ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫ হাজার শেল্টার তৈরি করবে তুরস্ক

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
রোহিঙ্গার আবাসনের জন্য ২৫ হাজার মতো শেল্টার তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নোমান কুত্তোলমাস। তিনি বলেন, স্বদেশে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তারা থাকার জায়গা পাচ্ছেনা। মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার শেল্টার তৈরী করে দেয়া হবে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নোমান কুত্তোলমাস বলেছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেবে তুরস্ক। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে তুরস্ক সব সময় থাকবে।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন প্রমুখ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নোমান কুত্তোলমাসএর আগে তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নোমান কুত্তোলমাস সকালে বিমানে করে কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছান এবং গাড়িতে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যান।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগষ্ট রাতে মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা জঙ্গি হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ৫ লাখের বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কুতুপালং, বালুখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঘটে হতাহতের ঘটনা। এসব প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু সামাজিক সংগঠনগুলো সেনা বাহিনীর হাতে দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানায়।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অংসান সুচির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৫শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও তারা রাজি নয়।
রোহিঙ্গাদের এই স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মতো কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে একাধিক নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। এছাড়া সীমান্তে যৌথ টহলেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো প্রস্তাবেই মিয়ানমারের সাড়া মেলেনি। উল্টো তাদের অভিযান সঠিক বলে দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকান্ড শুরু করে।

পাঠকের মতামত: