ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাঁদলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা শুনে কাঁদলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে অবস্থিত নিবন্ধিত শরনার্থী শিবির পরিদর্শনে গেলে এ দৃশ্যের hohiiঅবতারণা হয়।
গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে তিনি কুতুপালং নিবন্ধিত শরনার্থী শিhohiiবিরে পৌঁছান। ক্যাম্প ইনচার্জ এর কার্যালয়ে কিছু রোহিঙ্গার সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। এসময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু,hohii বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সংশ্লিষ্ঠরা উপস্থিত ছিলেন। এমিনি এরদোগান কথা বলেন নিhohiiর্যাতন ও hohiihohiiহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা কয়েকজন ধর্ষিত নারী ও গুলিবিদ্ধ পুরুষের সাথে। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসার কারন এবং নির্যাতনের ধরণ সম্পর্কে জানতে চান। রোহিঙ্গারা কান্না জড়িত কন্ঠে তাদের কথা জানান। এসময় এমিনি এরদোগান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর জানান, নিবন্ধিত শরনার্থী শিবিরে বৈঠকের পর তুরস্কের ফার্স্ট লেডি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তিতে গেলে রোহিঙ্গাদের কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা নিজেদের দু:খ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। এসময় আবেগাপ্লুত হন এমিনি এরদোগানও। রোহিঙ্গাদের কান্না দেখে তিনিও কেঁদে ফেলেন। বুকে জড়িয়ে ধরেন অনেক রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে।
দুপুরে কুতুপালংয়ে কথা হয় রূদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া মিয়ানমারের মংডুর তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা শফিকা বেগমের (২৫) সাথে। তাঁর ডান হাতে গুলি লেগেছে। মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন। শফিকা জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোরবানীর ঈদের দুই দিন তাদের গ্রামে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাঁর স্বামী জামাল হোসেনসহ পরিবারের ১০ সদস্যকে। ছোট বোন রশিদা বেগমকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে। তার কোলে থাকা এক মাসের শিশুটিকেও গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তিনি নদী সাতঁরে কোনমতে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
শফিকার সাথে কথা বলার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ধর্ষিত ও হত্যাকান্ডের শিকার রশিদা বেগমের স্বামী মো: হোসেন (৩০)। তিনি বলেন, কোরবানীর ঈদের দুই দিন আগে হঠাৎ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হানা দেয়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সব কিছু। যাকে সামনে পায় তাকেই গুলি করতে শুরু করে। তার স্ত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে। এক মাসের শিশুটিকে রেহাই দেওয়া হয়নি। গুলির সময় তিনি গড়াগড়ি দিতে দিতে কোনমতে নদীর পানিতে নেমে পড়েন। পরে নদী সাঁতরে চলে আসেন বাংলাদেশে। এখানে আসার পর কুতুপালংয়ে দেখা হয়েছে তাঁর স্ত্রীর বড় বোন শফিকার সাথে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া গুলিবিদ্ধ মো: আয়াজ (১৭) নামে এক কিশোর জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি করার সময় সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় হাতে ও বুকের একপাশে তিনটি গুলি লাগে। ওই অবস্থাতেই সে পালিয়ে এসেছে। পরে উখিয়ায় এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
বৈঠকের পর তুরস্কের ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান কুতুপালং নিবন্ধিত শরনার্থী শিবির ঘুরে দেখেন। নির্যাতিত কিছু রোহিঙ্গার হাতে তুলে দেন ত্রাণ সামগ্রী। পরে বিকেল পৌনে ৩ টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক সরকার বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তাও অব্যাহত রাখা হবে’
‘তুরস্ক ৩০ লাখ শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে’ উল্লেখ করে এমিলি এরদোগান আরও বলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সাথে আলোচনা করছেন।’
এসময় তুরস্কের পরhohiiরাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজ দেশে আক্রমনের শিকার হচ্ছেন। তাদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে তার জন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তুরস্ক এই দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে চায়। ভবিষ্যতেও রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তুরস্ক অবশ্যই বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কারন রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোগান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগামী শনিবার কাজাকিস্তানের রাজধানী আস্তানাতে ওআইসি’র (অর্গাইনাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রি) একটি শীর্ষ সম্মেলন হবে। সেখানে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হবে। দুই সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেষনেhohiiর আলোচনার সাইডলাইনে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি বৈঠক হবে। সেখানে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব, সাবেক মহাসচিব কফি আনান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহনের জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।’
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমারা তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’
এসময় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার -২ (মহেশখালী -কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন, কুতুপালং নিবন্ধিত শরনার্থী শিবিরের ইনচার্জ রেজাউল করিম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবুল খায়েরও উপস্থিত ছিলেন।

hohii

 

 

পাঠকের মতামত: