ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলায় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

prataকক্সবাজার প্রতিনিধি :

জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত, আবাসন সমস্যা প্রকট, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঝুঁকি থাকার অযুহাতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকগণ তদবিরের মাধ্যমে কিছুদিন কাজ করে পছন্দসই এলাকায় চলে যাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে উক্ত এলাকাসমুহ। ফলে দূর্গম এলাকায় বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষক সংকটের কারনে উক্ত বিদ্যালয় সমুহে ১২/১৩ বছর যাবৎ গুনগতমান সম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলায় ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক নেই তৎমধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়কে দূর্গম এলাকা চিহ্নিত করে তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে ১ যুগের ও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। অতি দূর্গম হিসাবে চিহ্নিত প্রধান শিক্ষকবিহিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হল টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোয়াইক্ষং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হ্নীলা রঙ্গীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৈংগাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের শরইতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুতরিয়ার ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুহুরীঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবজুমের সাগরবেষ্ঠিত সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কুতুবদিয়ায় ৪টি বিদ্যালয়কে দূর্গম প্রধান শিক্ষকবিহিন বিদ্যালয় হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয় ৪টি হলো উত্তর ধুরুং এর জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এম.রহমান উত্তর ধুরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলী আকবর ডেইলের পূর্ব তাবালেরচর রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,উত্তর ধুরুং এম হোসাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শহিদুল আজম জানান, আইনি জটিলতার ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকার কারনে জেলায় ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ২০১৩ সালে জেলায় ২৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে দূর্গম এলাকার বিদ্যালয় সমুহের অবস্থা আরো খারাপ। আমরা তালিকা মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেছি । আশা করছি শীঘ্রই এ ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নেবেন। সিনিয়র শিক্ষকদের পদোন্নতির সুরাহা হলে হয়ত কিছু কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকট কমে আসবে।
এদিকে দূর্গম এলাকার বিদ্যালয় সমুহে প্রধান শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অধ্যয়নরত সাড়ে ৩০ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী। সরকার শিক্ষার উন্নয়নে বাস্তবমুখি নানা পদক্ষেপ গ্রহন করলে ও দূর্গম এলাকার বিদ্যালয় সমুহে প্রধান শিক্ষকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণে ১ যুগ যাবৎ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ি জেলায় ৬৩২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদের পরিসংখ্যান হলো- কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২৭টি , রামুতে ২৫টি, চকরিয়ায় ৩৯টি, পেকুয়ায় ১৪টি, কুতুবদিয়ায় ২৪টি , মহেশখালীতে ১৭টি, উখিয়ায় ২৬টি, টেকনাফে ২১টি ।
এদিকে শতাধিক দূর্গম এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছ্।ে যোগ্যতা সম্পন্ন , প্রশাসনিকভাবে দক্ষ প্রধান শিক্ষক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলেও প্রধান শিক্ষক না থাকায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পাঠদান , দাপ্তরিক কার্যক্রম, শ্রেণিব্যবস্থাপনা, নতুন নতুন ক্যারিকুলাম ,সরকারের গৃহিত সৃজনশীল পদ্ধতির যথাযত প্রয়োগ এবং প্রাথমিক সমাপনিতে অংশগ্রহনকারি শিক্ষার্থীদের বাস্তবসম্মতভাবে গড়ে তোলার যে প্রধান শিক্ষকের গুরু দায়িত্ব তা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
অনতিবিলম্বে উক্ত বিদ্যালয় সমুহে প্রধান শিক্ষকের পদ যদি পূরণ করা না হয় তাহলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় পিছিয়ে পড়বে। পাশাপাশি গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষার প্রকৃত সুফল বঞ্চিত হবে এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৩০ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনিতে কাংখিত ফলাফল বঞ্চিত হবে পরীক্ষার্থীরা।

পাঠকের মতামত: