ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা এসেছে ১৫ লাখ

মাহাবুবুর রহমান :rohingga
১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হয়ে আসছে। এর মধ্যে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত এসেছে সাড়ে ৮ লাখ,ফিরে গেছে আড়াই লাখ, হদিস নেই ২ লাখ। আর ইতি মধ্যে নতুন আসা ৪ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসে নি। তবে নিবন্ধিত ২ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে সাড়ে ৩৮ হাজার।
তবে এই হিসাব মানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দা আর জনপ্রতিনিধিরা তাদের মতে শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগই ফেরত না গিয়ে মিশে গেছে স্থানীয়দের মাঝে এর মধ্যে অনেকে ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ আবার অনেকে জনপ্রতিনিধি ও হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছে গত ২৫ আগস্ট থেকে ৭ লাখের কাছাকাছি এবং এই আসার ¯্রােত এখনো অব্যাহত আছে।
কক্সবাজার শরণার্থী প্রত্যবাসন ও ত্রাণ কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ১৯৭৮ সালে সর্ব প্রথম বাংলাদেশে নাফ নদী হয়ে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আর সেই বারে এসেছিল প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা, তবে কাগজে কলমে এ সব রোহিঙ্গার অবস্থান বিষয়ে জানে না কেউ। এর পরে ১৯৯১-৯২ সালে মায়ানমার হতে আগত শরণার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন এর মধ্যে ফেরত গেছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন। আর জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ্রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন রোহিঙ্গা। আর সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখা হয়েছে ৭৫ হাজার আর নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখা হয়েছে ৬৫ হাজার এছাড়া অস্থায়ী ভাবে থাইংখালী টালে ৫০ হাজার, বালুখালীতে ৩০ হাজার,ময়নারঘোনাতে ২২ হাজার, হাকিম পাড়াতে ১৫ হাজার,লেদাতে ১৪ হাজার,শাপলাপুর টালে ৩৫ হাজার, উনচিপ্রাং টালে ৩৭ হাজার মোট ৩ লাখ ৪৩ হাজারের হিসাবে আছে তবে আরো বেশ কিছু এখানো আসছে এবং তারা বিচ্ছিন্ন ভাবে আছে।
সে হিসাবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা এসেছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ যার মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন ফেরত গেছে আর নিবন্ধিত ক্যাম্পে আছে সাড়ে ৩৮ হাজার। আর বাকিদের হিসাব নেই। তবে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান প্রশাসন।
তবে এ তথ্য মানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। টেকনাফ উপজেলার প্রবীন শিক্ষক আবদু শুক্কর বলেন আমার বয়স এখন ৮৫, সে হিসাবে আমি অনেক কিছুর স্বাক্ষি ১৯৭৮ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা এসেছে তখন এত আধুনিক কোন ব্যাবস্থা ছিল না। তখন জমি ছিল অবাধে যে যার মত মিশে গেছে তার মধ্যে অনেকে এখন বড় ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ আবার জনপ্রতিনিধিও। এর ফাঁকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত ছিল পরে মোট দাগে ১৯৯১-৯২ সালের দিকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে কিন্তু এর মধ্যে যারা একটু নি¤œ বিত্ত তারাই ক্যাম্পে রয়ে গেছে আর যারা একটু সম্পদশালী তারা চলে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। আর বর্তমান অবস্থার কথাতো বলার প্রয়োজন নেই ইতিমধ্যে সব গণমাধ্যম রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলছে আমার মতে এবার কম করে হলেও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। যার মধ্যে অনেকেই সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গেছে। এখানে ও যারা একেবারে সহায় সম্বলহীন তারাই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে কম করে হলেও ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে।
একই মত দেন টেকনাফের আরেক প্রবীন শিক্ষক মোঃ শাহজাহান, তিনি দাবী করেন রোহিঙ্গা আসা বন্ধ ছিল কখন ? এখন হয়তো এক সাথে বেশি এসেছে এ জন্য সবাই আলোচনা করছে কিন্তু প্রতি মাসেই তো রোহিঙ্গারা আসছে। মুলত রোহিঙ্গারা মায়ানমারে ভাল নেই তারা সেখানে শিক্ষা স্বাস্থ্য চিকিৎসা সহ সব কিছুতে বঞ্চিত। তাই এখানে আগে যারা এসেছে তারা যখন এখানে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, আর তারা সবাই যোগাযোগ থাকে সে হিসাবে যখনি সুযোগ পায় তখনি রোহিঙ্গা আসে এবং স্থায়ী হয়ে যায়। আমার মতে এই সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি হবে। আর বেশির ভাগই আর ফেরত যায়নি।
এব্যাপারে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আদিল চৌধুরী বলেন রোহিঙ্গা আসলে যে আর যায় না সেটা প্রায় সবাই জানে, আর তাদের নানান ভাবে স্থানীয়রাই আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত কত এসেছে সেটা অনুমান করতে না পারলেও কক্সবাজার সহ আশপাশের জেলা গুলোতে স্থায়ী হয়েছে অন্তত ৫ লাখ সেটা আমি বলতে পারবো। তিনি বলেন অতিতের বিষয়ের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। প্রথমত এই রোহিঙ্গা আসা কতদিন চলবে সেটা কেউ বলতে পারছে না তাই সংখ্যাটাও আমরা নির্ণয় করতে পারছি না। যদিও প্রশাসন এখন তাদের নিবন্ধন করার একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তবে সেটা শতভাগ সফল হবে তখন যদি ইতি মধ্যে শহরে বন্দরে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত এনে নিবন্ধন করা যায়।
এব্যপারে উখিয়া রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী বলেন সরকার মানবিক কারনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে অনেক বড় মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের এই বিপুল চাপ সামলাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে ইতিমধ্যে খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে, গাড়ী ভাড়া বেড়ে গেছে, সর্বত্র পায়খানা প¯্রাবের কারনে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সব মিলিয়ে একটি অস্বস্থিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এখন জরুরী ভিত্তিতে তাদের একটি নির্দিস্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া দরকার। এবং খুব দ্রুত তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে সব ধরনের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
এব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন মানুষের জীবন বিপন্ন হলে তাদের সহায়তা করা উচিত সেই তাগিদ থেকে সরকার সাময়িক ভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। খুব দ্রুত মায়ানমারের পরিবেশ ভাল হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সঠিক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজ চলছে আশা করি সেটা শেষ হলে সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যারা ইতি মধ্যে ক্যাম্পের বাইরে চলে গেছে তাদের যে কোন ভাবে ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে কাজ করতে হবে।

পাঠকের মতামত: