ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যস্ত প্রশাসন ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

নিউজ ডেস্ক ::rohiyanga12
১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১২ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন ট্যূর অপারেটর এসোশিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর আহবায়ক হাসিব বাদল। ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবসের টুয়াকের করণীয় সম্পর্কে জানাতেই তিনি সেদিন জেলা প্রশাসকের ক্যার্যালয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে জেলা প্রশাসক আলী হোসেনকে না পেয়ে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ারুল নাসেরের কক্ষে যান। তবে তিনি এডিসি (সার্বিক) এর দেখাও পাননি। পরে খবর নিয়ে জানতে জেলা প্রশাসক সহ জেলা প্রশাসনের প্রায় সব কর্মকর্তা উখিয়া- টেকনাফের রোহিঙ্গা অধূষ্যিত এলাকায় অবস্থান করছেন। নিরুপায় হয়ে তিনি একটি আবেদন পর্যটন সেলে জমা দিয়ে আসেন। শুধু ওইদিনই নয় বিগত প্রায় ২৫ দিন ধরে দাপ্তরিক সকল কাজকর্ম রেখে জেলা প্রশাসন সহ জেলার সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সামলাতেই ব্যস্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে ট্যূর অপারেটর এসোশিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর আহবায়ক হাসিব বাদল বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জেলাবাসী। মানবিক দিক বিবেচনা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করছে। তবে ওই গোষ্ঠীর কারণে পিছিয়ে পড়ছে কক্সবাজার। স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগন। সরকারের দাপ্তরিক কাজও হচ্ছে না।
তার কথা শেষ না হওয়ার আগেই ট্যূর অপারেটর এসোশিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারকে তুলে ধরতে ৭ও ৮ সেপ্টেম্বর ‘কক্সবাজার ব্র্যান্ডিং’ নামের দুদিন ব্যাপী একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দীর্ঘ ৩ বছর প্রচেষ্টার পর ওই দুটি দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু সদ্য অনুপ্রবেশকারী ৫ লক্ষ রোহিঙ্গার কারণে সেই অনুষ্ঠানটি করতে পারেনি প্রশাসন। একারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটনশিল্প।
শুধু পর্যটন নয় আগত রোহিঙ্গাদের কারণে, জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার মানও কমে গেছে। সরকারী প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নির্ঘূম রাত কাটছে রোহিঙ্গা সেবা দিতে গিয়ে। রোহিঙ্গার কারণে স্থানীয় জনগন যেমন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রশাসনও তাদের দ্বাপ্তরিক কাজকর্ম করতে পারছে না। তবে এ থেকে উত্তোরণের জন্য জেলা প্রশাসনকে ১৭ জন অফিসার ও ২৫ জন অফিস সহকারী দিয়েছে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার।
সূত্র জানায়,২৫ আগষ্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গা উখিয়া- টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫০০ একর জমিতে ৪ হাজার শেড নির্মাণ করছে প্রশাসণ। তাদের খাদ্য, বস্ত্র সহ বিশুদ্ধ পানীয় জল ও চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ত্রান তৎপরাতা চালানোর পাশাপাশি পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কাজও করছে প্রশাসন। এরই সাথে রোহিঙ্গাদের মুখে রাখাইনে জাতিগন নিধণের বর্ণণা শুনতে প্রায় প্রতিদিনই উখিয়া- টেকনাফ পরিদর্শন করছেন দেশী- বিদেশী ভি ভিআইপিরা। তাদের প্রটৌকলের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে একই প্রশাসনকে। ওইসব করতেই প্রশাসনকে সকাল সন্ধ্যা সময় কাটাতে হচ্ছে রোহিঙ্গা বস্তিতে। হিমশিম খেতে হচ্ছে পুরো প্রশাসনকে।
প্রায় ২৫ দিন এক নাগাড়ে রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে গিয়ে বন্ধ রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়মিত অভিযান। সীমান্তের বিভিন্ন স্কুলে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের কারণে প্রায় অর্ধশতাধিক স্কুলে হচ্ছে না ক্লাস। চলতি মাসের মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভাও করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। একই সাথে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রস্তুতি সভা এখনো করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সেবা দিতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশী-বিদেশী ভি ভিআইপিদের প্রটৌকলের দায়িত্ব।
এবিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ারুল নাসের বলেন, মিয়ানমারে রাখাইনের সহিংসতা সম্পর্কে কিংবা এত রোহিঙ্গা উদ্ধাস্তু হয়ে এদেশে আসবেন সে বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অগ্রিম কোন তথ্য ছিল না। তাই আগাম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বানের ¯্রােতের মত ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে তাই প্রশাসনকে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। একারণে স্বাভাবিক কাজকর্মও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার জন্য জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় ১২ জন অফিসার ও বিভাগীর কমিশনার ৫ জন অফিসার দিয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন অফিস সহকারী দিয়েছেন। গতকাল তাঁরা কক্সবাজার এসেছেন। তাই আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যেই প্রশাসন তার স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালাতে পারবে।

পাঠকের মতামত: