খালেদ হোসেন টাপু, রামু ::
কক্সবাজারের কৃতি সন্তান সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আগাম রবিবার। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রামু চৌমুহনী বাস স্ট্যান্ড চত্ত্বরে রামু ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্মরন সভা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, রামুসহ কক্সবাজারের আপামর জনতাকে শোক সাগরে ভাসিয়ে আজকের এই দিনে চির বিদায় নিয়েছিলেন সফল রাজনীতিক আলহাজ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। বর্ণিল ও কর্মময় জীবনের অধিকারী এ কীর্তিমান মানুষকে নিঃসন্দেহে মানুষ আজীবন স্মরণ করে যাবে।
জীবনী: কক্সবাজার জেলার সফল এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কীর্তিমান পুরুষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মালেকুজ্জামান সিকদার। ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ১৯৫৫ সালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম নাইট কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে এমএ পাশ করেন। ১৯৬১-১৯৬২ সালে ইকবাল হল ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৬২-১৯৬৩ সালে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারম ও ব্যাটমিন্টন খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে লাহোরে ছাত্র নেতৃত্ব প্রশিক্ষন শিবিরে যোগ দেন। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি, ১৯৬৯-৭০ সালে চট্টগ্রাম জেলা লবণ উৎপাদক সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার মহকুমা রেফারী ও আম্পায়ার এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি। তিনি সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও ভাল আবৃতিকারক ছিলেন। তিনি রামু দূর্বার শিল্পী গোষ্ঠিসহ অনেকগুলো সামজিক, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৭০-১৯৭৩ সালে রামু-উখিয়া-টেকনাফ নির্বাচনী এলাকা হতে প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ বন মন্ত্রনালয় ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ৭৯ সালে রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে নির্বাচন করেন। ১৯৮৮. ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের ভয়াবহ বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান-পূর্নবাসন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত-এর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় জর্দানের বাদশা হুসাইনের দাফন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের হাজ্বীদের প্রতিনিধি হয়ে সৌদিয়ায় গমন করেন।
কক্সবাজার জেলার শিক্ষা সম্প্রসারনে তার অগ্রনী ভূমিকা ছিল। তিনি অসংখ্য কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৬২ সালে তাঁর ও তার ভাইয়ের জমিতে কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৬ সালে রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ১৯৮২ সালে সৈকত বালিকা ,১৯৮৬সালে কক্সবাজার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা ও ১০ বছর অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন, ১৯৯০ সালে রামু কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা ও ৮০ শতক জমি দান করেন।
এছাড়া তিনি রামু উখিয়া ও টেকনাফে অসংখ্য স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। কক্সবাজার তথা বাংলাদেশে তিনি অন্যতম শিক্ষাবিদ হিসাবে সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র।
মহিয়সী এ ব্যক্তিত্বের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। বরেণ্য এ ব্যক্তির মৃত্যু হলেও কক্সবাজার তথা সমগ্র দেশবাসীর কাছে তিনি আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। বর্তমানে তাঁর সন্তান রামু কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বাবার আদর্শে উজ্জীবিত একজন যোগ্য উত্তরসুরী সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে কাল রবিবার আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রামু চৌমুহনী বাস স্ট্যান্ড চত্বরে রামু ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী স্মরন সভাসহ খতমে কোরআন, মিলাদ, আলোচনা সভা, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এতে তাঁর সকল শুভানুধ্যায়ীকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন রামু ওসমান সরওয়ার আলম স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক জেলা পরিষদ সদস্য শামসুল আলম চেয়ারম্যান ও চাকমারকুল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার।
পাঠকের মতামত: