ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক :;bgb

মিয়ানমার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে মিয়ানমার। এরপর নতুন করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে এমন খবরের প্রেক্ষিতে বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের আশংকায় মংডু, বুচিদং ও রাচিডং এলাকা থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা আবারো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে। গত ৪ দিনে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় একশ’র মতো রোহিঙ্গা পরিবার অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং-এ আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসান আরিফুল ইসলাম ও কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তে সেখানকার শান্তি শৃঙ্খলা বহাল রাখতে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকার বিষয়টি অনুধাবন করে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির সতর্কতামূলক নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মতো যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সীমান্তে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ৯ই অক্টোবরের পর রোহিঙ্গাদের উপর যে ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছিল সে ধরনের ঘটনা এখনো মিয়ানমার সেনারা ঘটায়নি। ফলে আতংকিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। কক্সবাজার বিজিবি অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান বলেন, গতকাল বুধবারও ঘুমধুম ও তুমর্বু সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি যৌথভাবে সীমান্তে টহল দিয়েছে। কোথাও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা চোখে পড়েনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা বস্তিতে দেখা গেছে, গত ৩ দিনে প্রায় একশ পরিবারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তাদের নিকটাত্মীয়দের নিকট আশ্রয় নিয়েছে। মংডুর কিয়াংমং এলাকা থেকে মঙ্গলবার আসা কয়েক পরিবারের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী জহির আলম জানায়, তাদের গ্রামে গত শুক্রবার থেকে অতিরিক্ত মোতায়েন করা সেনারা গ্রামে ঘরবাড়ি তল্লাশির নামে তছনছ করছে ও রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুদের মারধর করছে। আতঙ্কে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক পরিবার পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে রোহিঙ্গারা জানান। বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা লালু মাঝি বলেন, গত ৩ দিনে বালুখালীতে প্রায় ৭০ পরিবারের মতো রোহিঙ্গা নতুনভাবে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তৎমধ্যে মংডুর কিয়াংমং থেকে প্রায় ৩২ পরিবার, বুছিদং এর তামি এলাকা থেকে ৩৫ পরিবার ও লাছিদং এর পাথরীকিলা এলাকা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ৩ পরিবার পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। লালু মাঝি জানান, এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে অনুপ্রবেশ করছে। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান, গতকাল বুধবার পর্যন্ত কুতুপালং-এ মংডু ও বুছিদং এলাকা থেকে প্রায় ৩০ পরিবারের মতো রোহিঙ্গা নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্নভাবে আরো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা করেছে রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য বখতেয়ার আহমদ।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান বলেন, কক্সবাজার বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন রোহিঙ্গা গত ৫ দিনে অনুপ্রবেশ করেনি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনাকাঙ্খিতভাবে কয়েকজন রোহিঙ্গা গোপনে চুরি করে সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করা হচ্ছে বলে টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক জানান।

পাঠকের মতামত: