ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘মাইকে…আজান দিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে’

mahfuz-e1444194134568-234x300 – মাহ্ফুজুল হক –

কে ওই শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আজানের ধ্বনি !
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধ মনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।

আজানের প্রতি মহাকবি কায়কোবাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার অনবদ্য প্রকাশ উপরের পংক্তি কয়টি। আজানের ধ্বনি, আজানের সুর তাঁর মর্মকে স্পর্শ করেছে, তাঁর কানে সুমধুর সুধা ঢেলে দিয়েছে। আজান শুনে তাঁর প্রাণ আকুল হয়েছে, মন উতলা হয়েছে, ধমনী আনন্দে নেচেছে। তিনি আজান দাতা সেই মুয়াজ্জিনকে খুঁজে বেড়িয়েছেন পরম মমতায়। আজানের ওই মধুর তানে তিনি পাগলের মতো ছুটে গিয়েছেন মসজিদে রাতে ও দিনে।
আজান একটি আবাহন, একটি আহ্বান। আজানে উচ্চারিত শব্দাবলীর দিকে নজর বুলালেই আমরা এর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারি। বলা হয়, আল্লাহু আকবার ; আল্লাহু আকবার – আল্লাহ্ মহান ; আল্লাহ্ মহান। আশ্হাদুআন্ লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ ; আশ্হাদুআন্ লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন প্রভূ নাই ; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন প্রভূ নাই। আশ্হাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ্ ; আশ্হাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ্ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল ; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল। হাইয়া আলাস্ সালাহ্ ; হাইয়া আলাস্ সালাহ্ – নামাযের দিকে এসো ; নামাযের দিকে এসো। হাইয়া আলাল ফালাহ্ ; হাইয়া আলাল ফালাহ্ – কল্যাণের দিকে এসো ; কল্যাণের দিকে এসো। আল্লাহু আকবার ; আল্লাহু আকবার – আল্লাহ্ মহান ; আল্লাহ্ মহান। লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ – আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। ফজরের আজানে বাড়তি এই কথাগুলো যোগ করা হয়- আস্ সালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম ; আস্ আলাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম – ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম ; ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম।
১৫ টি বাক্য বিশিষ্ট এই আহ্বানটি (আজান) দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পাঁচবার প্রতিটি মসজিদ থেকে উচ্চ স্বরে মুয়াজ্জিনের স্বকন্ঠে ঘোষিত হয়। মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘কেউ আল্লাহ্র নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহ্ভীতি প্রসূত।’ (সূরা হজ্জ্ব) এখানে ‘শা-আয়েরাহ্’ অর্থ আলামত বা চিহ্ন। যে সকল বিধানকে মুসলমান হওয়ার আলামত মনে করা হয় সেগুলোকে ‘শা-আয়েরে ইসলাম’ বলা হয়। তন্মধ্যে কোরবাণী, হজ্জ্বের বিভিন্ন বিধান, দাড়ি, টুপি, হিজাব ইত্যাদি। আজানও অন্যতম শা-আয়েরে ইসলাম। ‘মুয়াজ্জিন’ একটি ইসলামি পরিভাষা যা দিয়ে আজান দাতাকে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রতিটি মসজিদ থেকে দৈনিক পাঁচবার উল্লিখিত শব্দাবলী সম্বলিত আজান মুয়াজ্জিনকে স্বকন্ঠে পাঠ করতে হয়। আমাদের ছেলেবেলায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এর আজানখানায় ওঠে এক বৃদ্ধ মুয়াজ্জিন সুললিত কন্ঠে জোর গলায় আজান দিতেন যা আমরা এন্ডারসন রোডের বাসায় থেকেও স্পষ্ট শুনতে পেতাম। আহা ! সেই সুন্দর কন্ঠের সুর লহরি এখনো আমার প্রাণে বাজে। হালে মানুষ. যানবাহন, কল-করখানা ইত্যাদি বেড়ে যাবার কারণে খালি মুখে দেওয়া আজান আর শোনা যায় না। লাউড স্পিকারযোগেই আজান দিতে হয়। এক্ষেত্রে আজানের রেকর্ড বাজানোরও কোন সুযোগ নেই। প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয় আজান ফুলের নাম শুনে থাকবেন যা মুয়াজ্জিন কর্তৃক শুধু আজান প্রদানকালেই প্রস্ফুটিত হয় এবং অন্যসময় তা বন্ধ থাকে। আজানে এগার বার মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম উচ্চারণ করা হয়। যিনি ¯্রষ্টা, সবকিছুর মালিক-মোখতার তাঁর নাম উচ্চস্বরে বলাটাই স্বাভাবিক। পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, ‘ওয়া রব্বাকা ফাকাব্বির’ অর্থাৎ তোমার প্রভূর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। সূরা মুদ্দাচ্ছির এর এই আয়াতটিতে রসূলুল্লাহ্কে (সঃ) ঘুম থেকে জেগে প্রথম কাজ হিসেবে মহাপ্রভূর বড়ত্ব ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যিনি কূল-মখলুক, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড, ভূমন্ডল-সৌর মন্ডল, আকাশ-পাতাল, সাগর-মহাসাগর, মহাশূর্ণ্য-গ্যালাক্সি তথা সমগ্র সৃষ্টির ¯্রষ্টা তার মহাপবিত্র নাম কীভাবে উচ্চারণ করতে হবে – এইটুকু বোধজ্ঞান যাদের নাই তাদের ব্যাপারে কথা বলাও এক ধরণের উলু বনে মুক্তা ছড়ানো। বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, ‘যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয় তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায় তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামাত বলা হয় তখন আবার দূরে সরে যায়।’ আজ যারা পৃথিবীর ত্রাণকর্তা সেজে শব্দ দূষণ নামক দুষ্কর্ম থেকে তাদের মানুষ তথা তাদের দেশকে রক্ষা করতে চান তারা কি এই ছোট্ট কথাটুকু স্বীকার করবেন যে, এই দুনিয়ার মালিকানা তাদের নয়। কবি বলেন, ‘পরের জায়গা, পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।’ মহাপ্রভূ বলেন, ‘ক্বুলিল্লাহুম্মা মা-লিকাল মুল্ক।’ অর্থ- বল, সা¤্রাজ্যের মালিক আল্লাহ্। মালিকের দেশে তাঁর নাম বজ্রকন্ঠে না বলে কি চাকর-গোলামের নামের মতো নিচু গলায় নিম্নস্বরে বলা হবে ? আজান বড় গলায় বজ্র নিনাদে দেয়া হবে- এটাই নিয়ম, এটাই যথাযথ। একথা সর্বজন বিদিত যে, প্রতিটি মুসলমানকে বাধ্যতামূলকভাবে দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হয়। নামাযের ওই পাঁচটি সময় হলো – সূর্যোদয়ের পূর্বে, ঠিক দ্বিপ্রহরের সামান্য পরে, অপরাহ্নে (আফটার নূন), সূর্যাস্তের পর পর এবং রাতের প্রথম প্রহরে। ওই পাঁচটি সময়ে প্রতিটি মসজিদে মুসলমান পুরুষরা একত্রিত হয়ে এক ইমামের পেছনে তাঁর নির্দেশনা (কমান্ড) মেনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে, নত হয়ে (রুকু), অবনত হয়ে (সিজ্দা) এবং বসে নামায আদায় করেন। দাঁড়ানো অবস্থায় ইমাম পবিত্র কোরআন মজিদ থেকে কিছু অংশ শব্দ করে আবার নিঃশব্দে পড়েন আর পেছনের সকল মুসল্লি (নামাজরত মুসলমানগন) তা মনযোগ দিয়ে শুনেন। এই হলো নামাযের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। শারীরিকভাবে সমর্থ প্রতিটি পুরুষ মুসলমানকে বাধ্যতামূলকভাবে (ওয়াজিব) মহল্লার মসজিদে গিয়ে ওই নামাযে অংশগ্রহন করতে হয়। আর আমাদের দেশে মহিলারা সচরাচর স্বীয় বাসভবনেই ওই নামায আদায় করে থাকেন। প্রতিটি মুসলমানের উপর দৈনিক পাঁচবার উল্লিখিত নামায আদায় করা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য (ফরজে আইন)। যদি কোন মুসলমান তা পালন না করেন তবে তিনি অপরাধী বিবেচিত হবেন এবং সেজন্য তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবার যদি কোন মুসলমান তা পালন করতে অস্বীকৃত হন তাহলে তিনি ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে যাবেন। অর্থাৎ তাকে আর মুসলমান বলে গন্য করা হবে না।
ইসলামের বিধি-বিধানগুলো এমন যে, প্রত্যেক মুসলমানকে এগুলোর সাথে সরাসরি এবং সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত থাকতে হয়। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি নিজেকে মুসলমান বলে ঘোষণা করলাম আর নিজের ইচ্ছে মতো জীবন যাপন করলাম। যাচ্ছেতাই জীবন ধারণ করার পরেও ধরে নিলাম যে, আমিতো মুসলমান। না, বিষয়টা মোটেও তা নয়। ইসলাম গ্রহন করার সাথে সাথে তিনি ইসলামের যাবতীয় বিধি-নিষেধের আওতায় এসে গেলেন এবং তাকে সেগুলো মেনে চলতে হবে। মুসলমান মাত্রকেই দৈনিক পাঁচবার নামায পড়তে হয়, তা-ও আবার নির্দিষ্ট সময়ে। কর্মব্যস্ততা, ঘুম, আলস্য ইত্যাদির কারণে অনেক সময় মানুষ নামাযের সময় (ওয়াক্ত) ভুলে যায়। আর তা স্মরণ করিয়ে দিতেই প্রয়োজন পড়ে আজানের। ‘যাদের আজান শোনা দরকার তারা প্রয়োজনে মসজিদের সাথে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে নিজেদের কানে লাগিয়ে শুনতে পারে।’ এহেন কথা নিছক অর্বাচীন ছাড়া আর কেউ বলতে পারেন না। একটি মুসলমান প্রধান দেশে আজান একটি সাধারন জনগন সংশ্লিষ্ট আ-ম বিষয়। এটির সাথে সাধারন জনগনের একটি অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য যেমন জড়িত পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির আবেগ-অনুভূতিও জড়িত। আজান হলো একটি ঘোষণা, এনাউন্সমেন্ট। আগেকার দিনে যখন মাইকের প্রচলন হয়নি তখন বিভিন্ন জনসমাবেশ স্থলে গিয়ে ঢোল পিটিয়ে রাজকীয় বা সরকারি ঘোষণা প্রচার করা হতো। আর বর্তমানে তা মাইক দিয়ে করা হয়। ‘যাদের আজান শোনা দরকার’ এই শব্দাবলী দ্বারা তিনি কি একথা বোঝাতে চান যে, তাঁর আজান শোনার দরকার নেই। যদি তাই হবে তবে তিনি ও তাঁর স্বজাতীয়দের জন্য করুণা প্রদর্শন ছাড়া মুসলমানদের আপাততঃ আর কোন কর্তব্য নেই। আমরা দ্যর্থহীন ভাষায় বলছি, আমাদের আজান শোনার দরকার আছে এবং একথা এদেশের নব্বই শতাংশ মানুষের। একটি ভূখন্ডের নব্বই শতাংশ মানুষের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ভাবা হবে নাকি ‘অনিচ্ছুক’ জাতীয় শূর্ণ্য দশমিক এক শতাংশ বা তারও কম লোকের চয়িত ‘শব্দ দূষণ’ বন্ধ করা হবে ? দৈনিক ইত্তেফাক এর মতো এদেশের অত্যন্ত মর্যাদাশীল একটি দৈনিকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের কন্ঠে এহেন কথা মোটেই মানায় না। খবরে প্রকাশ, গত ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬ তারিখ হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘.. এভাবে শহরের মধ্যে যেকোন ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, তাবলীগ বন্ধ করা উচিত। মসজিদ থেকে মাইকে উচ্চ শব্দে আজান দিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘যাদের আজান শোনা দরকার তারা প্রয়োজনে মসজিদের সাথে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে নিজেদের কানে লাগিয়ে শুনতে পারে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক চাইলেন ক্লিন ঢাকা, গ্রীণ ঢাকা গড়তে গণমাধ্যমের সহায়তা আর তার জবাবে তাসমিমা হোসেন দিলেন ‘আজান শব্দ দূষক’ থিউরি। (ইসলাম) ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, তাবলীগ, আজান ইত্যাদি কেন তাদের টার্গেট ? এদেশে ওইসব ব্যতীত আর কি কোন অনুষ্ঠান মাইক বাজিয়ে, লাউড স্পিকারযোগে বিকট শব্দ করে করা হয় না ? ওপেন এয়ার কনসার্ট, অষ্টপ্রহর হরিনাম যজ্ঞ, দূর্গা পূজা, বর্ষ বরণ ইত্যাদি থেকে শুরু হেন অনুষ্ঠান নেই যাতে মাইক বাজানো হয় না। কই, তখন তো কেউ শব্দ দূষণ জাতীয় শব্দাবলী ভুলেও মুখে আনেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দিবস পালন করতে যেয়ে শহর-গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র গাছে, বৈদ্যুতিক থামে বা অন্যভাবে মাইক ঝুলিয়ে সারা দেশে যে পুরনো ক্যাসেটগুলো দিনব্যাপী অনবরত বাজানো হয়, তাতে শব্দ দূষণ হয় কিনা ‘মিসেস’ যদি দয়া করে বলতেন।  রাজনৈতিক জনসভাগুলো যা হর-হামেশাই যত্রতত্র অনুষ্ঠিত হয় তাতে একটি দুটি নয়, শতশত মাইক ব্যবহার করা হয়। ওই সকল রাজনৈতিক জনসভাগুলো শব্দ দূষণ করে-এমন কথা কি কস্মিনকালেও ওই ‘প্রকৃতিপ্রেমী’দের মুখ থেকে কেউ শুনেছেন ? আচ্ছা বুঝলাম, ‘মসজিদ থেকে মাইকে উচ্চ শব্দে আজান দিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে।’ তো, তিনি আবার ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, তাবলীগ বন্ধ করার কথা বললেন কেন ? তিনি তো বলেননি যে, এসব অনুষ্ঠান শব্দ দূষণ করছে। তারপরও এসব বন্ধ করার দাবী করছেন। আসলে এখানে শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, ক্লিন, গ্রীণ ইত্যাদির প্রতি মুহাব্বত নয় বরং আসল লক্ষ্য অন্যখানে। ইসলাম, ইসলামি পরিভাষা, ইসলামি পরিচ্ছদ তথা ‘শা-আয়েরে ইসলাম’কে উপহাস ও পরিহাস করতে পারলে কিছু লোক মনে করেন তারা এক বিরাট কাজ করে ফেলেছেন এবং উৎসাহদাতা একটি গ্রুপও তাৎক্ষণিক তাদের পক্ষাবলম্বন করতঃ তাদের পিঠ চাপড়াতে থাকেন। কেউ যদি তার বা তাদের কথার প্রতিবাদ করেন তো তখন জোরে শোরে বলবেন, মৌলবাদি, ধর্মান্ধ, জঙ্গি গোষ্ঠি স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দিচ্ছে, তাদের হুমকি দিচ্ছে। ব্যস, আর যায় কোথায় ? হৈহৈ রৈরৈ করে মার-মার কাট-কাট জাতীয় রণ ভঙ্গিমায় তথাকথিত প্রগতিবাদি, চেতনাধারিরা মাঠে নেমে পড়বেন। দেশ বিদেশ থেকে বক্তব্য-বিবৃতি আসতে থাকবে দেদারছে। রাতারাতি তিনি বা তারা জিরো থেকে হিরো বনে যাবেন ও হয়ে পড়বেন প্রগতিবাদীদের নেতা। কেল্লা ফতেহ্। তার বা তাদের মকসুদটাও ছিলো তা-ই। সবকুচ আলবৎ ঠিক হ্যায়। ইসলাম নামক ধর্মটাকে কটাক্ষ করতে পারলেই বিরাট অর্জন। যা কিনা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও পাওয়া দুঃসাধ্য। চলমান এই ফ্যাশনে হালে অনেকেই শরিক হচ্ছেন। আর তাসমিমা হোসেন তার সর্বশেষ সংযোজন কিনা – বুঝতে কষ্ট হয়কি ?
সম্প্রতি তিনি তাঁর ওই বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামের ধর্মীয় মূল্যবোধ আমার ভেতরে সবসময় জাগরূক রয়েছে। জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে সেই মূল্যবোধ থেকে আমি পরিমিতবোধের পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করি এবং তা বলেও থাকি। ইসলামি এই মূল্যবোধের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে কিছু অসঙ্গতি ও অপূর্ণতা থেকে যেতে পারে। আমি মূলত বলতে চেয়েছি, শব্দ দূষণ না ঘটিয়েও যেকোন ইসলামি অনুষ্ঠান ও আচরণবিধি পালন করা সম্ভব। আমার বক্তব্যে কোথাও কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত এবং একজন মুসলমান হিসেবে খুবই বিব্রত বোধ করছি। বিষয়টি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।’
শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া শুভ লক্ষণ। মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ্ তায়ালা গফুরুর রহীম-ক্ষমাশীল দয়াময়। তিনি যে কারো অপরাধ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু এখানে মহাপ্রভূর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করা হয়েছে-এমন কোন ইঙ্গিত আমরা পাইনি। আজান বিষয়টি সরাসরি মহাপ্রভূ প্রদত্ত একটি বিধানের সাথে সংশ্লিষ্ট। মুসলমানগনের মূল্যবোধে আঘাত লেগেছে, তারা আহত হয়েছেন। ব্যাখ্যাতেও তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাননি, শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। বলছেন, শব্দ দূষণ না ঘটিয়েও যেকোন ইসলামি অনুষ্ঠান ও আচরণবিধি পালন করা সম্ভব। অর্থাৎ তিনি এখনও বলছেন যে, আজান ও অন্যান্য ইসলামি অনুষ্ঠান মাইক বাজিয়ে শব্দ দূষণ করেই চলেছে আর তাঁর মতে, শব্দ দূষণ না ঘটিয়েও ওইসব অনুষ্ঠান পালন করা সম্ভব। বুঝা গেলো তাঁর প্রথম বক্তব্যটি তাৎক্ষণিক ছিলো। দ্বিতীয়টিও কি তাৎক্ষণিক ?
প্রিয় মুসলমান ভাই-বোনেরা, আপনারাও কি মনে করেন যে, ‘মাইকে…আজান দিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে’ ?

Mahfooz ul Huq

[email protected] সেল নম্বর : ০১৮৬৯-৮৬৬৯০০

পাঠকের মতামত: