ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিজিডির চাল নিয়ে চালবাজি লামায়

বান্দরবান প্রতিনিধি :::Lama Photo 10.08.17

বান্দরবানের লামা উপজেলায় অবৈধ মজুদের অভিযোগে ১৮৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো ছেড়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিন ওয়ান নু বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চালগুলো তাদের রেশন কর্মসূচির চাল বলে দাবি করায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। ’

জনগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লামা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়দ ইকবাল ৯ আগস্ট বিকেলে লামা উপজেলা সদরের রণি স্টোর থেকে বস্তা পরিবর্তন করার সময় ৩০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৮৪ বস্তা চাল জব্দ করে দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। জব্দকৃত চালের মোট পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫২০ কেজি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জব্দকৃত প্রতিটি বস্তার উপর ‘খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল’ এবং ‘মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভিজিডি ২০১৭ কর্মসূচির চাল’ মুদ্রিত ছিল। রণি স্টোরের স্বত্বাধিকারী রণি কর্মকার দাবি করেন, খুচরা মূল্যে বিক্রির জন্যে তিনি আলীকদমের আবদুর রহিম ডিলারের কাছ থেকে এসব চাল কিনেছেন। ৮ আগস্ট বিকেলে চাল বিক্রেতা আবদুর রহিম নিজ দায়িত্বে তা লামা বাজারে পৌঁছে দিয়েছেন।

এদিকে লামায় আটক হওয়া চালকে আলীকদম উপজেলার দুঃস্থ মাতাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল দাবি করে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম অভিযোগ করেন, আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা ভিজিডি তালিকাভুক্ত দুঃস্থ মাতাদের মধ্যে বিতরণ না করে চালগুলো কালো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনিক তদন্ত দাবি করেন।

অপরদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।

আলীকদম উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সব কজন চেয়ারম্যান জব্দকৃত চালকে ‘সেনাবাহিনীর রেশনের চাল’ দাবি করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, এডিপির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আবুল কালাম প্রতিশোধ হিসেবে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো’র ষড়যন্ত্র করছেন।

১০ আগস্ট বিকেলে আলীকদম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান, নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মারমা ও কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেছেন, গত ৩০ জুনের পর ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে নতুন করে ভিজিডি কর্মসূচির আর কোনো ‘ডিও’ ছাড়া হয়নি। সর্বশেষ ৩০ জুনের মধ্যে ছাড় করার বাধ্যবাধকতায় ভিজিডি কর্মসুচি নামাঙ্কিত বস্তার অভাব থাকায় ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির’ বস্তায় ভিজিডির চাল সরবরাহ করতে হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘৯ আগস্ট সরকারি গুদাম থেকে ভিজিডি বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কোনো চাল ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ নেই। ’ তবে আলীকদম খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মং হ্লা প্রু মারমা জব্দকৃত চাল আলীকদম খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, সেনাবাহিনীর রেশনের ‘ডিও’ (সরবরাহ আদেশ) ছাড় করার সময় গুদাম কর্মচারীরা ভুলক্রমে অন্য প্রকল্পের নামাঙ্কিত বস্তা ভর্তি চাল সরবরাহ করেছে।

তবে খাদ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ভিজিডির চাল ছাড়া সরকারি খাদ্য গুদামের সব চালই ৫০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তায় রাখা হয়। সুতরাং ডিওর বিপরীতে সরবরাহ করার সময় কোনোভাবেই ভুলক্রমে ৩০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তা ভতি চাল দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এতে করে ‘মেট্রিক টন’ এর সাথে হিসাব মেলানো সম্ভব হবে না।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভিজিডি ও বিশেষ ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ৫০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তা থেকে ৩০ কেজি দিতে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার কারণেই সরকার বাড়তি খরচ করে ৩০ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তায় চাল বোঝাই করে ‘ইনটেক্ট’ অবস্থায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের (এলএসডি) খাদ্যগুদামে পাঠায়। এসব বস্তার উপর অমোছনীয় উজ্জ্বল রঙে ও বড় বড় হরফে প্রকল্পের নাম মুদ্রিত থাকে। নির্ধারিত প্রকল্প ছাড়া অন্য কোনো প্রকল্পের বিপরীতে এসব চাল সরবরাহ করতে গেলে হিসাব গড়মিল ও বিধি বহির্ভূত হবে। কাজেই কর্মচারীদের ভুলের কারণে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল সরবরাহ দেওয়ার যুক্তি অবান্তর। এছাড়া জব্দকৃত চালের প্রতিটি বস্তার উপর ‘খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল’ এবং ‘মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভিজিডি ২০১৭ কর্মসূচির চাল’ মুদ্রিত থাকা সত্ত্বেও চালগুলো ছেড়ে দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন লামা ও আলীকদম উপজেলার সাধারণ মানুষ।

 

পাঠকের মতামত: