ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তা সঙ্কটে রোহিঙ্গা তরুণীরা

roh Hamidaআতঙ্কে রোহিঙ্গা তরুণী হামিদাকে সব সময় ঘিরে রাখে তার মা ও বোন।

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :::
মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের হামলার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি উল্লেখ্যযোগ অংশ তরুণী। এদের মধ্যে ১৪ বছর থেকে ২০ বছর বয়সীদের অধিকাংশই অবিবাহিত। এসব তরুণীর মধ্যে অনেক সুন্দরী তরুণী রয়েছে। তারা সবাই বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা এসব তরুণীরা আশ্রয়ে এসেও শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে এদেশীয় লম্পটদের কালো হাত। একই সাথে দালালদের হাতও তাক হয়ে আছে তাদের দিকে। এ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে রোহিঙ্গা তরুণীরা। নিরাপত্তাহীনতা তাদেরকে পরিবারকেও আস্থাহীনতায় ফেলে দিয়েছে।

মিয়ানমারের বুচিদং টমবাজার থেকে পালিয়ে এসে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছে তরুণী হামিদা। তার বাবাকে মায়ানমারের সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। মা ও এক ছোটবোনের সাথে চারদিন আগে সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসেও স্বস্তিতে নেই তরুণী হামিদা ও তার মা আলেয়া খাতুন। সুন্দরী হওয়ায় এদেশীয় কিছু লম্পট তরুণীটিকে ঘিরে রয়েছে! একই সাথে দালালও তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। গত তিনদিন ধরে নানাভাবে তরুণী হামিদা ও তার মাকে ফুঁসলাচ্ছে লম্পট ও দালালরা। নানাভাবে লোভও দেখাচ্ছে।

রোববার সকালে দেখা হলে ঘুমধুমের শখের ফটোগ্রাফার শাহজালালকে এসব কিছু খুলে বলেন তরুণী হামিদা। হামিদা জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে প্রতিনিয়ত স্থানীয় কিছু যুবক তাদের আশেপাশে ঘুরছে। তারা তরুণী হামিদাকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছে। বিনিময়ে টাকা দিবে বলে প্রলোভন দিচ্ছে। শুধু লম্পট যুবকেরা নয়; কয়েকজন দালালও হামিদার মাকে টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। তরুণী হামিদাকে তারা হোটেলে রাখবে। বিনিময়ে অনেকটা অনেক টাকা দেবে।

হামিদা বলেন, ‘বাবাকে চোখের সামনে মরতে দেখেছি। নিজের প্রাণ বাঁচাতে চরম আতঙ্ক নিয়ে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসেও শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত লম্পটদদের কালো হাত তাড়া করছে। এই আতঙ্কের কারণে একটুও শান্তি পাচ্ছি না।’

তার মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘নিজ দেশ ছেড়ে জান বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু ধরে রয়েছে। আমার খুব ভয়, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ হাতে ধরে রেখেছি।’

শখের ফটোগ্রাফার শাহজালাল এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি চার দিন নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে শখের ফটোগ্রাফী করছেন। ফটোগ্রাফীর ফাঁকে তিনি রোহিঙ্গাদের নানাভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের সাথে কথা বলেছেন। নিজ প্রত্যক্ষ এবং কথা বলে শাহজালাল যেসব সমস্যা দেখেছেন তার প্রধান সমস্যায় ভুগছেন রোহিঙ্গা সুন্দরী তরুণীরা।

শাহজালাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাদের নানা দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনেছি। তার মধ্যে খাদ্য সংকট ছাড়াও আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সুন্দরী তরুণীরা। যেসব মা বা বাবার কাছে সুন্দরী তরুণী রয়েছে তারা চরম নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছেন। মা-বাবার চেয়েও বেশি আতঙ্কে রয়েছে সুন্দরী ওই তরুণীরা। পালিয়ে আসা তরুণীদের মধ্যে অধিকাংশরই কোনো না কোন আত্মীয় হত্যার শিকার হয়েছেন। এই নিয়ে তারা শোকের সাগরে ভাসছে। তার উপর লম্পটদের হানা তাদেরকে বড়ই অসহায় করে তুলেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় কাজ করছে স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকেও লোক গিয়ে অসহায় রোহিঙ্গা সহযোগিতা করছে। কিন্তু কিছু স্থানীয় দুষ্টু লোক রোহিঙ্গাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করছে। তারা রোহিঙ্গাদের গরু-ছাগলসহ নানা জিনিসপত্র লুট করছে। একইভাবে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের উপর কুনজর দিয়েছে এসব স্থানীয় কিছু লম্পট শ্রেণির লোক ও পতিতা দালালরা। তারা সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের টার্গেট করে নানাভাবে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। ভাগে না পেয়ে অপহরণ পর্যন্ত করেছে। অন্যদিকে পতিতা দালাল চক্রও টার্গেট করেছে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের। তারা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সুন্দরী তরুণী ও তাদের পরিবারকে ফুঁসলাচ্ছে। এতে নিরাপত্তা সঙ্কট ভুক্তভোগীদের কুরে কুরে খাচ্ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সংখ্যা খুব অপ্রতুল হওয়ায় নিরাপত্তার প্রকট সঙ্কট বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারিও বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার জন্য উখিয়া ও টেকনাফে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য দেয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। তারপরও দুষ্টু লোকদের খোঁজ পেলে আটক করে পুলিশের খবর দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের প্রশাসন যেমন কঠোর তেমনি ভাবে তাদের নিরাপত্তাও দেয়া হচ্ছে। এর জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বিপুল সদস্য নিয়োজিত হয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি হলে যে কেউ নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনকে জানাবেন।’

 

পাঠকের মতামত: