ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী নদীর করাল গ্রাসে চকরিয়ার সর্বনাশ

matamনিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::

একসময় বলা হতো পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদী মানুষের জন্য আশীর্বাদ, আসলে ঠিকই ছিল সেই বলা। কিন্তু গত দশ বছর ধরে এই নদী দিন দিন আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর একাধিক ভয়াবহ বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির সঠিক প্রবাহ না হওয়ায় এবং নদীর ভয়াল থাবায় সর্বনাশ ঘটছে কক্সবাজারের চকরিয়ার মানুষের। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদী বিধৌত ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভার মানুষ সর্বস্ব হারানোর তালিকায় বেশি স্থান করে নিচ্ছে। প্রতিবছর বন্যা এর আগের বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একদিনের বৃষ্টিতেই নদী উপচে বন্যার পানি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে, নদী ভাঙনে ভিটেছাড়া হচ্ছে মানুষ, বিলীন হচ্ছে কোটি কোটি টাকার কৃষি ক্ষেত, বছরজুড়ে চেষ্টায় মেরামতকৃত সড়ক মুহুর্তেই ভেঙে খান খান হচ্ছে। গবাদিপশুর খামার তছনছ হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে মানুষ। প্রতিবছরই বন্যার সাথে লড়াই করা মানুষগুলো হার মানছে মাতামুহুরীর এই তান্ডবের কাছে।

মাতামুহুরী নদীর পানি এযাবৎকালের সর্বোচ্চ

মাতামুহুরী নদীর দুটি পয়েন্টে বন্যার পানির উচ্চতা মাপা হয়। একটি বান্দরবানের লামা পয়েন্টে, আরেকটি চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রিজ পয়েন্ট। গত ৪ জুলাই বন্যায় নদীর লামা পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল সাড়ে ১৩ মিটার, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আর চকরিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল সাড়ে সাত মিটার, সেটিও এযাবৎ কালের সর্বোচ্চ। আর বিপদসীমা হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ মিটার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০১২ সালের বন্যা ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড, তখন মাতামুহুরী নদীতে পানি ছিল বিপদসীমার ওপরে প্রায় ৬ দশমিক ৮ মিটার। ১৯৯৮ সালে ছিল ৬ দশমিক ৭ মিটার। সেই দুটি বন্যাই ছিল জুলাই মাসে। কিন্তু ২২ জুন ২০১৫ সালের বন্যায় মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা পয়েন্টে পানি ছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার, এরপর ৭ জুলাই ছিল ৬ দশমিক ৬ মিটার, ২৮ জুলাই ছিল ৭ দশমিক ২ মিটার এবং গত ১ আগস্ট ছিল ৭ দশমিক ৩ মিটার। চারটি বন্যার তিনটিই ছিল ২৭ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে দিনের মধ্যেই বন্যা

মৌসুমের পুরো জুলাই মাসে ৭৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু আটদিনেই বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫৩ মিলিমিটার। এরমধ্যে শুধু ৬ জুলাই বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার! এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালোএকনাগাড়ে ভারী বর্ষণ হলেও কখনো চকরিয়া ডুবে যায় না। উজানে অবস্থিত লামাআলীকদমে বৃষ্টির ওপরই চকরিয়াপেকুয়ায় বন্যার পদধ্বনি ঘটে। আর মৌসুমের শুরুতেই লাগাতার ভারী বর্ষণে দিনের মধ্যেই ডুবে যায় জনপদ।

তামাক চাষ ও পাহাড় উজাড় বন্যার মূল কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক চাষ, পাহাড় উজাড় করে ফেলা ও পাহাড় থেকে নিয়ম না মেনে পাথর উত্তোলন বন্যার মূল কারণ। প্রধানত তামাক পাতা পোড়ানোর চুল্লিতে ব্যবহৃত হচ্ছে গাছ। এছাড়া ন্যাড়া পাহাড় খুঁড়ে গাছের গোড়ালি পর্যন্ত তুলে এনে ব্যবহার করা হচ্ছে তামাক চুল্লিতে। আর বনখেকোদের কবলে পড়ে বেশিরভাগ পাহাড় এখন প্রায় ন্যাড়া পাহাড় পরিণত হয়েছে, সেখানে নেই কোন নতুন করে সবুজাভ। এ কারণে ব্যাপক বৃষ্টিপাত দুরে থাক সামান্য বৃষ্টিতেই এসব পাহাড় ধ্বসে মাটিবালি নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীর তলদেশ দ্রুতই ভরাট হয়ে গেছে। আর সামান্য বৃষ্টিতেই নদী উপচে বন্যার পানি সমতল গিলে খাচ্ছে।

এ বিষয়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, তামাক চাষের ভয়ানক কবল থেকে রক্ষা ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই। তামাক চাষে জমির মালিকরা সাধারণ কৃষি জমির চেয়ে দেড়গুণ বেশি লাগিয়ত পান। কিন্তু বছর শেষে বন্যায় ডুবে এর দশগুণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। সেখানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যয় তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি তামাক চাষপ্রবণ এলাকার মানুষগুলোর গড় আয়ুঁও দিন দিন কমছে।

২০১৫ সালের বন্যায় ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকা

বিগত ২০১৫ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় শুধু চকরিয়ায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপন করেছিল উপজেলা প্রশাসন। ৪০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ চারদফা বন্যায় উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভেসে গিয়েছিল দেশের বড় মৎস্য প্রজেক্টের কয়েকশত কোটি টাকার মাছ। বিধ্বস্ত হয়েছিল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ ও নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবনার সামান্য অংশ বাস্তবায়িত হলেও বাকী প্রস্তাবনা আলোর মুখ দেখেছি। তার ওপর চলতি ২০১৭ সালের প্রথমদফায় ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু চুরমার করে দিয়ে গেছে। বর্তমানেও দ্বিতীয়দফা বন্যার পদধ্বনি দেখা দিচ্ছে চকরিয়ায়।

মাতামুহুরী নদী শাসনই হয়নি একবারও

পার্বত্য বান্দরবানের থানচি সীমান্ত এলাকা থেকে মাতামুহুরী নদী আলীকদম, লামা, চকরিয়ার কাকারাকৈয়ারবিলবেতুয়াবাজার হয়ে পেকুয়ার উজানটিয়া দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী থেকে কখনো নদী শাসন বা খনন হয়নি। ২০১৫ সালের ভয়াবহ বন্যায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের ১৩ দফা সুপারিশের মধ্যে প্রধান ছিল বান্দরবানের লামার ইয়াংছা থেকে চকরিয়া উপজেলার বাঘগুজারা রাবার ড্যাম পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এবং বেতুয়া বাজার থেকে পালাকাটা রাবার ড্যাম পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারসহ মোট ৪০ কিলোমিটার এলাকায় মাতামুহুরী নদীর খনন এবং উভয় তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ নদী শাসনের। ৩৯টি পয়েন্টে নদী ভাঙন ও বেড়িবাঁধ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করে দেওয়া ছিল অন্যতম সুপারিশ। বলা চলে নদীতে ড্রেজিং করার আগে নদীর জরিপ করতে হয়, কিন্তু এখনো কোন জরিপই হয়নি।

এর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘২০১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার পর উপজেলা প্রশাসনের ১৩ দফা প্রস্তাবনার অন্যতম ছিল মাতামুহুরী নদীর শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু প্রথম প্রস্তাবনাটি আলোর মুখ না দেখলেও চলতি বর্ষার পর একটি দীর্ঘমেয়াদী পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় নদীর সুরাজপুরমানিকপুর থেকে বাঘগুজারা রাবার ড্যাম পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীর তলদেশ খনন, সেইসাথে দুই তীর টেকসইভাবে যাতে সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। এই কাজের বিপরীতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এই কাজের প্রাথমিক সমীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে চকরিয়াবাসীর আর তেমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে না।

প্রশ্নোত্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ‘গত দশ বছরে নদীর তীর রক্ষা বা জনগণের উপকারে আসে এমন প্রকল্পে কি পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট হিসেব এই মুহূর্তে দিতে পারব না। তবে বলতে পারি, চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর জন্য তেমন কোন বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। যা খরচ হয়েছে জরুরী কাজের বিপরীতে। সেই হিসেবে অর্ধশত কোটি টাকাও হবে না।’

নদীর প্রস্ত বেড়েছে, গভীরতা কমেছে

১৯৮০৮৫ সালে মাতামুহুরী নদীর গভীরতা ছিল ৩০৪০ ফুট। প্রস্ত ছিল ৫০০৭০০ ফুট। কিন্তু নদীর সাথে সংযোগকারী ঝিরি ও খালগুলি থেকে নির্বিচারে পাথর আহরণের কারণে একদিকে যেমন পানির উৎস হারিয়ে গেছে, অপরদিকে ঝিরির পলিতে ভরাট হচ্ছে নদী। বিগত বছরে ভরাট হয়ে নদীর গভীরতা ১৫২০ ফুটে চলে এসেছে। দু’পাড় ভেঙে গিয়ে নদীর প্রস্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০০১২০০ ফুটে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি ফুলেফেঁপে উঠে তলিয়ে যায় তীরবর্তী লামা পৌর শহর ও আলীকদম উপজেলা সদর এলাকা। এই নদীতে বর্তমানে নৌযান চলাচল করছে মাত্র ৩৪ ফুট পানির মধ্যে দিয়ে। কোন কোন অংশে আরও কম।

উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব

মাতামুহুরী নদী শাসন, খনন, তীর সংরক্ষণ বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংস্থাগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কখনো বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হয় কিছু উন্নয়ন কাজ, আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজস্ব অর্থায়নে এসব বন্যা প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ব্যয় করছে বিপুল অর্থ। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা নামে প্রতিমাসে বৈঠক হলেও এর কোন সুফলও মিলে না। বিগত সময়ে এখানকার একাধিক ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম। তাঁর মুখ থেকে শুনি কেন এসব পরিকল্পনা বান্তবায়ন করা যায়নি।

এ ব্যাপারে ইউএনও সাহেদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছেনা এবং দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই বলে যে বিষয়টি এসেছে তার কোন যথার্থতাও নেই। তবে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে অনেক ধরণের স্টাডি হয়। এ কারণে হয়তো সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা যায় না। তবে ইতিমধ্যে যেসব ছোটবড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা অনেকটা টেকসই এবং জনগণের উপকারেও এসেছে। ভবিষ্যতে যাতে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে বড় প্রকল্প বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীর ড্রেজিং প্রক্রিয়া এবং নদীর দুই তীর সংরক্ষণ করা হয় সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।’

বর্ষা আসলেই ঠেকানোর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড

এরমধ্যে বালির বস্তা দিয়ে বেড়িবাঁধ এবং বন্যা ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কাজই হচ্ছে বর্ষা মৌসুমের আগেই। বছরজুড়ে তারা চুপ থাকার পর বর্ষা শুরুর আগেই টনক নড়ে। ফলে এসব অর্থ সরাসরি নদীতে চলে যায়। শুষ্ক মৌসুমে তাদের কোন কাজই বাস্তবায়ন হয় না। পুরো মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে সিসি ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ করা হলেও ভাঙন রোধ করা হতো। কিন্তু মাত্র কয়েক কিলোমিটারে সিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া সাব ডিভিশনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আসলে বর্ষাকালেই তো আপদবিপদ আসে। সেহেতু বর্ষা মৌসুমেই আপদকালীন কাজই করা হয়। তবে ভবিষ্যতে যাতে এই আপদকালীন কাজ করতে না হয় সেজন্য মানিকপুর থেকে বেতুয়া বাজার পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটারের মধ্যে নদী খনন, তীর সংর ণের একটি ডিপিপি (ডেভেলেপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজল) তৈরি এবং কমিটিও করা হয়েছে। অচিরেই এই কমিটি কাজ শুরু করে দেবে।’

এমপি’র বরাদ্দ পরিকল্পনাহীন

স্থানীয় সংসদ সদস্য যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ দেন সেগুলো নেওয়া হয় কোন পরিকল্পনা ছাড়াই। অথচ তাঁর হাতেই থাকে সরকারের সবচে বড় বরাদ্দ। কোন জবাবদিহিতা না থাকায় সরকার বরাদ্দ দেয় ঠিকই কিন্তু কোন কাজে আসে না। এমনই প্রতিক্রিয়া জানালেন মাতামুহুরী নদীতীরের মানুষগুলো।

এ বিষয়ে চকরিয়াপেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘একটি প্রকল্পও পরিকল্পনা ছাড়া নেওয়া হয়নি। তাছাড়া যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে তা জনগণের স্বার্থেই করা হয়েছে। এখানে যদি কেউ বলে যে এমন উদ্ভট কথা তাহলে বলার কিছুই নেই। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য স্পষ্ট কোথায় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, সেখানে একটাকাও দুর্নীতি হয়েছে কীনা তা তদন্ত করতে পারবে যে কেউ।’

সংসদ সদস্য ইলিয়াছ চকরিয়া নিউজকে আরো বলেন, ‘এমপি হিসেবে একমাত্র বড় প্রকল্প ছাড় করেছি এলজিইডির। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে খোদ এলজিইডিই। এখানে কোন সুযোগ নেই একটাকাও নয়ছয় করার। এর পরেও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি কোনরূপ অভিযোগ আসে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

পানিসম্পদ মন্ত্রীর আশ্বাস ঘোষনাতেই সীমাবদ্ধ

২৫ আগষ্ট ২০১৫ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, ‘মাতামুহুরী নদী আর অভিশাপ হয়ে থাকবে না । খনন ও তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চকরিয়াপেকুয়ার মানুষকে বন্যামুক্ত করা হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে শীতের শুরুতে আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই প্রাথমিকভাবে ৭০ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে ব্যয় করা হবে ৪’শ কোটি টাকা। কিন্তু মন্ত্রীর সেই আশ্বাস আশ্বাসই থেকে গেছে। কাজের কাজ কোন কিছুই চোখে দেখেনি চকরিয়াপেকুয়াবাসী।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দুই মেয়াদের ক্ষমতায় থাকলেও কক্সবাজার১ আসনে আওয়ামীলীগের কোন এমপি নেই। প্রথমমেয়াদে বিএনপি এবং পরেরবার জাতীয় পার্টির থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় চকরিয়া ও পেকুয়ার উল্লেখযোগ্য তেমন উন্নয়ন হয়নি। তাছাড়া প্রতিবার বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়াকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বন্যা। সেই তুলনায় তেমন ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছেন না মানুষ। আবার বন্যায় তাণ্ডব থেকে রক্ষায় মাতামুহুরী নদীকে যথাযথভাবে শাসন করতে হবে। এজন্য সরকারী দল তথা আওয়ামীলীগের এমপির দরকার। তা না হলে বরাবরের মতোই এখানকার মানুষ উন্নয়ন বন্যার ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাবে না।

পাঠকের মতামত: