ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

লামায় দুর্গম পাহাড়ের অর্ধলক্ষাধিক হতদরিদ্র ‘ওএমএস’র’ সুবিধা বঞ্চিত

Lama-OMS-Photo_1লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলো সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ওএমএস’র সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শুধু মাত্র পৌরসভা এলাকার তিনটি স্থানে ওএমএস’র চাল বিক্রি করা হচ্ছে। চালের ডিলার শুধু পৌরসভা এলাকায় দেওয়ায় উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি ৭টি ইউনিয়নের হতদরিদ্র অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক দেয়া হচ্ছে আতপ চাল। অথচ এলাকায় সিদ্ধ চালের চাহিদা রয়েছে ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০% আতপ চালের। এতে করেও পৌর এলাকার ৭০ভাগ মানুষ এ সুবিধা ভোগ করতে পারছেনা। তারা আতপের পাশাপাশি সিদ্ধ চালও সরবরাহ সহ ইউনিয়ন পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রম চালুর দাবী জানান।

জানা যায়, শুক্রবার ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন লামা পৌর শহরে ২ জন ও পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ড লাইনঝিরিতে ১জন ডিলারের মাধ্যমে তিনটি জনবহুল পয়েন্টে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিজন ডিলার ১ মেট্টিক টন হারে ৩জন ডিলার ৩ মেট্রিকটন চাল বিক্রয় করছেন। তবে পৌর এলাকার জন্য ওএমএস’র বরাদ্দকৃত চালের এ পরিমাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অল্প। এতে কোনরকমে পৌর এলাকার জনসাধারণের চাহিদা মিঠাতে পারলেও চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বাকী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষগুলো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু গত ২১ অক্টোবর শহরের বাসু পালিত ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রে চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন। এ সময় খাদ্য কর্মকর্তা মিলন কান্তি চাকমা, লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, ডিলার বাসু পালিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি হারে চাল কিনতে সকাল থেকেই ওএমএস বিক্রি পয়েন্টে ভীড় করেন নিম্ম আয়ের মানুষ। ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়ায় কিছুটা কষ্ট হচ্ছে বলে ক্রেতা দিন মজুর রহমত আলী, আলী আকবর, শেফায়েত হোসেন, জামাল উদ্দিন, আলী আজগরসহ অনেকে জানিয়েছেন।

ডিলাররা জানান, পৌর শহর এলাকায় আতপ চালের চাহিদা-৩০% আর সিদ্ধ চালের চাহিদা ৭০%। সরকারি নির্দেশনা ও গুদামে সিদ্ধ না থাকায়, আতপ চাল তুলেছি, তবে সিদ্ধ চাল ক্রেতার সংখ্যা বেশি। তারা জানায় ৩০ টাকা কেজি হওয়াতে ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছে। কারণ এখানকার বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবি।

সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ওএমএস’র সুবিধা বঞ্চিত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষরা মনে করেন- অন্তত প্রতিটি ইউনিয়ন সদরে একটি করে ওএমএসের চাল বিক্রয়ের কেন্দ্র খোলা হলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে কিছুটা হয়তো স্বস্থি ফিরে আসতো।

প্রায় ৯ কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করে রুপসীপাড়া ইউনিয়ন থেকে লামা পৌর শহরে চাল কিনতে আসা মো. আবুল হাশেম (৪৮) বলেন, এই চাল কিনতে এখানে আসতে আমার অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া খরচ হয়েছে। কিন্তু কী করবো বাধ্য হয়েই আসলাম। এখন বাজার দরের মতই হচ্ছে ন্যয্য মূল্যের চালের দর। এই চাল যদি আমাদের এলাকায় বিক্রয় হতো তাহলে অনেক গরীব-অসহায় মানুষ সরকারের সুবিধা ভোগ করতে পারতো। এতো দূর থেকে এসে এই চাল ক্রয় করা অনেক কষ্ট কর বলেও জানান তিনি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এ মিলন কান্তি চাকমা বলেন, এবারে ২১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনে ৬৬ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করবে ওএমএস’র ডিলাররা। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন ৩ জন ডিলার ৩মেট্রিক টন চাল বাজারে বিক্রি করছে। তবে শুধু লামা পৌরসভায় চালের ডিলার নিয়োগ দেওয়ায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র জনসাধারণরা ওএমএস’র সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যশই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলার ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকেরা পৌরসভায় এসে ওএমএস’র চাল ক্রয় করা সম্ভব নয়।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু জানান, খোলা বাজারে চাল বিক্রিতে সরকারি নিয়ম মেনে যাতে ভোক্তার চাল পায়, সেজন্য প্রতিটি পয়েন্টে টেক অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: