ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্তে তৎপর লুটেরা সিন্ডিকেট, স্বর্বস্ব হারাচ্ছে রোহিঙ্গারা

czdrohi.,বিশেষ সংবাদদাতা :::
ওপার থেকে এপারে সে লুটেরাদের কবলে পড়ে স্বর্বস্ব হারাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মৃত্যু থেকে বাঁচতে এপারে এসেও দুঃস্বপ্ন যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। পালিয়ে এসে পড়ছে লুটেরাদের হাতে। রোহিঙ্গাদের স্বর্ণ, মুল্যবান জিনিস পত্র সহ গরু মহিষ ও ছাগল কেড়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নেওয়া চিহ্নিত লুটেরা। পাশপাশি যুবতী নারী নির্যাতন করারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে এ সংত্রুান্ত বেশকিছু অভিযোগ গেলেও লুটেরাদের লুটপাট থামেনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য থেকে জানা গেছে, রাজাপালং মুহুরীপাড়ার মাসুদ আমিন, সাইদুল আমিন, কেসকেসি, অহিদুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক নামধারী তানভীর শাহরিয়ার, কুতুপালং এর জানে আলমসহ একটি সিন্ডিকেট লুট ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত। সিন্ডিকেটে রয়েছে অন্তত ১০০ লোক। তারা সীমান্তের পয়েন্টগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। অনুপ্রবেশের সাথে তাদের শিকারে পড়ে যায় রোহিঙ্গারা। তবে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এমন ঘটনা শুনলেও লুটকারীরা তার এলাকার নয় বলে দাবী করেন। তিনি জানান, ঘটনায় জড়িতরা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। সেখানকার প্রশাসনই এ বিষয়ে ভাল জানবেন।
বৃহস্পতিবার সীমান্তর রোজু আমতলী ও হাতিমুরা সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গার স্রোত। এসব রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করে টমটম ও বিভিন্ন গাড়ী যোগে দালালের সহায়তায় পৌঁছে যাচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী বস্তিতে। এদের কেউ কেউ চলে গাড়ী যোগে দুরদুরান্তে দেশের আনাচে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে রেজু আমতলী পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৩ মহিলার ৮ টি গরু মারধর করে ছিনিয়ে নেয় স্থানীয় লুটেরারা। রাস্তার পাশে এ তিন মহিলাকে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে আজাহারি করতে দেখা যায়। একই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের লেইনছি পাড়া গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ নবী হোসেনের ৬ টি গরু জোরপূর্বক কেড়ে নেয় দুবৃত্তরা।

রেজু আমতলি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৮টি গরু ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। সহায় সম্বল হারিয়ে পথের ধারে বসে কাঁদছে রোহিঙ্গা তিন নারী। বৃষ্টিতে ভিজে আহাজারী করছে। কিন্তু তাঁদের আহাজারী শুনার কেউ নেই।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেম্বার মোজাম্মেল ও মুছা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাইচ্ছাদং পাড়ার ফকির আহামদের পুত্র এহসান ও মৃত মোস্তফার পুত্র খলিলের ১২ টি মহিষ লুট করে তার এলাকায় নিয়ে যায়। এসব মহিষ থেকে ২ মেম্বার ৪ টি রেখে বাকী ৮ টি মহিষ বাইরে বিক্রি করে দেয়। পরে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় ব্যাপারটি। পরে বুধবার রাতে উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীকে ডেকে এনে লুটকৃত মহিষগুলো উদ্ধার করে চেয়ারম্যানের জিম্মায নিতে নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় লুটেরাদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেনি।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন,লুটকৃত মহিষগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বুধবার রাতেও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় জনগন জানান।


হাতিমুরা গ্রামের ফজল করিম জানান, সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে,কোন রোহিঙ্গার দল বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করলেই পড়ছে লুটেরাদের কবলে। এসব লুটেরারা মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ব্যাপক মারধর করে তল্লাসী পূর্বক সবকিছু কেটে নিচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সাথে করে নিয়ে আসা শত শত গরু,মহিষ,ছাগল ও স্বর্ণ সহ মুল্যবান জিনিস কেড়ে নিচ্ছে লুটেরার দল। এটা এখন বাংলাদেশ সীমান্তবতী এলাকা রেজু আমাতলী,হাতিমুরা,দরগা বিল ডেইলপাড়ার প্রতিদিনকার চিত্র কিছুদুর পর পর এসব লুটেরার দল উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী বস্তি মুখী রোহিঙ্গাদের বহনকারী গাড়ী তল্লাসী চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উপর চরম নির্যাতনের পর সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। রাতের আধারে মিয়ানমার থেকে সীমান্তে পেরিয়ে আসা যুবতী নারীদেরও অহরহন করা হচ্ছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মন্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তে জিরো পয়েন্টে এরকম কোন ঘটনা ঘটার কথা নয়। বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার সময় বেশকিছু গরু আটক করেছে বিজিবি। তাছাড়া যাতে বাংলাদেশের কোথাও নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাথা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: