ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শুল্ক কমলেও চড়া আমদানির চালের বাজার

chalডেস্ক নিউজ ::

হিলিতে চালভর্তি ট্রাক দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির ওপর দুই দফায় শুল্কহার কমিয়ে ২৮ শতাংশ থেকে মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। এর ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল আমাদনি বেড়েছে। তবে শুল্ক কমানোর তথ্য জানার পর চালের দাম টন প্রতি ৩০ থেকে ৪০ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের ব্যবসায়ীরা। এ কারণে দেশের বাজারে চালের দাম কমার বদলে উল্টো কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা হারে দাম বেড়েছে। বুধবার (৩৯ আগস্ট) হিলি স্থল বন্দর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

মূলত ভারতের ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই বাংলাদেশের চালের বাজারে আগুন লেগেছে বলে অভিযোগ করেছেন হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ঈদের পরে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাল আমদানিতে ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ থাকাবস্থায় বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। চাল আমদানিতে শুল্কহার কমিয়ে ২ ভাগে নামানোর ফলে এখন বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। ১৭ আগস্ট চাল আমদানির ওপর শুল্কহার ১০ ভাগ থেকে কমিয়ে ২ ভাগ করে দিয়েছে সরকার। এতে করে বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়ে যায়।

চাল খালাস হচ্ছেহিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাকে করে চাল আমদানি হচ্ছে এবং আমদানিকৃত সেসব চাল নিয়মিত খালাস করে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ছয়শ’ ৬৪টি ট্রাকে ৫৯ হাজার ছয়শ’ ৫৯ টন চাল আমদানি হয়েছে।

এখন ভারত থেকে প্রতিটন চাল চারশ’ ৬০ থেকে চারশ’ ৭০ ডলার মূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে দেশের বাজারে চালের দাম কমার বদলে উল্টো কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে বাড়ছে। এমনকি ঈদের পরে প্রতি টন চাল পাঁচশ’ ডলার মূল্যে আমদানি করতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়বে বলে জানান তারা।

তবে দেশের বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভারত থেকে আমদানির পাশাপাশি ভিয়েতনাম ও চায়নাসহ অন্যান্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করার দাবি জানিয়েছেন তারা। তাহলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া চালের রফতানি মূল্য বাড়ানো সুযোগ পাবে না, ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কমবে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

হিলিতে চালভর্তি ট্রাকহিলি স্থলবন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতারা জানান, সরকার চাল আমদানিতে শুল্কের হার ১০ ভাগ থেকে ২ ভাগ করায় আমরা ভেবেছিলাম চালের দাম প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা থেকে তিন টাকা কমবে। কিন্তু চাল কিনতে এসে দেখছি চালের দাম কমার পরিবর্তে কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে বেশি হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চালের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়ছে। তবে দাম বাড়ার এ অজুহাতে আমদানিকারকদের কারসাজিও থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পাইকারি ক্রেতারা।

হিলি বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা অনুপ বসাক জানান, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে ভারত থেকে চাল আমদানি বেশি হওয়ায় দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। তবে চালের দামও কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়েছে। এখন ভারত থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারিতে (ট্রাকসেল) ৪১ টাকা কেজি ও রত্না জাতের চাল ৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ শুল্কহার ১০ ভাগ থাকাকালীন ভারত থেকে আমদানিকৃত স্বর্ণা জাতের চাল বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৩৮ টাকা ও রত্না জাতের চাল বিক্রি হয়েছিল ৪১ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এসব চাল কেজিতে আরও এক থেকে দুই টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কহার আরোপ করা হয়। পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে তা আরও ১৫ শতাংশ বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর মিলে এ শুল্কহার দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। দেশের কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। যার ফলে গত বছর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি একেবারে কমে গিয়েছিল। সেসময় ভারতীয়রা ব্যবসায়ীরা প্রতি মেট্রিক টন চাল তিনশ’ ৯০ ডলার মূল্যে বাংলাদেশে রফতানি করতেন।

এ বছরের ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চাল দেশে আমদানি হতে শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে চালের ওপর থেকে শুল্কহার কমানোর খবরে ভারতীয় রফতানিকারকরা প্রতিটন চালের দাম প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ ডলার করে বাড়িয়ে দেন। চাল আমদানিতে শুল্কহার কমার আগে যে চাল ভারত থেকে তিনশ’ ৯০ থেকে চারশ’ ডলারে ভারত থেকে দেশে আমদানি করা হতো। তখন সেই চাল তারা টন প্রতি চারশ’ ২৫ থেকে চারশ’ ৩০ ডলার দাম নিতে শুরু করেন। এখন সেই চাল প্রতি টন চারশ’ ৬০ থেকে চারশ’ ৭০ ডলার মূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: