ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

১২ দিনে এসেছে আড়াই লাখ, অপেক্ষায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা!

rohসরওয়ার আলম শাহীন, সীমান্ত এলাকা থেকে:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১২ দিনে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে সীমান্তবর্তী এলাকার জনগন, বস্তি নেতা ও নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মতে,মিয়ানমারে এখনো ৫ লাখের উপরে রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়। এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদনে ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার কথা বললেও বাস্তবে এর সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে।

এর মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দিনেরাতে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে অন্ততঃ ১ লাখ রোহিঙ্গা।

সুত্র জানায়, কোরবানী ঈদের পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নমনীয় মনোভাবের পর থেকে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ভয়াবহ আকার ধারন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।মানবিক কারনে স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা আগের মতো আর রোহিঙ্গা ঠেকাতে হার্ডলাইনে নেই। ফলে বানের ¯্রােতের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।

সীমান্তের অন্ততঃ ১০টি পয়েন্ট দিয়ে এ প্রবনতা আগের প্রবনতা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে স্থানীয় জনগনের দাবী। সীমান্ত পেরিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার হোয়াইক্যং থেকে উখিয়ার কুতুপালং পর্যন্ত রাস্তার দু,পাশ দিয়ে এসে কুতুপালং,বালুখালী, নতুন গড়ে উঠা বালুখালী ঢালার মুখ,থাইনখালী হাকিম পাড়া, পালংখালী তাজনিরমার খোলা,পালংখালীর বাঘঘোনা বস্তিতে প্রবেশ করছে।অচিন এলাকায় যে যেখানে পারছেন সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিচ্ছেন। ফলে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি ঘর।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যান্তরে নতুন করে কয়েক হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। যে যেখানে পারছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিটি সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। শিশু-বৃদ্ধদের কোলে-কাঁধে করে নিয়ে আসছে তারা।

স্থানীয় কুতুপালং,বালুখালী বস্তির লালু মাঝি ও শাশশু মাঝি জানান,পুরাতন ছাড়াও নতুন গড়ে উঠা বস্তিতে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে । এ সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের কম হবেনা। স্থানীয় সীমান্তবর্তী এলাকার বালুখালী গ্রামের জাফর ইকবাল জানান,ঈদের দিন থেকে যে হারে রোহিঙ্গার ¯্রােত আসছে তাতে এ সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

গত বুধবার সরজমিন হোয়াইক্যং লম্বাবিল সীমান্ত পরিদর্শন কালে মিয়ানমারের খিয়ারীপাড়া থেকে নতুন আসা রোহিঙ্গা ফিরোজ মিয়া (৩৭) জানান,মিয়ানমারের বনে জঙ্গলে ও সীমান্তের পয়েন্ট পয়েন্টে এখনো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা রয়েছে। তার মতে এ সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িেেয় যাবে।

এ সময় পাশে থাকা মুরব্বী মিয়ানমারের নাইছাদং গ্রামের আবুল ফরাজ (৭০) জানান,¯্রােতের মতো মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আমাদের সাথে এসেছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। লম্বাবিল সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের দিকে এ লাইন অনেক দীর্ঘ। তার মতে,এভাবে ¯্রােতের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও এ ধারা এক মাসেও শেষ হবেনা। তার মতে,এখনো মিয়ানমারে ৫ লাখের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝি আবু ছিদ্দিক ও মুহাম্মদ নূর বলেন, আমাদের ক্যাম্পে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ১০ হাজারের মতো আশ্রয় নিয়েছে টিভি টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায়। তাদের ধারনা নতুন বস্তি সহ নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা দু লাখের বেশী হবে।

পাঠকের মতামত: