ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়া-টেকনাফে সুপারি বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখেহাসি

supশাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার প্রতিনিধি, ২৭ সেপ্টেম্বর ॥

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রতি মৌসুমে ১০ কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। দেশের গন্ডি ফেরিয়ে এসব সুপারি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে কাঁচা সুপারির কদর আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সুপারি চাষাবাদের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবারের মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসার সুবাদে এখানে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষাবাদ হচ্ছে। উৎপাদিত সুপারি স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পরে বিদেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে সুপারি আসা বন্ধ হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমারের সুপারি না আসার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এতে সুপারি চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অকৃষি পরিত্যক্ত জমিগুলো উৎপাদনমুখী হচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

সূত্রমতে, ৮০ দশকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ শুকনা সুপারি এদেশে পাচার হয়েছে। চোরাই পথে আসা এসব শুকনা সুপারি হাট বাজার সয়লাব হয়ে পড়ার কারণে দেশীয় উৎপাদিত সুপারি বাজারজাত করতে গিয়ে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পায়নি। এতে করে স্থানীয়ভাবে সুপারি চাষাবাদে কৃষকেরা অনেকটাই নিরোৎসাহিত হয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারে বসবাসরত বৃহত্তর রোহিঙ্গা নাগরিক এদেশে চলে আসার কারণে সুপারি পাচারের ধারাবাহিকতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এতে বাড়তে থাকে স্থানীয় সুপারির চাহিদা। বাজারে সুপারির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকেরা পরিত্যক্ত অকৃষি জমিগুলোতে সুপারির চাষাবাদ শুরু করে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৪০০ গ্রামে প্রতি বছর প্রচুর সুপারি উৎপাদন হয়।

পান সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, প্রতি পন বা ৮০টি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছরে সুপারির দাম যথেষ্ট ভালো। এ কারণে সুপারি বিক্রেতারা আনন্দিত। পাশাপাশি দাম পেয়ে সুপারি উৎপাদনকারীরাও মহাখুশি।

সোনারপাড়া এলাকার চাষি আবদুল্লাাহ বলেন, সুপারি বিক্রি করে চলে তার সাতজনের সংসার। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ২ লাখ টাকার সুপারি গাছে রয়েছে।

ইনানীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এ বছর চাষিরা সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এতে অনেকেই অকৃষি পরিত্যক্ত জমিতে সুপারি চাষ করছেন।

টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া শামলাপুর পুরানপাড়ার বাগান মালিক জাফর আলম বলেন, উপজেলার বাহারছড়া শামলাপুর, সাবরাং ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হয়েছে। আর সুপারির বড় বাজারের সমাগম হয় উখিয়ার সোনার পাড়া এবং টেকনাফ পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে ও বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে। এ তিন’বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার সুপারি যাচ্ছে, ঢাকা, জল ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, পাগলাবিল ও রাজার হাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কৃষক করিম উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় জালিয়াপালং ইউনিয়ন, হলদিয়া ইউনিয়ন ও রতœাপালং ইউনিয়নের ইনানী, মনখালী, চেপটখালী ও মাদারবনিয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি সুপারী উৎপাদন হয়েছে।

ব্যবসায়িদের সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে বেশির ভাগ সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মনখালী, চেপটখালী ও মাদারবনিয়া এলাকায় থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। সব মিলে প্রতি সপ্তাহে উখিয়া থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি টাকারও বেশি সুপারি যাচ্ছে।

প্রতি মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রায় ১০ কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে। পরে ওইসব সুপারি প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

অর্থকরী ফসল পান, সুপারি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বসত ভিটা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে হাজারেরও অধিক পরিবার বাণিজ্যিকভাবে সুপারি উৎপাদনে সক্ষম হওয়ায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি সোনারপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায় উৎপাদিত সুপারিতে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক ও কাদির হোছন জানান, এ বাজার থেকে দৈনিক ৮-১০টি ট্রাক বোঝাই সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, রোগবালাই না হওয়ায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব সুপারি বাজারজাত করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, সুপারির এত উৎপাদন আমি আগে কোনো দিন দেখিনি। উখিয়া ও টেকনাফে ২ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়েছে। সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ টন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত: