ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

১৪ দিনে প্রবেশ করেছে ২লাখ রোহিঙ্গা

রফিকুল ইসলাম :
মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে উত্তরাঞ্চলে চলমান সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অভিমূখি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ¯্রােত বেড়েই চলেছে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ দিনে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মিলিয়ে প্রায় ২লক্ষ্যের কাছাকাছি রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরনার্থী সংখ্যা শেষ পর্যন্ত তিন লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং মানবিক সংকটের আশংখা করেছে। মিয়ানমার বলেছে প্রমাণ পত্র ছাড়া কোন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।
সরজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ঘুমধুম, তুমব্রু, আঞ্জুমানপাড়া, রহমতের বিল, আমতলী সহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ¯্রােত লক্ষ্য করা গেছে। এ ¯্রােত যেন কমার কোন লক্ষণ নেই। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী সহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, টেকনাফ, উখিয়া ও পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম টমটম, অটো রিক্সা, সিএনজি, ট্রাক, বাস, জীপ সহ প্রায় সব যানবাহন করে ও পায়ে হেঁটে আসছে। এসব রোহিঙ্গার ¯্রােতের ঢল পূর্বের রোহিঙ্গা আশ্রয় স্থলের সাথে মিশে যাবে। উৎসুক জনতা বিভিন্ন স্থান থেকে রোহিঙ্গার ঢল দেখতে এসব এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে। চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় পূর্ব থেকে বসতি স্থাপনকারী রোহিঙ্গারা এখানে এসে তাদের অনুপ্রবেশকারী আত্মীয় স্বজনদের খোজে খোজে ঐসব এলাকায় নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এধরনের কক্সবাজার শহরের আলিজাহাল এলাকা থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী চেমন বাহারের সাথে গতকাল কথা হয় উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রে সামনে রাবার বাগানে। সে জানালো রাখাইনের মংডুর কোয়াংচি বং এলাকা থেকে তার আত্মীয় স্বজনরা গতকাল সকালে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিয়ে যেতে সে এখানে এসেছে। এধরনের অনেক রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে এসে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সচ্ছল রোহিঙ্গা পরিবার যারা এসেছে তাদের অনেকে উখিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এধরনের অনেক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাখাইনে তাদের প্রচুর সহায় সম্পদ, গাড়ি বাড়ি ছিল। যেগুলো এখন আর নেই। তাদের অনেকের ছেলে মেয়ে মধ্য প্রচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তারা খোজ খবর নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে।
এভাবে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল পর্যন্ত উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, থাইংখালী, বাঘঘোনা, টেকনাফের হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, উলুবনিয়া, লেদা, নয়াপাড়া, দমদমিয়া, শামলাপুর সহ বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এছাড়াও সীমান্তের বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় নিয়েছে আরো প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে প্রায় ২লক্ষের কাছাকাছি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ মুখপাত্র দীপায়ন ভট্রাচার্য বলেছেন, যেভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের সংখ্যা তিন লক্ষ্য ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে পালিয়ে আসা ও আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যাপক আকারে খাদ্য, চিকিৎসা সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে মানবিক বিপর্যয়ের আসংখ্যা করছেন অনেকে।
অদ্যদিকে মিয়ানমার সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলিমরা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে পূনরায় রাখাইনে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সীমান্তে কাটা তার সংলগ্ন প্রায় সর্বত্র স্থল মাইন স্থাপন করেছে। ইতিমধ্যে স্থল মাইন বিস্ফোরন ঘটে প্রায় ৬জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অফিস থেকে রাজধানী নেপিডুতে দেশী বিদেশী গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের যথাযথ প্রমাণ পত্র ছাড়া ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।
এদিকে গতকাল উখিয়ার ৫ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, অধ্যক্ষ শাহ আলম, নুরুর আমিন চৌধুরী, খাইরুল আলম চৌধুরী, গফুর উদ্দিন চৌধুরী এক যৌথ বিবৃতিতে ব্যাপক হারে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে রোহিঙ্গা আগমন ও সর্বত্র ছড়িয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সীমান্ত এলাকা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় কেন্দ্রিভুত রাখা সরকারী, সেরকারী ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, আশ্রয় স্থল ও স্বাস্থ্য সম্মত পয়ঃ নিস্কাশন করা, এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনকে আরো আন্তরিক হয়ে পুলিশ সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রনে রাখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসা এবং মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর পৈশাচিক অমানবিক নির্যাতনের শিকারের ঘটনাগুলো আর্ন্তজাতিক ভাবে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: