ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্তে আশ্রয় নেয়া ৪৯৫ হিন্দুর মানবেতর দিনযাপন

Rohinggya-Hindu-3_1বিশেষ প্রতিবেদক :

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৪৯৫ হিন্দু একটি মুরগী ফার্মে মানবেতর দিনযাপন করছে। পূজা উদযাপন পরিষদ খাবারের ব্যবস্থা করলেও তাদের ঘুমানোর জায়গা মেলেনি। একটানা দীর্ঘ ৪ দিন ঘুমাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেকে।

উখিয়া কুতুপালং পশ্চিম হিন্দু পাড়ার পাশে মুরগীর খামারে আশ্রয় নেয়া মিন্টু রুদ্র জানান, মুরগীর খামারটিতে কোনরকমে ঠেসাঠেসি করে বসার জায়গা হয়েছে। ৩ রাত কেউ ঘুমাতে পারেনি। এতে শিশুসহ অর্ধশত লোক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতবৃন্দ পরিদর্শনকালে সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে। এছাড়া নি:স্ব হাতে সবাই আশ্রয় নেয়ায় তাদের কাপড়, থালাবাসনসহ জীবনধারনের যা যা প্রয়োজন তা কিছু নেই। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রনজিত দাশ জানান, মিয়ানমার থেকে আসা হিন্দুদের জন্য পৃথক শরনার্থী শিবির করা প্রয়োজন । তাই তিনি একটি নির্ধারিত স্থানে আশ্রয় দিতে হিন্দুদের জন্য শিবির স্থাপন করার দাবি জানান।

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, জুলুম, নিপীড়ন, ঘর বাড়িতে আগুন, মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতায় নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও।চলমান সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ৮৬ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।যাদের অধিকাংশই রাখাইনের মংডুর ফকিরাবাজার গ্রামের বাসিন্দা।আর ৩০ আগষ্ট বুধবার রাতেই প্রাণ ভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ৪১২ হিন্দু নারী-পুরুষ শিশু উখিয়ার কুতুপালং এলাকার পশ্চিম হিন্দু পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরো ৮৩ জন আশ্রয় নেয়। এছাড়া সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অপেক্ষা করছে আরো শতশত হিন্দু।তারাও প্রবেশের অপেক্ষা করছে।

শনিবার উখিয়ার কুতুপালং এর পশ্চিম হিন্দু পাড়া সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, ১৬০ পরিবারের ৪৯৫ জনের হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশু একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে মানবেতর দিনযাপন করছেন। সহায় সম্বলহীন এ হিন্দু পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত খাদ্যের ব্যবস্থা পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে করা হলেও তাদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা না থাকায় করুণ অবস্থায় তাদের ঠেসাঠেসি করে বসে থাকতে হয়েছে। ঘুমানোর কোন সুযোগ নেই, কোন টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা।

কুতুপালং ৩নং হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মেম্বার উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা কুতুপালং আশ্রয় নিয়েছে। তবে তাদের এখান থেকে সরিয়ে নিতে একটি গোষ্টি নানা ষড়যন্ত্র করছে।

আশ্রয় নেয়া হিন্দুরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে রাখাইনের মংডুর চিকনছড়ি,ফকিরাবাজার সহ কয়েকটি হিন্দু অধ্যূষিত গ্রামে কিছু স্বশস্ত্র লোক তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে।তাদের পুরো পাড়া ঘিরে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে অনেককে গুলি করে হত্যা করছে।শিশু ও মহিলাদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেকে পরিবার আতংকে পাহাড়, ধান ক্ষেতে ও বনজঙ্গলে পালিয়ে লুকিয়ে আছে।কিছু হিন্দু পরিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাধা ও ভয়ের কারনে কেউ ঢুকতে পারছেনা।ক্ষুধার জ্বালায় তারা রাতের আধারে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান।

পালিয়ে আসা মিয়ানমারের মংডুর চিকনছড়ি গ্রামের কুলালল পাড়ার বকুল বালা জানান, কিছু স্বশস্ত্র লোক তাদের গ্রামে ঢুকে তাদের উপর অত্যাচার চালায়।এক পর্যায়ে তার স্বামী কালু রুদ্র,কন্যা সন্ধ্যাবালা ও নাতী বাপ্পুকে তুলে নিয়ে যায়।পরে খবর পেয়েছি নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এখন এখানে মৃত স্বামীর জন্য কর্মক্রিয়া করতে সহযোগিতা পাবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রবীন্দ্র দাশ রবি জানান, আশ্রয় নেয়া হিন্দুদের স্থায়ী শরনার্থী ক্যামপ খোলা না হলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই দ্রুত তাদের জন্য স্থায়ী সমাধান করা প্রয়োজন।

 

পাঠকের মতামত: