ঢাকা,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ডুলাহাজারায় বনভুমি দখল বাণিজ্যঃ বনের ভিতর মিনি শহর

DSC00904 copyমনির আহমদ ॥ কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মালুমঘাট মেমোরিয়াল খীষ্টান হাসপাতালের চতুপার্শে পাকা,আধা পাকা ও কাঁচা ঘর নির্মান অব্যাহত রয়েছে। এসব বাড়ী ওয়ালার কাছে শতাধীক একর বনভূমির দখল বিক্রি হয়েছে গত এক বছরে।অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, বনবিট কর্মকর্তা জাকের হোছন ও হেড়ম্যান বদি আলম কতিপয় সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে একর প্রতি ২লক্ষ টাকা থেকে কোটি টাকা মুল্যে দখল বিক্রি করছে। ওই সব বনভূমিতে ক্রেতারা রাতারাতি গড়ে তুলছে বহুতল বসত বাড়ী ও আবাসিক বাণিজ্যিক ভবন। মাদার ট্রী গর্জন গাছের ফাঁকে ফাঁকে দালান বাড়ী তৈরী করার পর বাড়ীর ঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত কেটে বিক্রি করছে মাদার ট্রী গর্জন ও সেগুন গাছ। বনভূমি থেকে যাতে উচ্ছেদ করা না যায় সে লক্ষ্যে নানা রকম কৌশল ও অবলম্বন করছেন তারা। এভাবে হাছিনা পাড়া নাম দিয়ে বনের ভিতর গড়ে তুলেছে মিনি শহর। একটি সুত্র জানায়, হাছিনা পাড়া নাম করনের পরামর্শটি ছিল বনরেঞ্জ কর্মকর্তার। পাড়ার স্থায়ীত্বের জন্য বন খেকো ওই রেঞ্জ কর্মকর্তা ওখানে স্কুল,মসজিদ ও মাদ্রাসার পাকা স্থাপনা তৈরী করেছেন।
মহাসড়কের পার্শ্বে বনভূমি দখলে নিয়ে ইমারত তৈরী করলে দিনে দুপুরে অথচ নিকটস্থ দ্বায়ীত্ব রত বনরক্ষকরা দেখেও যেন না দেখার ভান করে চলেছেন। বন কর্তৃপক্ষকে আবার কেউ দেখিয়ে দিলে অবাক কন্ঠে বলেন,কোথায় ? আপনি কিভাবে দেখলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি আশ্চর্য বোধক প্রশ্ন।এ দৃশ্য শুধু মালুমঘাটে নয়, ইসলাম নগরে নয়, বার আউলিয়া নগর, কাকারা, রিংভং বনবিটের সামনে, ছাইরাখালী, মালুমঘাট ষ্টেশনের চতুর্পাশের হাছিনা পাড়া, এমনকি বনরেঞ্জ কর্মকর্তার ৩০০গজের ভিতর ও ডুলহাজারা সহ পুরো বনভুমি জুড়ে চলছে। গত ৬মাসে ২হাজার একরের অধিক জমি বেদখল করে নিয়ে তৈরী হয়েছে কয়েকশত নতুন বসতঘর। ৬মাসে নতুন পাকা-আধাপাকা সহ অবৈধ স্থাপনা হয়েছে , নির্মানাধীন রয়েছে ৫শতের উপরে। আবার নির্মান করা ঘর বিকিকিনি চলছে ডাবল দামে। বনভুমির রক্ষায় নিয়োজিত বনকর্মি ও ভিলেজাররা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ কান্ডের সাথে জড়িত। যার কারনে দিনে দুপুরে জমি দখল বিকিকিনি এখানে ওপেন সিক্রেট। আগেকার দিনে পলিথিনের বেড়া দিয়ে কাজ করলে ও বর্তমানে বনবিভাগ ম্যানেজ থাকায় বাধা দেয়ার কেউ নেই।
এ ছাড়া ও চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজারে সরকারি দলের কতিপয় কয়েকটি সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে বনবিভাগের রির্জাভ বনভুমি জবর দখল করেছে। কয়েকদিন ধরে দখলে নেয়া জায়গায় পলিথিনের ঘেরা দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন অবৈধ পাকা স্থাপনা। উপজেলার ডুলাহাজারা বনবিট অফিসের একেবারে কাছাকাছি এলাকায় এভাবে বনভুমি দখল চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও বনকর্মীরা রয়েছেন কুম্ভকর্ণের ভুমিকায়। অভিযুক্তরা অনেকটা বিনা বাঁধায় দখল করে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা দখল চেষ্টা নিবিঘœ করতে শেখ রাসেল ক্রীড়া সংসদের নামে একটি সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এরপর সুযোগ বুঝে চা বাগান সড়কের পাশে বাজারের পুর্ব অংশে বনবিভাগের জায়গা দখল করে আসছে। ইতোমধ্যে চক্রটি বনবিভাগের বিশাল আয়তনের আগর বাগান কেটে ধ্বংস করে দেয়ার পর সেখানে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণ করেছে। বর্তমানে গত কয়েকদিন ধরে অভিযুক্তরা বাজারের ভেতরে নতুন আরো দুটি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাছ শুরু করেছে। ফাসিয়াঁখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বনভুমি দখলের ঘটনাটি সত্য বলে স্বীকার করে বলেন, সরকারী দলের লোকজন তাদের সেল্টার দিচ্ছে তাই রক্ষা করা যাচ্ছে না।
ইসলাম নগরে বনভূমি দখলকরে বাড়ী নির্মানকারী এক ব্যক্তি জানান, জমিটি দখলে নিতে রেঞ্জার একাই নিয়েছেন নগদ ৫০হাজার টাকা। পুর্বপার্শ্বের আরেকজন ১৫হাজার টাকা দিয়ে ও শর্তমত টাকা না দেয়ায় নির্মানাধীন বাড়ী থেকে ৩ শ্রমিককে পুলিশের মাধ্যমে ধরে এনে টাকা নিয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছেন। এখানে রেঞ্জকর্মকর্তা যেন বন ভুমির জমিদার আর স্ব-স্ব বনবিটের কর্মকর্তা ও ভিলেজাররা যেন জমি বিক্রেতা দালাল। বনভুমি মেপে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব করে বিক্রির মুল টাকা পান রেঞ্জার। আর সিনিয়র দালালের দামে দালালী পান সংশ্লিষ্ট বনবিটের কর্মকর্তা – ভিলেজাররা। বনভুমি বিকিকিনির বিষয়টি একবারে ওপেন সিক্রেট।বনের মালিক বনকর্তৃপক্ষ যেখানে রাজি সেখানে প্রতিবন্ধকতা থাকার কোন কারন নাই। বনবিভাগের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফাঁসিয়াখালী বনভুমি বিক্রি ও মাদার ট্রি বিক্রি করে গত এক বছরে অন্তত এক কোটি টাকা কামিয়েছেন।তার কাছে আইন এখন হাতের মোয়া। ওই রেঞ্জার আব্দুল মতিন পারেন না এমন কোন কাজ নাই। তিনি অবৈধ টাকার বিনিময়ে উর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে চলেন, আবার সন্ত্রাসী রাজনীতিক ও পোষেন। তাই তার কাজে বাধা দিলে তার নিয়েজিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধর করে উল্টো বন আইনে মামলায় দিয়ে চালান করেন। এলাকার সচেতন মহল জানান, চকরিয়ার বনভূমি দ্রুত শেষ করতে রেঞ্জার একজনই যথেষ্ট। তিনি রক্ষক নয় তিনিই ভক্ষক। সুতরাং বনভুমি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ জরুরী। অন্যথায় আগামী ২ বছর পর বনবিভাগের দখলে থাকবে না বনভূমি।

পাঠকের মতামত: