের কারনে ৪ জনের মৃত্যুর আগে দুই স্পটেই পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করেছে এ চক্র। ফলে পাহাড় ধস ও ৪ জনের মৃত্যুর জন্য উক্ত চক্রকে দায়ি করছেন স্থানিয়রা। প্রতিদিনই হরদম চলছে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি। সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা ,পরানিয়াপাড়া, জুমছড়ি, কাঠালিয়ামুরায়। এ ছাড়া তোতকখালী, খুরুস্কুলের তেতৈয়া, তাহের মোহাম্মদের ঘোনা, মুহসিনিয়া পাড়া, ধাওনখালীর ঘোনার পাড়া, ছনখোলার মালি পাড়া, ডিগিরঘোনার বিট, তোতকখালী বিট, পিএমখালী সদর বিটের ১৭টি স্পটে বিনা বাধায় চলছে এ পাহাড় কাটা। রাত দিন হরদম পাহাড় কাটলে ও অজ্ঞাত কারনে বন্ধ করা যাচ্ছেনা পাহাড় কাটা। মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালিত হলেও মাঠেই টাকার কাছে অসহায় আত্মসর্মপণ করে র্দূনীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারনে। আবার বন বিভাগের নিচু সারির কয়েকজন কর্মকর্তা সিন্ডিকেট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোক দেখানো অভিযানের কারনে উল্টো পাহাড় কাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে শুধুমাত্র পাহাড়ের মাটি বিক্রি করেই ২/৩টি ডাম্পারের মালিক হয়েছে।
নির্বিচারে পাহাড় কাটা নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় ৩ মাস আগে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ জগলুর রহমান এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তৎকালিন কর্মকর্তাসহ একটি টিম পিএমখালীর ভয়াবহ পাহাড় কাটা পর্যবেক্ষন করেন। তিনি সিন্ডিকেট প্রধানদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ দিলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। সদরের সবচেয়ে আলোচিত মোবাশ্বের- ওবাইদুল সিন্ডিকেট তাদের পাহাড় কাটা ১ মাস বন্ধ রেখে পুনরায় পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে। ফলে পুনরায় পাহাড় ধস হয়ে বিশাল ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। কোন প্রশাসনের বারণ নির্দেশনা তাদের থামাতে পারেনি ৩ বছরে ও । মামলা , প্রশাসনের কোন আইন যেন তাদের কাছে মামুলি ব্যাপার।
পাহাড় কাটা বন্ধের বিষয়ে পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা উজ্জ¦ল কান্তি মজুমদারের বক্তব্য হল, আমি বিজিবি, সদর ইউএনও, স্থানিয় চেয়ারম্যানকে পাহাড় কাটা বন্ধের জন্য সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন সহযোগিতা পায়নি। পাহাড় কাটা বন্ধে সিন্ডিকেট প্রধান মোবাশ্বেরকে চিটি দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি বলেও উক্ত কর্মকর্তা জানান। রেঞ্জ কর্মকর্তা আরো জানান, পিএমখালীর মানুষ ভালো না, তারা সহযোগিতা করেনা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়া বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, বললেই তো হবেনা, চেষ্টা করছি, তাছাড়া আমি টাকা খায়না, তায় পাহাড় কাটা বন্ধ করতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হলেও মাঝে মধ্যে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালালে ও আসামি হয় ডাম্পারের শ্রমিকরা। তবে মোবাশ্বের- ওবাইদুল ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেট প্রতি মাসে যৌথভাবে টাকা উত্তোলন করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের ৩ জন কর্মকতার্কে মাসোহারা দেওয়ার কারনে কোন মতেই থামানো যাচ্ছেনা এ পাহাড় কাটা।
দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ ডাম্পার দিয়ে পাহাড় কাটায় আলোচিত সিন্ডিকেটের অন্যতম হলো কক্সবাজার সদরের পরানিয়াপাড়ার ওবাইদুল, নয়াপাড়ার নাসির, মোহাম্মদ আলম, কলাতলির সুমন, ডিকপাড়ার আমান, বাংলাবাজারের মনসুর, ঝিলংজা মৌলভীপাড়ার মোবাশ্বের,আমিন কোম্পানি, নয়াপাড়ার আবদুল্লাহ, হারুন, জানার ঘোনার সজল , জয়নালসহ ১৪/১৫ জনের বিশাল সিন্ডিকেট।
পাহাড় কাটা বন্ধ বিষয়ে পিএমখালীর চেয়ারম্যান মাষ্টার আবদুর রহিম জানান,পাহাড় কাটা বন্ধে কমিটি করা হয়েছে এবং আমাকে সভাপতি করা হয়েছিল কিন্তু যারা পাহাড় কাটে তারা প্রভাবশালী কোন বাধা মানেনা ,তাই আমি কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় সরে গেছি। তবে আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা কারো কথা শুনেনা । আমি উপজেলা আইন শৃংখলা মিটিং এ তা তুলেছিলাম। বনকর্মীদের সামনে থেকেই ডাম্পার নিয়ে মাটি ভর্তি করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা কিছুই করছেনা। আমার এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে ও জানান চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা আকরাম আলীর দায়িত্বকালে পিএমখালীতে পাহাড় কাটা নিয়ে ১৯টি মামলা হয়েছে। মামলায় ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ৬০/৭০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পাহাড় কাটার ২২টি যন্ত্রপাতি এবং ৪টি ডাম্পার আটক করা হয়।
এদিকে বন বিভাগের মাসোহারার কারনে তথা রক্ষকগন ভক্ষকের ভুমিকায় অবর্তীন হওয়ার কারনে উত্তর ও দক্ষিন বন বিভাগের উচু পাহাড় আজ বিরান ভুমিতে পরিনত হচ্ছে। শুধুমাত্র পি এমখালী রেঞ্জের ৪টি বিটের ৩৪ টির মত পাহাড় এখন বিরানভূমি।। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ এবং কিছু অসাধু প্রভাবশালী মিলে একাকার হয়ে পাহাড় কেটে বিরানভুমি করার কারনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে স্থানিয়দের অভিযোগ। সর্ষে ভূত থাকার কারনে পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছেনা কোন মতেই। পুরো জেলা জুড়ে বিশাল এবং চিহ্নিত সিন্ডিকেট ৩ বছর যাবৎ পাহাড় কাটলেও প্রশাসন কোন মতেই থামাতে পারছেনা শুধুমাত্র বন বিভাগের চিহ্নিত মাসোহারা নেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার কারনে। ধরাকে সরা জ্ঞান করা উক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বেপরোয়া হয়ে পাহাড় কাটছে এ সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করছেন পাহাড় ধসের আশংকায় থাকা বসবাসকারিরা।

পাঠকের মতামত: