ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়া-টেকনাফে দুই হাজার একর সবুজ পাহাড় এখন বিরাণভূমি

38196c6e9db2c89d7afcb531ea5b15d6-26

উখিয়া প্রতিনিধি ::

রোহিঙ্গাদের আবাসে দুই হাজার একর সবুজ পাহাড় এখন বিরাণভূমি। কক্সবাজার জেলার উখিয়া টেকনাফে প্রায় দুই হাজার একর পাহাড় দখল করে ঘর তুলে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে বলে বন বিভাগের কাছে তথ্য আছে। দখল করা পাহাড়গুলোর মধ্যে যেগুলো মূল সড়কের সঙ্গে লাগোয়া সেখান থেকে বসতিগুলো তুলে দিয়েছে প্রশাসন। তবে অধিকাংশ পাহাড়েই এখনো ছড়িয়েছিটিয়ে আছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যে কয়েকটি পাহাড় দখলমুক্ত হয়েছে সেগুলোতে এখন আর সবুজের চিহ্ন নেই। কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। লতাপাতাগুল্ম কিছুই আর নেই। মাটি কেটে ঘর বানানোর কারণে পাহাড়ের আকৃতিও বদলে গেছে। সবুজ বনাঞ্চল উজাড় হয়ে সেই পাহাড়গুলো এখন পরিণত হয়েছে বিরাণভূমিতে। যেসব পাহাড়ে এখন রোহিঙ্গাদের বসতি আছে সেগুলোতেও চোখে পড়ে না সবুজ গাছপালা। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন উখিয়ার বালুখালীতে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য দুই হাজার একর পাহাড়ি ভূমি নির্ধারণ করেছে। সব রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেওয়ার পর পাহাড়গুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করবে বন বিভাগ। জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোহিঙ্গা ইস্যুতে জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র খালেদ মাহমুদ বলেন, যেসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে, মূল কথা হচ্ছে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে সবাইকে বালুখালীতে নির্ধারিত ক্যাম্পে যেতে হবে। কোন রোহিঙ্গা পাহাড় দখল করে থাকতে পারবে না। শুধু পাহাড় নয়, নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা কেউ থাকতে পারবে না। কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো. আলী কবির বলেন, গত রবিবার আমরা একটি জরিপ সম্পন্ন করেছি। এতে দেখা যাচ্ছে উখিয়া টেকনাফের বালুখালী, তাজমিনার ঘোনা, কেরনতলী, পুটিবুনিয়া, বালুখালীরঢালা, কুতুপালংয়ের অতিরিক্ত অংশ, সফিউল্লাহ ঘাটা এবং বাঘঘোনাএই ৯টি পয়েন্টে প্রায় ৭০০ একর পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বসতি আছে। এর বাইরে আরও প্রায় ৩০০ একর পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বসতি আছে যেগুলোতে তারা কখনও আসছে, কখনও আবার সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।কমবেশি দুই হাজার একর পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটাদুইটা পাহাড় থেকে সামান্য কয়েকজন রোহিঙ্গা সরে গেছে, বসতিও নিয়ে গেছে। এর ফলে সেখানে সবুজ বনাঞ্চল নষ্ট হয়ে যাবার বিষয়টি বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। বাকিগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার পর সেগুলোরও একই চিত্র দেখা যাবে।
গতকাল শনিবার উখিয়ার বালুখালীতে গিয়ে দেখা গেছে, মূল সড়কের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণের পাহাড়ে বাঁশের মাচা এবং ত্রিপল দিয়ে যেসব বসতি গড়ে তোলা হয়েছিল সেগুলো আর নেই। পাহাড়চূড়া পাহাড়ের খাঁজ কেটে ফেলার চিহ্ন আছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সড়ক থেকে কিছু দূরে উত্তরপূর্ব পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের গড়ে তোলা বসতি এখনও আছে। কুতুপালং এলাকায় দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলা সড়কের বিভিন্ন স্থানেহাতি পারাপারের স্থানলেখা সাইনবোর্ডের নিচে বসতি তুলে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, এসব এলাকা থেকে প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়ে বালুখালীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূলত সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতেই তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্ম্মা দীপু বলেন, খুব অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাকে পাহাড় থেকে সরানো হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের বসতির কারণে বন সংরক্ষণের যে সিস্টেমটা ছিল সেটা ভেঙে গেছে। এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরাও বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুত রোহিঙ্গাদের সরিয়ে পাহাড়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করা উচিৎ। না হলে এই এলাকায় পরিবেশগত এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে উখিয়াটেকনাফের যে সড়ক, সেটা দেখে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিমোহিত হতেন। এখন সেই সবুজের চিহ্ন আর নেই। পাহাড়গুলো খালি করে আবারও বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির বলেন, সবুজ বনায়নের মাধ্যমে পাহাড়ের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার কাজ আমরা অবশ্যই করব। তবে সময় লাগবে। আগামী জুনের আগে গাছ লাগানো যাবে না। সব রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পর একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করব

 

পাঠকের মতামত: