ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা

FB_IMG_1504001513668কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া ::

কোনও বাধা-নিষেধ নেই। নেই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণও। খেয়াল খুশিমতো যেখানে সেখানে চলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। জেলার আনাচে-কানাচে শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতেই নয়, কক্সবাজারের সীমানা পার হয়ে রোহিঙ্গারা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া, কিছু সচ্ছল রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকায় বাসা ভাড়া করে অথবা স্বজনদের বাসায় থাকছে বলে জানা গেছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করলেও তা উল্লেখযোগ্যা নয়।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত রয়েছে। দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। অনুপ্রবেশের পর প্রথমে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নেয় তারা। পরে সুযোগ বুঝে কৌশলে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে র্যাব সদস্যরা ৫০ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করে। পরে মানবিক দিক চিন্তা করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার সোনারপাড়া মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার শহরে দিকে যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা সুলতান আহমদ। সঙ্গে ছিল ৫ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। শহরের ঘোনারপাড়ায় বসবাসকারী এক স্বজনের বাসায় থাকতে যাচ্ছিলেন তারা। টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে আসলেও কোনও সমস্যা হয়নি বলে জানান ‍সুলতান। শুধু সুলতান আহমদ নয়, তার মতো অনেকেই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।

উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূর বলেন, ‘ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা নেই। এখন অসংখ্য পরিবার বাইরে খোলা আকাশের নিচে থাকছে। আবার অনেকেই কোথায় যেন চলে যাচ্ছে।’ এজন্য তিনি অভাব অনটনকে দায়ী করেছেন। শুধু কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প নয়, টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা ক্যাম্পেও রোহিঙ্গাদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে দেশের অন্য কোথাও ছড়িয়ে যেতে না পারে, সেজন্য আমরা খুবই তৎপর। এ কারণে রোহিঙ্গাদের একত্রে রাখতে আমরা সবাই কাজ করছি।’ রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে থাকলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

র্যা-৭ কক্সবাজার কার্যালয়ের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে একটি যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে ৫০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, খুন ও মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্মে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে আমরা তেমনটি দেখেছি। এজন্য মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের একত্রে রাখতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।’

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ ক’টি পোস্টে হামলা চালায় সেদেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্য ও বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনার পর কঠোর অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ রোহিঙ্গাদের নানাভাবে নির্যাতন করছে। এ কারণে প্রতিদিন পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা।

পাঠকের মতামত: