ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্ত খুলে দেয়ার গুজব একদিনেই ঢুকেছে ২০ হাজারের মত রোহিঙ্গা

Capture-2-1-960x540-960x540কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া ::

বৃহস্পতিবার একদিনেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা। স্থানীয় দালাল চক্র গতকাল সকাল থেকে সর্বত্র গুজব রটিয়ে দেয় সরকার বর্ডার খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে মজলুম রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অসুবিধা নেই। এভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে স্থানীয় সচেতন মহল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিজিবি কড়া সতর্কতায় থেকে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে প্রচুর পরিমানের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকিয়ে রেখেছে।

গতকাল বৃস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গাদের নানা দুর্দশা প্রত্যক্ষ করা গেছে। নাফ নদীর তীর সংলগ্ন উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া, রহমতের বিল, ধামনখালী পয়েন্ট গুলোতে প্রায় ৩/৪ হাজারের মত রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটকিয়ে রাখতে দেখা গেছে। তবে স্থানীয় সচেতন লোকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, স্থানীয় দালালরা নানা কৌশলে রাতের অন্ধকারে ঠিকই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সহযোগীতা দিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নিচ্ছে। স্থল সীমানা জলপাইতলী, তুমব্রু পশ্চিম কুল পাহাড়ি খাদে ও তুমব্রু বাজারের দক্ষিণ পূর্বে তুমব্রু খালের ওপাড়ে মিয়ানমার অংশে বিজিবি প্রতিরোধের মুখে জঙ্গল ও পলিথিন দিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা।

পাহাড়ী সীমান্ত বাশপাড়ি ও থোয়াইংগা কাটা সীমান্তে পাহাড়ি জঙ্গলে বিজিবির প্রতিরোধের মূখে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় অবস্থান করছে প্রায় ২২/২৫ হাজার রোহিঙ্গা। এসব স্থানে অবস্থান নেয়াদের অনেকে খাদ্য, পানীয় জল ও চিকিৎসা সংকটে রয়েছে এবং এধরনের আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গা সংখ্যা অন্তত ২০/২৫ হাজারের মত বলে ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান। এদিকে পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা আমতলী, রেজু, ফাত্রাজিরি, মনজায়পাড়া, আশারতলী, বরইতলীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে স্থানীয় দালালদের সহযোগীতায় গতকাল ভোর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দলে দলে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ কুতুপালং, বালুখালী, শামলাপুর অনিবন্ধিত ও নিবন্ধিত শিবিরে আশ্রয় নিলেও কিছু অংশ আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে স্থানীয় লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

সরজমিনে খোজ নিয়ে দেখা গেছে, উখিয়ার বালুখালী অনিবন্ধিত শিবিরের ৪ হাজার ও কুতুপালং নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত শিবিরে পূর্বে থেকে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১৬ হাজার সহ প্রায় ২০ হাজার পরিবারের প্রতিটি ঘরে গত এক সপ্তাহ ধরে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় মিলেছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে কুতুপালং ও বালুখালীতে বন বিভাগে সামাজিক বনায়ন, পাহাড়, টিলায় ঘর তুলতে দেখা গেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির লোকজন এসব রোহিঙ্গাদের তালিকা ভুক্ত করে এনার্জি বিস্কুট দিচ্ছে। তবে তা অপর্যাপ্ত ও অনেকে পাচ্ছে না। সংস্থাটির খাদ্য বিতরন প্রকল্পে মাঠ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহিন জানান গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কুতুপালং এ প্রায় ২০/২২ হাজার ও বালুখালীতে ৮/১০ হাজার সহ প্রায় ৩০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। উক্ত সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ও বিষয়টি সমর্থন করেন। কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির ইনচার্জ ও সহকারী কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান নিবন্ধিত ১৪ হাজার শরনার্র্থীর সাথে মিয়ানমারে গত বছরের অক্টোবরে সহিংসতার পর প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি গত কয়েক দিনে এ শিবিরে আরো অন্তত ৭/৮ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়াও নিবন্ধিত শিবিরের পাশে রয়েছে বিশাল অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আর্ন্তজাতিক কমিউনিটি অব দ্যা রেড ক্রস বা আইসিআরসির বাংলাদেশস্থ হেড অব ডেপুটি উয়াল্টার জেল্টি এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কুতুপালং, বালুখালী শিবির সহ সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয়ের অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার শরনার্থীর অবস্থান দেখেন। নো ম্যান্স ল্যান্ডের জলপাইতলী, তুমব্রু পশ্চিম কুল, তুমব্রু খালের পাড়ে অবস্থান নেয়াদের পর্যবেক্ষন করেন এবং প্রতিনিধি দল বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সাথে কথাও বলেন। কক্সবাজার-৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান এসময় প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সীমান্ত খুলে দেয়ার ব্যাপারে বিজিবি অধিনায়ক এটা সম্পূর্ণ বানুয়াট, ভিত্তিক গুজব। এধরনের কোন নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে নেই। বিজিবি সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। কোন রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে না দিয়ে যেখানে পারছে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। পাহাড়ি সীমান্তে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: