ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরী বউয়ের খোঁজে আসা ৮ বৃদ্ধ ‘আরব শেখ’ গ্রেফতার

image-16042-1505937487আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

তাদের কারো বয়স ৭০ থেকে ৮০, কারো বা তার কাছাকাছি। এই বৃদ্ধদের কেউ কেউ লাঠি বা কোন অবলম্বন ছাড়া হাঁটতেও পারেন না। এদের মধ্যে একজন আবার অন্ধ। তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতে আসা এই বৃদ্ধদের উদ্দেশ্য একই।

স্থানীয় কিশোরী মেয়েদের চুক্তি ভিত্তিতে বিয়ে করতে এসেছেন তারা। ভারতের হায়দারবাদ থেকে এমন আটজন ‘আরব শেখ’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কয়েকটি গেস্টহাউজ ও বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫ জন ওমান এবং ৩ জন কাতারের নাগরিককে গ্রেপ্তার করে হায়দারবাদ পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজনের বয়স ৮০’র ঘরে, হাঁটেন লাঠি বা ওয়াকার’র সহায়তায়। এছাড়াও মুম্বাইয়ের প্রধান কাজী ফরিদ আহমেদ খানকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই কাজী হায়দারবাদে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করান, ৫০ হাজার রুপির বিনিময়ে সার্টিফিকেট দেন। গ্রেপ্তারকৃত ওমানের নাগরিকরা হলেন আল মায়াহ আলি ইসা, আল সালেহি তালিব হুমেইদ আলি, আল ওবাইদানি জুমা শিনুন সুলাইমান, আল সালেহি নাসের খালিফ হামেদ, আল কাশিমি হাসান মাজুল মোহাম্মদ এবং কাতারের নাগরিকরা হলেন ওমার মোহাম্মদ সিরাজ আব্দাল রহমান, হামাদ জাবির ও আল-কুয়ারি ও সাফেলদিন মোহাম্মাদ সালিহ।

এছাড়াও ভুয়া বিয়ে পড়ানোর জন্য সম্প্রতি দুইজন স্থানীয় কাজীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফালাকনুমা ও চান্দ্রায়ানগুত্তা এলাকায় বাসা কাম গেস্টহাউজ সিল করে দিয়েছে পুলিশ। ১৭ আগস্ট অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকাকে বিয়ে করা এক ওমান নাগরিককে গ্রেপ্তারের পরেই বড় আকারে এই অভিযান শুরু করে পুলিশ।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হায়দারবাদ বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শেখদের পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ। এমনই আটজন বিভিন্ন বাসা বা গেস্টহাউজে উঠলে তাদের অনুসরণ করে পুলিশ। তখন পুলিশ দেখে, নারীসহ বেশ কয়েকজন দালাল তাদের কাছে মেয়েদের নিয়ে আসে। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরেই গত রাতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজে অভিযান চালানোর সময় তারা ২০ জনেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ‘সাক্ষাৎকার’ নিচ্ছিলো বলে জানায় পুলিশ কমিশনার মাহেন্দার রেডি।

সাউথ জোন পুলিশ চান্দ্রায়ানগুত্তা’র প্রাইভেট গেস্টহাউজে অভিযান চালিয়ে একেবারে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে ওমানের নাগরিক আল মায়াহি আলি ইসাকে। তার কাছে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে বিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। ফালাকনুমা বিভাগের এ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ মোহাম্মদ তাজুদ্দিন আহমেদ বলেন, “তারা কিশোরী মেয়েদের বাছাই করছিলো। দালালরা তাদের দেখানোর জন্য গেস্টহাউজে মেয়েদের নিয়ে আসে। তিনজন দালাল ও তিন কাজীসহ তাদের (৮ জন শেখ) গ্রেপ্তার করা হয়। শেখরা কোন মেয়েকে বিয়ের জন্য বাছাই করলে তাদের অভিভাবকদের ১ লাখ রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় দালালরা, নিজেরা রাখে ২ থেকে ৩ লাখ রুপি।”

গ্রেপ্তারকৃত আটজন ছাড়াও বিভিন্ন বাসায় অবস্থান নেয়া আরও কয়েকজন শেখকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এফকে লজ থেকে আটক করা ওমানের আল শেয়াদি সুলাইমান খামিম সেলিম পুলিশকে জানান, কিশোরী মেয়েকে বিয়ের জন্য তিনি এসেছেন। তার সাথে তার ছেলে ও বন্ধুও রয়েছে।

অপর একটি লজ থেকে পুলিশ ৮০ বছর বয়স্ক এক অন্ধ শেখ এম আব্দুল্লাহকে আটক করে। যিনি চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করতে এসেছেন বলে স্বীকার করেছেন। ৩ সপ্তাহ পরেই তিনি তার স্ত্রীকে ছেড়ে চলে মাস্কট ফিরে যেতেন বলেও স্বীকার করেন। সাউথ জোন ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ ভি সাতয়ানারায়না বলেন, তারা হায়দারবাদের কমপক্ষে ১৫ জন দালালকে শনাক্ত করেছেন। পুলিশের শনাক্ত করা এমন ৩৫ জন দালালের মধ্যে ২৫ জন নারী। এরা ওমান ও কাতারে বাস করে এবং শেখদের স্থানীয় পরিবারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। কিছু নারী থাকে, যাদের মূল কাজ গরীব পরিবারকে শনাক্ত করা, যারা টাকার জন্য তাদের মেয়েকে এভাবে বিয়ে দিতে আগ্রহী।

কিছু ক্ষেত্রে এই শেখরা ভিসার ব্যবস্থা করে এবং এই নব্যবিবাহিত স্ত্রীকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। এই মেয়েদের পরিণতি হয় আরও করুণ। অন্যদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের।পুলিশ জানায়, দালালরা শুধু মেয়েদের খুঁজে বের করা বা প্রস্তুতই রাখে না, তারা বিভিন্ন প্যাকেজও ঘোষণা করে। এই প্যাকেজগুলোর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সাথে সাক্ষাৎ থেকে তাদের থাকা ও বিয়ে পর্যন্ত নেয়া হয় ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ রুপি।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

পাঠকের মতামত: