ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা সংকট : মসুলিমদের সাথে হিন্দুরাও আক্রান্ত

নুপা আলম :
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কেবল রোহিঙ্গা মুসলিম না রোহিঙ্গা হিন্দুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। মুসলিমদের পাশা পাশি হিন্দুদের বসত ঘরে আগুন দেয়া, হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিমদের সাথে সীমান্ত পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৮ টি হিন্দু পরিবারের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য মিলেছে। যে ৮ পরিবারের ৬২ জন হিন্দুকে হত্যার কথা বলেছেন তারা।
গত সোমবার সীমান্ত অতিক্রম অনুপ্রবেশ করে এসব ৮ টি পরিবারের ১৬ জন নারী ও শিশু আশ্রয় নিয়েছিলেন কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু তাদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের পুলিশ পাহারায় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কাছে দেয়া হয়। যে ১৬ জন বর্তমানে উখিয়ার একটি হিন্দু পল্লীতে রয়েছে। সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছেন আরো ২ শতাধিক হিন্দু পরিবার।
উখিয়ার হিন্দু পল্লীতে আশ্রয় নেয়া ৮ পরিবারের সদস্যরা হলেন, মিয়ানমারের বলীবাজার এলাকার স্বপন শীলের স্ত্রী প্রমিলা রানী (২০), তার সন্তান স্বপনা বালা (১), রণজিত কুমারের স্ত্রী বীণা বালা (২২), তার সন্তান রেশমী বালা (৫), মানিক কুমার (৩), শ্রীমন্ত কুমারের স্ত্রী সুশীলা বালা (১৯), সন্তান চুচমা বালা (১), মৃলঙ্গা কুমারের স্ত্রী অনিতা বালা (১৮), বিন্নাদের স্ত্রী রুচমা বালা (১৯), পুবন চন্দ্রের স্ত্রী গঙ্গা বালা (২৪), সন্তান রবন নাথ (৫), মিলনের কন্যা রাজ কুমারী (১৬), পুবন ধরের স্ত্রী রিকা বালা (২৬), সন্তান রবণ নাথ (৫), প্রল্লব নাথ (৩) ও প্রভীম নাথ (২)।
উখিয়া হলদিয়া ইউনিয়ণ পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ও উখিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি জানান, মঙ্গলবার কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের ইনচার্জ রেজাউল করিম ৮ পরিবারের ১৬ জন নারী ও শিশুকে তার জিম্মায় দেন। ক্যাম্পে তারা নিরাপদ নন বলে তিনি নিজের জিম্মায় এনে এসব হিন্দু নারীদের সাথে আলাপ করেন। ওখানে সকলের কোন না কোন আত্মীয় উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। তিনি নিজ দায়িত্বে এসব হিন্দুদের আত্মীয়দের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
এ ৮ পরিবারের সাথে আলাপ করে মিয়ানমারের সংঘাতে ৬২ জন হিন্দুকে হত্যার তালিকা তিনি পেয়েছেন। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা হিন্দুদের দেয়া তথ্য মতে সীমান্তে আরো ২ শতাধিক হিন্দু পরিবার অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য। ওই সব পরিবারের উপরও চালানো হয়েছে ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যা।
উখিয়া হিন্দু পল্লীতে আশ্রয় নেয়া মিয়ামারের কয়েকজন হিন্দু নারীর সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের দেয়া তথ্য শতে, শনিবার রাতে আক্রান্ত হয় তারা। পুরো শরীর কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা সশস্ত্র লোকজন এসে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় ঘরে আগুন দেয়ার পাশাপাশি লুট করা হয় স্বর্ণও। এরপর বয়সে কম নারীদের এক পাশা রেখে বৃদ্ধ নারী সহ পুরুষদের জবাই করে হত্যা করা হয়। এসব নারীর বর্ণণা মতে তাদের উপর নির্যাতনকারিরা মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের একটি অংশ হতে পারে। এসব নারীরা এও স্বীকার করেছেন, মিয়ানমারে ব্যাপক হত্যা চলছে। মুসলিমদের মারা হচ্ছে ব্যাপক। তারা সর্বদায় মুসলিমদের সাথে মিলে মিশে ছিলেন।
মিয়ানমারে বিদ্রোহী এআরএসএ সংগঠনের মূখপত্র বলে পরিচিত আতাউল্লাহ গত ২৮ আগস্ট ইউটিউবে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, তাদের সংগ্রাম জাতিগত মুক্তির সংগ্রাম। এ সংগ্রাম কেবল মিয়ানমারের রাষ্ট্রিয় বাহিনীর সাথে। কোন অন্য ধর্মের লোকের উপর তার হামলা করছেন না। তবে মিয়ানমার বাহিনী তাদের বিভ্রান্ত করতে তাদের পোষাক পড়ে বৌদ্ধ সহ অন্যান্য মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সহযোগিতা চান ওই ভিডিও বার্তায়।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ৩০ হাজার অতিক্রম, হিন্দু ৪১২ জন ঃ মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে নতুন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে। যার মধ্য ৪১২ জন নতুন হিন্দু রোহিঙ্গা রয়েছে। আইওএমর হিসেবে শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৮ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে বলে বিভিন্ন সংস্থা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্য নতুন হিন্দু রয়েছে ৪১২ জন। যারা কুতুপালং হরি মন্দির সংলগ্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হিন্দু কল্যাণ ট্টাস্টি বোর্ডের সদস্য প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন।

পাঠকের মতামত: